স্মৃতির শহরে স্বপ্নের রাজকুমার
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:২২
রোজারিওর সান্তা ফে; লিওনেল মেসির প্রাণের শহর। এই শহরকে জড়িয়ে কত স্মৃতি, কত গল্প তাঁর! সেই চার বছর বয়সে ক্লাব গ্রান্ডোলিতে বল পায়ে চমকে দেওয়া এক বিস্ময় বালকের জীবন এভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে, কে জানত? এখনও গ্রান্ডোলির মূল ফটকে মেসির ম্যুরাল। ভেতরের দেয়ালে টানানো ছবিঘরে ট্রফি হাতে দাঁড়ানো ছোট্ট মেসি। শৈশবের সেই দিনগুলো নিশ্চয়ই মনে পড়ে তাঁর, যখন রোজারিওতে পা রাখেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এবার যখন ফিরলেন, তখনও তাঁকে টেনেছিল অতীত। বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টারে চড়ে রোজারিওতে নামেন মেসি। সঙ্গে একই শহরের আরেক তারকা ডি মারিয়া। তাঁদের বরণ করতে সেখানে মানুষের ঢল। সবার সঙ্গে সেলফি তুলে, হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দেন মেসি। এর পর স্ত্রী রুকোজ্জু ড্রাইভ করে নিয়ে যান মেসিকে। হেলিকপ্টার অবতরণের মাঠ থেকে বাড়ির গেট অবধি মানুষ আর মানুষ। এমন অভিজ্ঞতা যে আর কখনও হয়নি মেসির।
হবে না কেন? পাড়ার লোকেরা যে মেসিকে দেখতে চেয়েছিলেন, এতদিনে সেই মেসির আগমন। এভাবে না ছুটে এলে কি হয়! আর্জেন্টাইন দলনেতাও ছিলেন দারুণ প্রাণবন্ত। এতটা ভালোবাসা যে আগে পাননি। ৩৬ বছরের শিরোপা-খরা কাটিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন, তখনও এসেছিলেন রোজারিওর নিজ বাড়িতে। কিন্তু এভাবে কেউ তাঁকে বরণ করতে আসেনি। বিশ্বকাপ বলে কথা, দিয়েগো ম্যারাডোনার রেখে যাওয়া কাজটা পূরণ করেছেন, সেই ১৯৮৬ এর পর তৃতীয় সোনালি ট্রফিটা উপহার দিয়েছেন দেশবাসীকে। তাই তো ঘরের ছেলেকে দেখতে এত এত মানুষের জটলা। সেই জটলা পেরিয়ে যেতে মেসিরও নিশ্চয়ই প্রাণটা হেলেদুলে নেচেছে। যা কিছু অপূর্ণ ছিল সবই মিটেছে, কথা দিয়ে রেখেছেন কথাও।
বিশ্বজয়ের আনন্দটা সবার সঙ্গে ভাগ করেছেন মেসি। সর্বশেষ বাড়ি ফিরে ভিডিও বার্তায় সবাইকে দিয়েছেন ধন্যবাদ। স্মৃতির সব পৃষ্ঠা এক এক করে উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন সবকিছুই তাঁর মনে আছে। অতীত তিনি ভোলেননি, ভুলবেনও না। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ভিডিওতে লিখেছেন লাইনের পর লাইন, 'গ্রান্ডোলি থেকে কাতার বিশ্বকাপ অবধি ৩০ বছরের মতো কেটে গেল। প্রায় তিন দশকের এই সময়ে ফুটবল আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে, কিছু দুঃখও ছিল সেখানে। তবে সব সময়ই আমার স্বপ্টম্ন ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার। চেষ্টা করে যাই, কখনও কখনও মনে হতো এমন কিছু বোধ হয় আর পাব না, তবু আমি হাল ছাড়িনি। এই ট্রফিটা আমরা জিতেছি তাদের জন্যও, যারা আগের বিশ্বকাপগুলোতে এটার দেখা পায়নি। যেমন ব্রাজিলে আমরা কাছে গিয়েও হেরেছি। কঠোর শ্রম ছিল সবার, জিততে চেয়েছিল তারা। আসলে ওই বাজেভাবে শেষ হওয়া ফাইনালেও ট্রফিটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। এই পথে দিয়েগো আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি স্বর্গ থেকে আমাদের দেখেছেন। এই সাফল্য তাদেরও, যারা (কোচিং স্টাফরা) আমাদের কাজটা সহজ করতে রাতদিন কাজ করেছিল। সব সমর্থককে ধন্যবাদ। এবার কেবল এগিয়ে যাওয়ার পালা।'