ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

কাতারে বিশ্বকাপের নেপথ্যে

কাতারে বিশ্বকাপের নেপথ্যে

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১৩:৪৪

নিকোলাস সারকোজি- বিশ্ব রাজনীতির আঙিনায় সে সময় যাঁকে নিয়ে চলে তুমুল বিতর্ক; সেপ ব্লাটার- দুর্নীতি, ভোট-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ফিফার আর্থিক ভান্ডার ভাঙিয়ে খাওয়ার দায়ে যাঁকে যেতে হয়েছিল আদালতের কাঠগড়ায়, আরেকজন মিশেল প্লাতিনি- আপাদমস্তকে একজন নীতিবহির্ভূত মানুষ, যত দিন উয়েফার 'মাস্টার কি' ছিল তাঁর হাতে, তত দিন যা ইচ্ছে তা-ই করে বেড়িয়েছেন। ২০১০ সালের দিকে এই তিন মোড়লই ফন্দি আঁটেন লোকচক্ষুর আড়ালে। এরপর তো বেচেই দেন ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের টিকিটটা।

এতদিনে সেই হাঁড়ির খবরটা ফাঁস করলেন তাঁদেরই একজন সেপ ব্লাটার। সুইস সংবাদমাধ্যম তাগেস-আন্তসাইগারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দোষটা নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এটাও জানিয়েছেন, ওই সময় কীভাবে কী হয়েছিল। কাতারকে আয়োজক বানাতে তাঁদের নীলনকশার একটা অংশও তুলে ধরেন সাবেক এই ফিফা প্রেসিডেন্ট, 'আসলে কাতার আয়তনের দিক থেকে খুবই ছোট দেশ। ফুটবল বিশ্বকাপ বড় একটা বিষয়। কাতারকে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের আয়োজন করতে দেওয়া ভুল ছিল। সে সময় আমিই ছিলাম ফিফা সভাপতি, এমন ভুলের জন্য আমি নিজেই দায়ী।'

২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজন হতে লড়েছিল পাঁচটি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।

যেহেতু ফিফাপ্রধানের হাতে থাকে চারটি ভোট, তাই তাঁকে হাত করতে পারলেই বড় কিছু সম্ভব হবে বলে ধরে নেয় কাতার। সে সময় কাতারের প্রিন্স ও বর্তমান আমির শেখ তামিম নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে লবিং করতে থাকেন। ভৌগোলিক রাজনীতিকেও হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায় কাতার। ফ্রান্সের তৎকালীন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সারকোজি আবার ফিফার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার জন্য দিন-তারিখ ঠিক করেন। এরপর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্লাতিনি, সারকোজি ও ব্লাটারের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেন শেখ তামিম। সেখানেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যে কোনো মূল্যে কাতারকে পাস করাতে হবে। এরপর যা হওয়ার তা-ই হলো। ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে আয়োজনের দায়িত্বটা পেয়ে যায় কাতার।
যেখানে কাতারের বাক্সে পড়ে ১১ ভোট আর যুক্তরাষ্ট্রের বাক্সে মাত্র ৮ ভোট। বাকিরা লড়াইয়েই আসতে পারেনি। অথচ চারটি ভোট যুক্তরাষ্ট্রকে দিতেই রাজি ছিলেন ব্লাটার। পরে সারকোজির মিটিং সেরেই ভোল পাল্টান। ভোট আর যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়নি ব্লাটারের। একই সঙ্গে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিজেকে যে বিক্রি করে দিয়েছিলেন সাবেক উয়েফাপ্রধান প্লাতিনি, সেটাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত কয়েক বছরে উঠে এসেছে। তার একটা আভাস মাত্র মিলল ব্লাটারের কথায়, 'সে সময় ফিফার নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্বের দুই বড় শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজক হবে রাশিয়া আর ২০২২-এর দায়িত্ব পাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পরে আর সেটা ঠিক রাখা যায়নি। কাতারকেই দায়িত্বটা দিতে হলো।'

২০ নভেম্বর শুরু ফুটবল বিশ্বকাপ, শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর। চার বছর পর পর ফুটবলের এই মহারণ জুন-জুলাইয়ে হলেও আয়োজক দেশ কাতারের কন্ডিশন বিবেচনায় নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়কে বেছে নিয়েছে ফিফা। দেশটির আটটি ভেন্যুতে ৩২ দলের মহাযজ্ঞে এবার ফেভারিট হিসেবে থাকছে দুই দর্শকনন্দিত দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিও থাকবে এগিয়ে।

আরও পড়ুন

×