ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
টেস্ট ক্যারিয়ারে দশম সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের উদযাপন। বুধবার মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এএফপি
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:৫১
জেমি সিডন্সের দৃষ্টিতে ব্যাটিংটা ভালোই হয়েছে। একটির জায়গায় দুটি সেঞ্চুরি আর সাড়ে তিনশ রানকে চারশতে নিতে পারলে আরও ভালো হতো। ব্যাটিং কোচ হিসেবে জেমির এই অনুধাবন তৃপ্তির ঢেকুর তোলার মতোই। উচ্চাভিলাষী কোচ হলে হয়তো অন্যভাবে বলতেন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে সাড়ে পাঁচশ রানে ইনিংস ঘোষণা করা উচিত ছিল। বাংলাদেশকে টেস্টের বড় দল হতে চাইলে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। আত্মবিশ্বাস এবং রেকর্ড বাড়িয়ে নিতে হবে আয়ারল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে অমানবিক ক্রিকেট খেলে। যেমন খেলেছে শ্রীলঙ্কা উত্তরণ পর্বে। র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দলগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে বিশাল বিশাল স্কোর গড়ে টেস্টে নিজেদের হাত পাকিয়েছে। বাংলাদেশ সে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। উল্টো আয়ারল্যান্ডের কাছে অলআউট হয়েছে ৩৬৯ রানে। পুরো এক দিন ব্যাটিং করতে না পারা কিঞ্চিত বিব্রতকরও। এ বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখা ক্রিকেট অনুরাগী দেশে খুব কমই আছে। সবাই দেখছে আয়ারল্যান্ডকে আড়াই দিনেই হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডকে ২১৪ রানে অলআউট করায় প্রথম দিনই ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। যদিও ইনিংসের শুরুটা ছিল সূর্যের অস্তাচলের মতোই। প্রথম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারানো আর দিনের শেষ বলে তামিমের আউট ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় স্বাগতিকদের। গতকাল দ্বিতীয় দিনের শুরুতে মুমিনুল হকের লেগ স্টাম্প উড়ে যাওয়া আতঙ্ক ছড়াতে পারত মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান ১৫৯ রানের জুটি গড়ে তুলতে না পারলে। লিটন কুমার দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজ কিছু রান করে দেওয়ায় লিড ১৫৫ রানে উন্নীত করা গেছে। বাংলাদেশ গত দুই দিনে ব্যাটিং করেছে ৮০.৩ ওভার। অথচ এক দিনে বেঁধে দেওয়া আছে ৯০ ওভার। সে কোটাও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন সেশন বা ছয় ঘণ্টা ব্যাট করা হয়নি। মূলত সাকিব-লিটন, মিরাজ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং না করায় শোভন স্কোর করা গেছে।
বাংলাদেশের ইনিংস গড়েছে মিডলঅর্ডার। মুশফিক আর সাকিবের ব্যাটিং চোখে লেগে থাকার মতোই। এ দুই সিনিয়র ক্রিকেটার যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন একবারের জন্যও মনে হয়নি ব্যাটিংটা কঠিন কিছু। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্য অনুযায়ী, সাকিব দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরি করতে চেয়েছিলেন। পরিকল্পনা মতো খেলছিলেনও। ৮৭ রানে অফ স্টাম্পের বলে ভুল না করলে সেঞ্চুরি পেয়েও যেতেন অধিনায়ক। ৯৪ বলে ১৪টি চার দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিব না পারলেও মুশফিক ঠিকই দশম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান। ১৩৫ বলে ১০০ রানে পৌঁছান চার মেরে। এই শতক ১৩টি চার আর এক ছয় দিয়ে সাজানো। লিটন যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, ব্যাটিংও করছিলেন সেভাবে। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। ৪১ বলে ৪৩ রান করা সে প্রমাণ। সাত নম্বরে নামা মিরাজ বরাবরই ভালো করেন। আইরিশদের বিপক্ষেও ব্যতিক্রম ছিলেন না তিনি। ৮০ বলে ৫৫ রান তাঁর। যদিও এ ম্যাচে লেজের দিকের ব্যাটাররা সেভাবে রানের জোগান দিতে পারেননি। সেটা হতে দেননি অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন। তামিম, মুশফিক, সাকিবদের আউট করে ছয় উইকেট শিকার তাঁর। টেস্টে পাঁচ বা তারও বেশি উইকেট পাওয়া প্রথম আইরিশ স্পিনার তিনি।
বাংলাদেশ এক ইনিংসের রানই জয়ের স্কোর বলা যায়। আইরিশরা ২৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের দিকেই এগোচ্ছে। প্রথম ইনিংসে ৬৫ ওভার পরে বোলিংয়ে আসা সাকিব দ্বিতীয় ইনিংস ওপেন করেন। প্রথম ওভারে ব্রেক থ্রু দেন জুটি ভেঙে। জেমস ম্যাককালামকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন টাইগার অধিনায়ক। তাইজুল ইসলামও পিছিয়ে নেই। সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুই উইকেট নেন তিনি। গতকালের বোলিং ছন্দ ধরে রাখতে পারলে আজ প্রথম সেশনেই শেষ হতে পারে ম্যাচ। কারণ ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ১২৮ রান করতে হবে আইরিশদের। এই রেকর্ড করতে পারলে সাকিব-তাইজুলের যে কেউ পেতে পারেন পাঁচ উইকেট।
- বিষয় :
- জেমি সিডন্স
- টেষ্ট ক্রিকেট