ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

তাওহিদের হৃদয় জেতানো ম্যাচ

তাওহিদের হৃদয় জেতানো ম্যাচ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবার সিলেটে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় জয়ের পর উল্লসিত ম্যাচের নায়ক তাওহিদ হৃদয় ও শরিফুল - এএফপি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

টি২০ ম্যাচে বলে বলে বিচ্ছুরিত হয় উত্তেজনার বারুদ। কখনও তা থেকে ফুলকি দিয়ে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায় বিদ্যুৎ গতিতে। মুহুর্মুহু বাঁক বদল করে ম্যাচ। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের ঝাপটা লাগে স্নায়ুতে। গতকাল উত্তেজনা, বাঁক বদল, নাটকীয়তা, স্নায়ুর চাপ ছিল সিলেটের রোমাঞ্চকর টি২০ গেমে। শেষ দিকে তো পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে। শেষ ওভারে ৬ রান করতে তিন বলে তিন উইকেট হারালে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে দল। হ্যাটট্রিকম্যান করিম জানাতকে বাউন্ডারি মেরে সেখান থেকে ম্যাচ জেতান শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এ পেসারের ব্যাট থেকে ‘ফিনিশিং’ রান এলেও জয়ের নায়ক তাওহিদ হৃদয়। ২ উইকেটের জয়ের ম্যাচটি তাওহিদের হৃদয় জেতা।


বাংলাদেশ ১৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ওপেনিং ওভারে উইকেট হারায়। ফজলহক ফারুকির একটি দারুণ ডেলিভারিতে রনি তালুকদারের স্টাম্প উড়ে যায়। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাসও ভুল শটে উইকেট হারান। সাকিব থিতু হতে পারেননি চাপের মুহূর্তে। বাংলাদেশ ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারালেও আফগানদের থেকে পিছিয়ে পড়েনি। দু’দলের ইনিংস বিশ্লেষণ করলে ১০ ওভার শেষে সফরকারীদের চেয়ে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। সেখান থেকে শামীম ও হৃদয় ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ায় হাতের মুঠোয় আসে ম্যাচ। মূলত ১৪তম ওভার থেকে উত্তেজনার পারদ উঠতে থাকে। টান টান রেখে এগোতে থাকে গেম। শেষ ২৪ বলে ২৬ করতে হতো পাঁচ উইকেটে। ২৪ রানে জীবন পাওয়া শামীম রশিদের শেষ ওভারে উইকেট হারালে দুশ্চিন্তা বাড়ে। ২৫ বলে ৩৩ রান করে শামীমকে সাজঘরে ফিরতে দেখতে চাননি কোচ। তিনি চেয়েছিলেন সেট জুটি খেলা শেষ করবে। জিততে শেষ ওভারে ছয় রান করতে হতো বাংলাদেশকে। করিম জানাতের প্রথম বলেই চার হাঁকান মেহেদী হাসান মিরাজ। নাটক তখনও বাকি ছিল। মিরাজ-তাসকিন-নাসুমকে টানা তিন বলে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন করিম। গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। শরিফুল নেমে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে নীরবতা ভাঙেন। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ এক বল হাতে রেখে জিতে নেয় বাংলাদেশ। ৩২ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত হৃদয়।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খুবই সক্রিয়। নিজে এবং ফিল্ডারদের সারাক্ষণ নড়াচড়ার মধ্যে রাখেন। বোলার পরিবর্তনে থাকে মুনশিয়ানার ছাপ। এককথায় সাকিবের ফিল্ডিং পরিবর্তন দেখাও আনন্দের। বাংলাদেশের ফিল্ডিং আর সাকিবের তৎপরতা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে গতকাল। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দলের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যও পূরণ হয় তাতে, আফগানদের ১৫৪ রানে বেঁধে ফেলতে পেরে।

আফগান অধিনায়ক রশিদ খান পিচ দেখে বলেছিলেন, দেড়শ রানের উইকেট। মোহাম্মদ নবীর হাফ সেঞ্চুরিতে কাঙ্ক্ষিত রান ঠিকই করেন তারা। স্লগে বোলাররা কৌশলী হলে দেড়শ রান হয় না। কারণ পাওয়ার প্লে ও মিডল ওভারগুলোতে নিয়ন্ত্রণ ছিল বোলিং দলের হাতে। রশিদ খানরা পাওয়ার প্লে শেষ করেন চার উইকেটে ৪০ রানে। ১৫ ওভার শেষে পাঁচ উইকেটে ৯৪ রান ছিল দলটির। ওখন থেকেই গিয়ার তোলেন মোহাম্মদ নবী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তারা ৩১ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন। ১৭ থেকে ১৯– এই তিন ওভার থেকে ৪২ আর স্লগের পাঁচ ওভার থেকে ৬০ রান তোলে সফরকারীরা। অর্থাৎ প্রতি ওভারে ১২ রান যোগ করেছে তারা। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান– স্লগে এ তিন বোলারের বিরুদ্ধে চড়াও হন নবী-আজমতউল্লাহ। প্রত্যেকের ওভার থেকেই ১৪ রান করে নেন তারা।

সাকিব বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কোনো একক বোলার বা ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে নেই। দল হিসেবে ভালো খেলার ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। বোলিং বিভাগ সেটাই করেছে। ছয়জন বোলারই উইকেট পেয়েছেন। কেবল বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ছিলেন একটু খরুচে। তিনি ৩০ রান দিয়েছেন তিন ওভারে। চার ওভারে ২৩ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকার সাকিবের। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের নেতৃত্বে বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ছিল দলীয় পারফরম্যান্সের কোরাস।

আরও পড়ুন

×