ইংল্যান্ড দলে প্রবাসী বাংলাদেশি!
মোহাম্মদ তাহের কবির
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২২ | ০৫:০০ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২২ | ০৫:০৪
পাঁচ বছর বয়সে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পরিবারের সঙ্গে সিলেটের বিয়ানী বাজারে গেলেও তখন অনেক কিছুই বুঝতেন না। বাংলাদেশের খেলাধুলা সর্ম্পকেও ধারনা ছিল না মোহাম্মদ তাহের কবিরের। বাবা জাহাঙ্গীর কবির এবং মা সালেহা খানের কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনেছিলেন তিনি। কিন্তু ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা কবিরের কাছে মায়ের মুখের গল্পগুলো ছিল গল্পের মতোই। কারণ সবকিছু বুঝার পর কখনোই যে বাংলাদেশে আসা হয়নি তার।
বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির মাধ্যমে ১৭ বছর পর মা-বাবার দেশে তাহের কবির। ইংল্যান্ড কাবাডি দলের জার্সি গাঁয়ে বাংলাদেশি প্রবাসী তাহের ইতোমধ্যে এই টুর্নামেন্টে দুটি ম্যাচও খেলেছেন। জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশি। তাই তো শনিবার শহীদ নূও হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে এই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সঙ্গে পার্টটাইম কাবাডি খেলা তাহের ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে কাবাডি খেলার স্বপ্নটা এখনেই দেখছেন না। কারণ তুহিন তরফদারের মতো ইংল্যান্ডের কাবাডি খেলোয়াড়রা যে অপেশাদার। ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলব কিনা বলা কঠিন। আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে গতকাল (শনিবার) খেলেছি। ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা বিস্তর। অবাক করার মতো। আমরা যে কত পিছিয়ে সেটা এই ম্যাচ খেলে বুঝেছি। এই জন্য দলে ঢোকা কঠিন হবে আমার জন্য। তারা প্রতিদিন খেলে। আমরা পার্ট টাইম খেলি। এখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত আছি । বাংলাদেশে যারা খেলে,তারা বেশিরভাগেই পেশাদার। তবে এখনো আমি অপেশাদার হিসেবে খেলি,আর আমার পড়াশুনা আছে’-বলেন তাহের।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বেশ কয়েকজন প্রবাসী অ্যাথলেট রয়েছেন। আমেরিকান প্রবাসী জিমন্যাস্টস সাইক সিজার তো ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে খেলেছিলেন। ফুটবলে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া তো সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তার পর ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজীও জড়িয়েছেন লাল সবুজের জার্সি। লন্ডন প্রবাসী নারী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ এবং অ্যাথলেটিক্সে ইমরানুর রহমানও বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন।
কাবাডিতে তাহের কবির বাংলাদেশের হয়ে খেললে প্রবাসী হিসেবে যুক্ত হবে নতুন নাম। কিন্তু ২২ বছর বয়সী তাহেরের জন্য বাংলাদেশের হয়ে খেলার পথটা অনেক কঠিন। বর্তমানে দন্ত চিকিৎসক নিয়ে পড়াশুনা করা তাহের পাশপাশি কাবাডি খেলছেন। ১৪ বছর বয়সে খেলা শুরু করা তাহের ঠিকমতো কাবাডির অনুশীলন করতে পারছেন না। ফুটবলের দেশ ইংল্যান্ড এখনো কাবাডিতে পেশাদার হয়ে ওঠতে পারেনি তা স্পষ্ট তাহেরের কন্ঠে, ‘ইংল্যান্ডে কাবাডি প্রসারের জন্য আমাদেরও চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা প্রতিটি টুর্নামেন্টে উন্নতির চেষ্টা করছি।’
লন্ডনের কিংস কলেজের কাবাডি টিমের হয়ে খেলা শুরু করেন তাহের। বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলার কারণে ট্রায়ালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কাপে ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পান তিনি। কাবাডি যে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা তাও জানেন তাহের। ইংল্যান্ডে বাবার ট্রাভেল এজেন্সি আছে। মা পেশায় দর্জি। সতের বছর পর বাংলাদেশে আসলেও সিলেটে যাবেন কিনা তা নিয়ে দোটানায় তাহের, ‘অনেক দিন পর এবার এলাম। সিলেটে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। এখান থেকে ৫-৬ ঘন্টা দূরত্ব। খুব বেশি দূরে না। এখন বায়োবাবলে থাকায় যেতে পারছি না। কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’
বাংলাদেশে আগে আসার স্মৃতি খুব একটা মনে না থাকলেও যানজটের কথা ভুলেননি তাহের, ‘এখানকার রাস্তাগুলো চিৎকার চেচামেচি ও যানজটে ভরা। ফ্ল্যাশব্যাকের কথা বলতে গেলে এটাই মনে আসে। এটা আমার হোম কান্ট্রি। এখানে আসতে পেরে ভালোলাগছে।’
বাংলদেশের বিপক্ষে খেলাটা সেরা অনুভতি বলে মনে করেন তিনি। তুহিন তরফদার হলেন তার প্রিয় খেলোয়াড়। শনিবার তাকে ট্যাকেলও করেন, কিন্তু আটকাতে পারেননি বলে হতাশ তাহের। ভবিষ্যতে আবারও বাংলাদেশে আসতে চান তিনি।