ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের বেসিক নিয়েও কাজ করেন। বিসিবির চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ব্যাটসম্যানদের পাঠ দিচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি যতটা পরিশ্রম করেন এবং আন্তরিকতা দিয়ে শেখাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, ব্যাটসম্যানরা ততটা শিখতে পেরেছেন কিনা। রোববার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টেস্ট স্কোয়াডের অনুশীলনের এক ফাঁকে ম্যাকেঞ্জির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্যাটসম্যানরা কতটা শিখেছেন? ব্যাটিং কোচ তার উত্তরে যেটা বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ৪০ রান করে পরের ম্যাচ নিশ্চিত করতে। দলের স্বার্থে আত্মকেন্দ্রিক এই চিন্তা থেকে ব্যাটসম্যানদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

টেস্টের প্রস্তুতি কেমন চলছে? কোন ধরনের কৌশল নিয়ে কাজ করছেন?

ম্যাকেঞ্জি: আমরা খেয়াল করেছি, উপমহাদেশের কন্ডিশনেও টেস্টে ব্যাটসম্যানদের বাউন্সি বলের মোকাবেলা করতে হয়, এমনকি পাকিস্তানেও সেটা করতে হবে। কিছু বল যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বাউন্স করে সেগেুলো আরও ভালোভাবে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই নিয়েই একটা সেশন চলছে এখানে। তা ছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, সেখানে গিয়ে প্রতিপক্ষকে সব সময় রিভার্স সুইংয়ের একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এজন্য রিভার্স সুইং মোকাবিলারও একটা প্রস্তুতি চলছে আমাদের।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ দুটিতে ব্যাটিং তো ভালো করেনি?

ম্যাকেঞ্জি: এটা ঠিক যে, আমরা আদর্শ টি২০ ব্যাটিং দেখিনি। আমার মনে হয়, আমাদের ব্যাটিং কম্বিনেশনের দিকে একটু চোখ রাখলেই ব্যাপারটি বোঝা যাবে। রাসেল নতুন কোচ, সেটা চেষ্টা করছে ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনেশনে কাজ করতে। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে এক, দুই ও তিন নম্বর ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক ব্যাটসম্যান রয়েছে। স্কোয়াডের দিকে তাকালে দেখা যাবে দলে অনেক ব্যাটসম্যান রয়েছে। কিন্তু তারা প্রায় প্রত্যেকেই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৪, ৫ আর ৬ নম্বরে ব্যাটিং করার জন্য ভিন্ন দক্ষতার প্রয়োজন যেখানে আপনাকে মানসম্পন্ন স্পিনারের মোকাবিলা করতে হয়। এজন্য মানসিক প্রস্তুতিটাও ভিন্নভাবে নিতে হয়।

আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন?

ম্যাকেঞ্জি: আপনাকে সব সময় স্ট্রাইক রোটেড করতে হবে। বাউন্ডারির জন্য সুযোগ খুঁজতে হবে, তা না হলে সিঙ্গেলস বা ডাবলস নিয়ে রানের চাকা সচল রাখতে হবে। আমরা জানি, এই স্কোয়াডে অনেক অনভিজ্ঞ নতুন ক্রিকেটার রয়েছে। আমরা দল নির্বাচনের সময়ও সেটা জানতাম, তার পরও যা হয়েছে তা হতাশাজনক। আমরা দুটি ম্যাচেই ইনিংস ভালোভাবে শুরু করতে পারিনি। যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে সেটা হলো, শুরুতে আমরা প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারিনি। আমরা স্ট্রাইক রোটেড নিয়ে অনেক কাজ করেছি কিন্তু গত দুটি ম্যাচে তার কোনো কার্যকারিতা আমার চোখে পড়েনি।

আমি ও রাসেল (প্রধান কোচ) আমরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধা দেখতে চেয়েছি। চেয়েছি তাদের মধ্যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট দেখতে। দুঃখজনক হলো, তা দেখতে পাইনি। আসলে আমরা সবাই মানুষ। ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে। এই দলে কিছু তরুণ প্রচ চাপের মধ্যে ব্যাটিং করছে। কেউ কেউ কামব্যাক করেছে। আমরা সব বুঝি, আশা করতে পারি আপনারও বুঝতে পারছেন।

 অনেকদিন হলো ব্যাটসম্যানদের শেখাচ্ছেন, কোনো উন্নতি দেখছেন?

ম্যাকেঞ্জি: কিছু উন্নতি তো অবশ্যই হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালনকালের সময়ে বেশ কিছু ক্রিকেটারকে পেয়েছি যারা উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা কখনোই খোলসের বাইরে আসার চেষ্টা করে না। একটা নিজস্ব কমফোর্ট জোনেই ব্যাটিং করে তারা। নাঈম শেখকে দেখুন, ভারতের মাটিতে সে ৮০ রানের চমৎকার একটি ইনিংস খেলেছে। অথচ গত কয়েকটি ম্যাচে সে ৪০ করতেই স্ট্রাগল করছে। আমাদের আরও ধারবাহিক পারফর্ম করা ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন।

আমি চাই, তারা স্বার্থপর হোক- কিন্তু সেটা বাংলাদেশকে জেতানোর জন্য, নিজের রেকর্ড সমৃদ্ধ করার জন্য নয়। আমি যদি ৮০ করতে পারি, তাহলে কেন ১৪০ কিংবা ২০০ করতে পারব না। আমি প্রচ ভাবে চাই তারা দলের জন্য আরও স্বার্থপর হোক, আরও ক্ষুধার্ত থাকুক। তাদের ধারাবাহিকতার জন্যই এই ক্ষুধাটা দরকার। বেশিরভাগ সময়ই ছেলেরা খুশি থাকে ৪০ রান করে পরের ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা পেয়ে। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। এটা ভুল, মারাত্মক একটা ভুল মানসিকতা। আমি চাই, এই ছেলেগুলোই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় নিজেদের নিয়ে যাক। এটাই চেষ্টা করছি; কিন্তু সত্যি বলতে কী, দিন শেষে সেটা না দেখতে পেয়ে হতাশও হচ্ছি।

তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট নিয়ে আপনার মত কী?

ম্যাকেঞ্জি: আমিও লক্ষ্য করেছি, সে শুরুতে অনেক ঢিলেঢালা ব্যাটিং করছে। কয়েক বছর ধরে সে বাংলাদেশের হয়ে তার সেরা পারফর্ম করে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, সে সবেমাত্র ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছে। তার জন্য রান পাওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার আশপাশের ব্যাটসম্যানদের রান পাওয়াটাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।