স্বপ্ন বেঁচে রইল
বিশেষ লেখা
আকরাম খান
বাংলাদেশের এই দলটার কাছ থেকে এ রকম খেলাই আশা করি। খুব ভালো ক্রিকেট
খেলেছে ছেলেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে এভাবে ব্যাটিং করার
জন্য যে সাহস লাগে, ব্যাটসম্যানরা তা দেখিয়েছে। ৩২২ রান তাড়ায় তামিম ইকবাল
আর সৌম্য সরকার ভালো একটা শুরু দিতে পেরেছে। পাওয়ার প্লেকে ওরা ভালোভাবে
কাজে লাগিয়েছে। ৮.২ ওভারে ৫২ রান করতে পারা ভালো শুরু বলব। মূলত ওপেনিং
জুটির কারণেই পরের ব্যাটসম্যানরা সাহস নিয়ে খেলতে পেরেছে। তামিম ভালো
ব্যাটিং করছিল। ওর ৪৮ রানে আউট হওয়াকে কিছুটা দুর্ভাগ্য বলব। তামিম আর
সাকিব দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ রান যোগ করেছে। এই দুই জুটিতেই ইনিংসের ভিতটা
দাঁড়িয়ে গিয়েছিল । সেখান থেকে সাকিব ও লিটন ম্যাচ শেষ করে এসেছে। ওদের
পারফরম্যান্সে আমরা খুশি।
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সাহসটা কিন্তু মাশরাফি দেখিয়েছে। বোলিংটা হয়তো খুব
বেশি ভালো হয়নি, তবে খারাপও বলা যাবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাড়ে তিনশ' রান করে
ফেলতে পারত। সেটা কিন্তু হতে দেওয়া হয়নি। মুস্তাফিজ শেষের দিকে দারুণ
ডেলিভারি দিয়েছে। পর পর হেটমেয়ার আর রাসেলকে ফিরিয়ে দেওয়ায় রানের গতি
কমেছে। নয়তো ৩২১-এর বেশি হয়ে যেত। ভালো দিক হলো পেসাররা উইকেট পাচ্ছে।
স্পিনে সাকিব দুটি উইকেট নিয়েছে। সে সব সময়ই ভালো খেলে। ১২ বছর ধরে দেশকে
সার্ভিস দিচ্ছে। সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের আল্লাহর তরফ থেকে পাওয়া
আশীর্বাদ। এই বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে রান পেল সে। বিশ্বকাপে দুটি
সেঞ্চুরি করা সহজ কথা নয়। সে যে গেমটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে,
এটাই এ মুহূর্তের বড় প্রাপ্তি। ৮৩ বলে সেঞ্চুরি আর ৯৯ বলে ১২৪ রান করেছে
সাকিব। আসলে সে তো এভাবেই খেলে। ব্যাট চালাতে শুরু করলে ওর আত্মবিশ্বাসটাও
বেড়ে যায়। সাকিবকে ক্রিজে পেয়ে লিটনের জন্যও ভালো হয়েছে। টনটনের মাঠে বসে
আমি যেটা লক্ষ্য করেছি, লিটনকে খুব ভালোভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল সাকিব।
কখন কী করতে হবে, সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল, দেখিয়ে দিচ্ছিল। এটাই লিটনকে বড়
ইনিংস খেলতে সাহায্য করেছে। লিটন ভালো একজন ব্যাটসম্যান, কিন্তু সমস্যা হলো
ধারাবাহিকতায়। এক ম্যাচে রান পেলে পরে তিন-চার ম্যাচে ছন্দে থাকে না। লিটন
আরও ধারাবাহিক হলে দলের জন্য ভালো হবে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশের জয়ে ফেরাটা। ছেলেদের যে টার্গেট
সেমিফাইনাল খেলা, সেটা এখন সতেজ হয়েছে। রেকর্ড ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছে
বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম ম্যাচটা জিতেছিল ৩৩০ রান করে।
দ্বিতীয় জয়টা এসেছে রান তাড়া করে। এই জয়ে ছেলেরা কিন্তু প্রত্যাশাও বাড়িয়ে
দিয়েছে। সামনে এরচেয়েও বড় স্কোর তাড়া করে জিততে হতে পারে। একদিন পরই
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া অনেক ভালো দল। ব্যাটিং বোলিং
ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো। আমি বলব, প্রতিপক্ষের কথা চিন্তা না করে নিজেদের
নিয়ে পরিকল্পনা করলে ভালো হবে। কাল (আজ) ছেলেদের সঙ্গে আমরা হয়তো বসব,
সেখানে এগুলো নিয়ে কথা হবে। আর এই দলটা এখন অনেক পরিণত। ক্রিকেটাররাই জানে,
কোন ম্যাচে কীভাবে খেলতে হবে।
লেখক :জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক