ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

জাপানের ইতিহাস

জাপানের ইতিহাস

স্পেনের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে জাপান মিডফিল্ডার রিতসু ডোয়ান (ডানে) ও ডিফেন্ডার ইতাকুরার উচ্ছ্বাস-এএফপি

সাদিক শাহরিয়ার

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:৪৯

স্পেনের বিপক্ষে জাপান যখন খেলতে নামে, টোকিওতে তখন ভোর ৪টা। টোকিওর বিখ্যাত শিবুয়া ক্রসিং 'নিপ্পন', 'নিপ্পন' ধ্বনিতে মুখর করে তুলেছিলেন জাপানিরা। 'নিপ্পন' অর্থ হলো 'লড়ে যাও, সাধ্যমতো লড়ে যাও।' লড়াইয়ের সেই দৃঢ় মানসিকতা দিয়ে স্পেনের সঙ্গে জাপান যখন ২-১ গোলের অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেয়, টোকিওতে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। তবে ফুটবলবিশ্বে জাপানিজ 'ব্লু সামুরাই' ততক্ষণে এক নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়ে ফেলেছে। বিশ্বমঞ্চে এ যেন জাপানি ফুটবলের নবজাগরণ।

স্পেন-জার্মানির মতো দলকে হারিয়ে জাপান শেষ ষোলোতে যাবে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন আশা খোদ জাপান সমর্থকদের মধ্যেও হয়তো ছিল না। তারাই কিনা ইউরোপের দুই পরাশক্তি স্পেন আর জার্মানিকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে পৌঁছে গেছে। 'ব্লু সামুরাই'খ্যাত জাপান ফুটবল দল কাতারের মরুর বুকে যেন এক রূপকথার গল্প লিখে দিল। জাপানের এই দুর্দান্ত যাত্রার শুরুটা হয়েছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় দিয়ে। তবে জাপানের সেই জয়কে অঘটন হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। পরের ম্যাচে কোস্টারিকার কাছে জাপানের ১-০ গোলের হার যেন সে পালে জোর হাওয়া দেয়। শেষ ষোলোতে খেলতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে জাপানকে জিততেই হতো। তার ওপর জার্মানির বিপক্ষে তাদের জয় যে নিতান্তই অঘটন ছিল না, তা প্রমাণের অদৃশ্য এক চ্যালেঞ্জ ছিল জাপানের সামনে। দুই চ্যালেঞ্জই জাপান জয় করেছে লেটার মার্কস নিয়ে। শুধু তাই নয় এই জয়ে আরও এক নতুন রেকর্ড গড়েছে জাপান। স্পেন ও জার্মানি দুই দলের বিপক্ষেই ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জয় তুলে নেয় তারা। পিছিয়ে থেকে একই বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ জেতা তৃতীয় দল হচ্ছে জাপান। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে প্রথম এই রেকর্ড গড়েছিল ব্রাজিল আর ১৯৭০ বিশ্বকাপে একই কীর্তি গড়েছিল জার্মানি।

তবে এশিয়ান ফুটবলের পাওয়ার হাউজখ্যাত জাপানের এই সাফল্য কিন্তু রাতারাতি আসেনি। ১৯৯১ সালের দিকে জাপানের ফুটবলে তখন রীতিমতো দুর্দশা চলছিল। তাদের পেশাদার ফুটবল লিগের কোনো কাঠামো ছিল না। ১৯৯২ সালে জাপানি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ১০০ বছরের এক পরিকল্পনা হাতে নেয়। জাপান লক্ষ্য নির্ধারণ করে ২০৯২ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ জিতবে তারা। এরই অংশ হিসেবে জাপান জে-লিগের জন্ম। জাপানের প্রথম লক্ষ্য ছিল তাদের লিগে ১০০টি পেশাদার ক্লাব থাকবে এবং এই জে-লিগ একদিন হবে এশিয়ার সেরা। এর পরই ২০০০-এর দশকের শুরু থেকে জে-লিগে জিকো, দুঙ্গা, লিওনার্দো, লিনেকারদের মতো তারকা ফুটবলাররা আসতে শুরু করেন। নিজেদের লিগ শক্তিশালী করার পর থেকেই জাপান সুফল পেতে শুরু করে। পরিকল্পনামাফিক ৩০ বছর কাজ করেই জাপানের ফুটবল আজকের অবস্থানে। নিজেদের বিশ্ব ফুটবলের এক নতুন পরাশক্তি হিসেবে তৈরি করেছে তারা। জাপানের এই বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ২৬ ফুটবলারের কেবল ছয়জন খেলেন স্থানীয় লিগে। বাকি সবাই খেলেন ইউরোপের সব সেরা ক্লাবে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সোমবার জাপান মাঠে নামবে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। কাতারের মরুর বুকে ব্লু-সামুরাইদের ম্যাজিক পুরো ফুটবল বিশ্বকে আর কতটা চমকে দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন

×