রুশো-ঝড়ে দাঁড়াতেই পারল না বাংলাদেশ
সিডনি থেকে, সেকান্দার আলী
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ১৩:৪৫
সিডনিতে গতকাল ভোর এসেছিল মেঘের আড়াল থেকে। সূর্য মধ্যগগনে পৌঁছাতেই বৃষ্টি হলো এক পশলা। এর পর রোদেলা দুপুরে সবকিছু স্বাভাবিক। শুধু বাংলাদেশ দলের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়নি। দেখতে দেখতে ব্যর্থতার বর্ষণে ভেসে গেল পুরো দল। এই তাঁরাই তিন দিন আগে বিজয় নিশানা উড়িয়েছিলেন হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা সেই ক্রিকেটারদের মাথায় গতকাল ভেঙে পড়ে আকাশ। কোনো কিছুই ঠিক মতো হলো না। বাংলাদেশকে মেনে নিতে হলো রেকর্ড ১০৪ রানের পরাজয়। অদূরের উত্তাল সিডনি হারবারের বিশাল ঢেউয়ের মতো ক্রিকেটারদের হৃদয়ে তখন আছড়ে পড়া হতাশার ঢেউ।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, সমর্থকদের ভাসাতে চান জয়ের আনন্দে। তাই সিডনির গলিপথগুলো জনস্রোতে মিশে গিয়েছিল মোর পার্কে, যেখানে প্রিয় বাংলাদেশ দলের ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। মায়ের আঙুল ধরা শিশুদের হাতে জাতীয় পতাকা। সবার পরনে লাল-সবুজের জার্সি। বিশ্বকাপ ভেন্যুতে যেন আরেকটি বাংলাদেশ দলের ছবি। যে দলের সদস্যরা কড়ি দিয়ে টিকিট কিনে গ্যালারি মাতিয়ে সমর্থনের শক্তিতে ভালো খেলতে উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন সাকিবদের। কিন্তু যাঁদের উদ্দীপিত করতে মাঠে আসা সেই ক্রিকেটাররাই যে ছিলেন নিরুত্তাপ। অথচ আগের দিন অধিনায়কের কথায় মনে হয়েছিল প্রোটিয়াদের পারফরম্যান্সের আগুনে পুড়িয়ে খাক করে দেবেন তাঁরা। সে আগুন যে মোমের আগুনের মতো পলকা, রাইলি রুশোদের ব্যাটের হাওয়ায় নিভে যাবে, কে জানত! তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মেহেদী মিরাজরা তাই 'রুশো-ঝড়'-এ মুখ থুবড়ে পড়েন।
সিডনির কন্ডিশন মাথায় রেখে দুই দলই একজন করে স্পিনার বেশি নিয়ে নামে।
ইয়াসির আলী রাব্বির জায়গায় সুযোগ দেওয়া হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি ব্যাটারদের কথা মাথায় রেখে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মিরাজকে আনা হয় বোলিংয়ে। রুশো ঝড়ের তোপে মিরাজ টলে গেলেন মুহূর্তেই। প্রথম স্পেলে ২৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। সেরা পেসার তাসকিন আহমেদ ওপেনিং ওভারে ব্রেক থ্রু দিলেও কুইন্টন ডি কক আর রুশো জুটি গড়ে এলোমেলো করে দেন বোলারদের। মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া কেউই লাইন-লেন্থ ঠিক রাখতে পারেননি। সাকিবের মতো বিশেষজ্ঞ স্পিনারও বল হাতে নিয়েছেন ১০ ওভার পর। ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলা রুশো ৮৮ রানে জীবন পান হাসান মাহমুদের হাতে। থার্ডম্যানে ছুটে এসেও ক্যাচটা ফেলে দেন তিনি। একবার জীবন পাওয়া বাঁহাতি এ প্রোটিয়া ব্যাটারের রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ৫২ বলে। রুশো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টি২০ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন বিশ্বকাপে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি এটি। ৫৬ বলে ১০৯ রানে সাকিবের শিকার তিনি। ৭টি চার আর ৮টি ছয় দিয়ে সাজান ইনিংসটি। ডি কক ৩৮ বলে ৬৪ রান করে আফিফকে উইকেট দেন। ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০৬ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরুতে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদার প্রথম দুটি বল ফ্লিক করে মাঠের বাইরে ফেলেন সৌম্য। ওপেনিং ওভার থেকে ১৭ রান তোলে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার আর নাজমুল হোসেন শান্ত জুড়ি গড়ে তোলার আগেই আঘাতটা আসে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলিং থেকে। এনরিক নর্কিয়াকে তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে আনেন টেম্বা বাভুমা। বল হাতে পেয়েই বাজিমাত করেন তিনি। সৌম্যকে প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড বানান। চতুর্থ বলে বোল্ড আউট করেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। ২৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। নর্কিয়ার দেখানো পথে এগিয়ে যেতে থাকেন বাকি বোলাররা। শিলা বৃষ্টির মতো উইকেট পড়তে থাকে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। পরাজয়ের নিজেদের নতুন রেকর্ড গড়ার শঙ্কায় পড়ে দল। শেষপর্যন্ত ১৬.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে টেনেটুনে ১০১ রান করতে পারে বাংলাদেশ। সাকিবদের ১১ জনের রান দক্ষিণ আফ্রিকার রুশোর রানের চেয়েও ৮ কম। এমন চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় পরাজয় লেখা হয় ১০৪ রানে। ২০০৮ সালে করাচিতে পাকিস্তানের কাছে ১০৮ রানে হেরেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আগের বড় হার ছিল ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রমে ৮৩ রানের। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে গতকাল বিশ্বকাপ মঞ্চে লেখা হলো পরাজয়ের ব্যবধানের নতুন রেকর্ড।