ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ভুলগুলো যেন ভুলে না যান তারা

ভুলগুলো যেন ভুলে না যান তারা

সেকান্দর আলী

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ | ০০:২৬

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ শেষে অনেক উপলব্ধিই হয়েছে বাংলাদেশ দলের। ভালো স্পিনের বিপক্ষে খেলতে না পারা, কোয়ালিটি পেস বোলিং খেলায় স্বচ্ছন্দের অভাব, এক ইনিংস ভালো করলে পরের ইনিংসে মনোযোগ না থাকায় ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়তে হয়েছে। এই উপলব্ধিগুলো দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের। দেশে ও বিদেশে খেলার পার্থক্যটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন তিনি। 

প্রশ্ন হলো, এ উপলব্ধি থেকে ক্রিকেটাররা কি কোনো শিক্ষা নেবেন, নাকি মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে ভালো ক্রিকেট খেলে ভুলে যান সবই। ইতিহাসের শিক্ষাই যেখানে কেউ নেয় না, সেখানে ক্রিকেট তো একটি খেলা মাত্র। শিক্ষা নেওয়ার চেয়ে ভুলগুলো যেতে পারলেই স্বস্তিতে থাকতে পারেন ক্রিকেটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকায় করা ভুলগুলো মুমিনুল হকরা হয়তো চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন পরের কোনো সাফল্য দিয়ে। যেমন পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশের ঘটনা চাপা পড়ে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয়ে।

কোথায় ভুল হয়, কেন হয় তা ভালো জানেন ক্রিকেটাররাই। ভুল শোধরানোর দায়িত্বও বর্তায় তাদের ওপর। বিসিবি কেবল কোচিং স্টাফ দিয়ে এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বোর্ড সেটা করছেও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির দিন থেকে। 

জাতীয় দলে এ মুহূর্তে পাঁচজন বিদেশি কোচ রয়েছে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স, পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ এবং ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট কাজ করছেন। ট্রেনার নিকোলাস লি তো লম্বা সময় ধরে বিসিবিতে। এই কোচিং স্টাফরা দিনের পর দিন ক্রিকেটারদের বেসিক নিয়েও কাজ করেন। খেলোয়াড়দের মানসিকতা পরিবর্তনে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকে। তারা জিনিসগুলো মনোযোগ দিয়ে শেখেন এবং ভুলেও যান। সেদিক থেকে বলা যায়, জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম ভুলে যাওয়া 'ভূত'-এর বসতবাড়ি, যারা এক কান দিয়ে শোনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেন কোচদের তত্ত্ব কথা। তবে কি ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি বাঙালির রক্তে মেশা? হয়তো হবে। তা না হলে অনুশীলনের পাঠশালায় হাতে ধরে শেখানোর পরও কেন একই ভুল বার বার হবে।

মাহমুদুল হাসান জয় ডারবানে সেঞ্চুরি ইনিংস খেলে প্রশংসিত হলেন। তিনিই আবার পোর্ট এলিজাবেথে দুই ইনিংসে আউট হলেন শূন্য রানে। একই ভুল দু'বার করলেন টাইগার এ ওপেনার। অথচ প্রথম ইনিংসে আউটের পর সতর্ক হতে পারতেন কোচিং স্টাফের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে। ভিডিও অ্যানালিস্ট এবং কোচের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে নতুন পরিকল্পনা সেট করতে পারতেন তিনি। 

অধিনায়ক মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল একই ভুলে করছেন ইনিংসের পর ইনিংসে। বার বার আউট হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই তারা জেনেছেন আউট হওয়ার কারণ। শুধু কোনো এক অজানা কারণে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না তারা। সেটা হতে পারে ব্যর্থতাকে আড়াল করার মানসিকতায়। তাই কেউ খারাপ খেললেও পূর্বের ভালো পারফরম্যান্সকে সামনে নিয়ে আসেন ঢাল হিসেবে। মুমিনুল তাই বলেন, 'রিভার্স সুইপ ক্রিকেটেরই অংশ। মুশফিক ভাই রিভার্স সুইপ খেলে অনেক রান করেছেন। তার রিভার্স সুইপ খেলাকে আমি সাপোর্ট করি।' 

সিনিয়রকে সাপোর্ট করতেই পারেন অধিনায়ক। সুইপ শট খেলার প্রতিযোগিতাও হতে পারে দলের ভেতরে। কিন্তু কখন কোন শট খেলা উচিত এবং অনুচিত নিয়ে কেউ বলেন না। তবে কি প্রশংসা আর 'ব্যাক' করার সংস্কৃতি ক্রিকেটারদের অন্ধ করে রেখেছে? এ কারণেই কি মিডিয়া প্রশ্ন করলে বা সমালোচনা লিখলে সিনিয়র ক্রিকেটাররা একজন অন্যজনের মাথায় ছাতা ধরে বলেন, 'সে এত বছর দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখছে। সেটাও মনে রাখতে হবে।' এই ক্রিকেটারদের চান্দিকা হাথুরুসিংহের মতো হয়তো কেউ বলে দেন না, জাতীয় দলে টিকে থাকতে অতীত মূল্যহীন। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও আসন্ন টেস্ট সিরিজে সাফল্য পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় করা ভুলগুলো যেন ভুলে না যান তারা।

আরও পড়ুন

×