ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

বিদ্রোহের অনল যখন বিশ্বজয়ের শক্তি

বিদ্রোহের অনল যখন বিশ্বজয়ের শক্তি

হোর্হে রদ্রিগেজ

নাজমুল হক নোবেল

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০৩:২৬

রেফারির শেষ বাঁশির পর সিডনি স্টেডিয়ামে একটি বিরল দৃশ্য দেখা গেল। বিশ্বকাপ জয়ের অপার আনন্দে মশগুল পুরো স্পেন দল, অথচ তখন এক কর্মকর্তাকে নিয়ে মাঠের এক পাশে আপন মনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন কোচ হোর্হে রদ্রিগেজ। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভের কারণেই হয়তো নিজেকে আনন্দ উদযাপন থেকে দূরে রেখেছিলেন কোচ। স্পেনের এই বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে অনেক বিদ্রোহ, অপমান, প্রতিবাদ, দুঃখ, কষ্টের গল্প। আর এসবের কেন্দ্রবিন্দুতে কোচ রদ্রিগেজ। মাত্র এক বছর আগে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন ১৫ নারী ফুটবলার। তাদের মধ্য থেকে মাত্র তিনজনকে বিশ্বকাপ দলে ফিরিয়ে এনেছিলেন কোচ। সেরা ১২ ফুটবলারকে ছাড়াই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন তিনি। সব প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্বকাপ জিতে কোচ রদ্রিগেজ জানালেন, বিদ্রোহের সেই কঠিন সময়টা তাদের আরও শক্ত করেছে। সেই দৃঢ় মানসিকতাই তাদের ছিল বিশ্বজয়ের অন্যতম শক্তি।

সেই বিদ্রোহের রেশ বিশ্বকাপেও স্পেন দলে বেশ ভালোমতোই ছিল। ফাইনাল শুরুর আগে যখন স্টেডিয়ামের মাইকে খেলোয়াড় ও কোচদের নাম ঘোষণা হচ্ছিল, তখন রদ্রিগেজ বলতেই পুরো স্টেডিয়াম দুয়ো ধ্বনি দেয়। অবশ্য দর্শকরা তো পরের বিষয়, নিজের দলের খেলোয়াড়রাই রদ্রিগেজকে পছন্দ করেন না। ফাইনাল জেতার পর তাও খানিকক্ষণের জন্য দলের সঙ্গে তাঁকে উদযাপন করতে দেখা গিয়েছিল; সেমি ও কোয়ার্টার জেতার পর ফুটবলাররা তাঁর সঙ্গে হাত পর্যন্ত মেলাননি। স্পেন দলের বেশির ভাগ সদস্যই কোচ রদ্রিগেজকে পছন্দ করেন না। তাদের দাবি, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক চাপ তৈরি করেন তিনি। যে কারণে তাদের পক্ষে স্বাভাবিক খেলাটা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে রদ্রিগেজ জারি করেছিলেন, জাতীয় দলে থাকাকালে হোটেলে অবস্থানের সময় মাঝরাত পর্যন্ত দরজা বন্ধ করা যাবে না। কে কী করছে, সেটা যেন তিনি চেক করতে পারেন; সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এ নিয়মের প্রতিবাদেই ১৫ জন জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন।

পুরো দল বিদ্রোহ করে বসলেও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন কিন্তু সবসময় রদ্রিগেজর পাশে ছিল। তাই তো বিশ্বকাপ জয়ের পর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ফেডারেশন সভাপতির প্রতি, ‘ফেডারেশন সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস যেভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন, সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ফেডারেশনের প্রতিটি মানুষ সবসময় আমার সঙ্গে ছিল। সে সঙ্গে আমার পরিবার। গত একটি বছর তারা অনেক সহ্য করেছে।’ সেই বিদ্রোহের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ‘কঠিন সে সময়টা আমাদের সবাইকে আরও শক্তিশালী করেছে। সবাই এখন আমাদের দেখছে বলে আমি খুবই খুশি। তাদেরও (বিদ্রোহী) মনে হয়, আমরা খুশি করতে পেরেছি। আমরা এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।’

ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছেন ওলগা কারমোনা। তিনিও টিম স্পিরিটের কথা বলেছেন, ‘আমাদের সবার মধ্যে একটা অনুভূতি ও বিশ্বাস ছিল, আমরা পারব। কেন জানি ম্যাচটা আমরা জিতব বলে মনে হচ্ছিল। সত্যি বলতে, কারণটা আমি ঠিক জানি না।’ ২৩ বছর বয়সী এ তারকা জয়টাকে তাঁর প্রিয় বন্ধুর মাকে উৎসর্গ করেছেন। কিছু দিন আগে সেই বন্ধুর মা মারা গেছেন। গোল উদযাপনের জন্য জার্সিতে তাঁর নামও লিখে এনেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

×