- খেলা
- সাহসী হবে কি টিম ম্যানেজমেন্ট
সাহসী হবে কি টিম ম্যানেজমেন্ট

ছবি: ফাইল
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছে অটোমেটিক চয়েস বলে কিছু ছিল না। ব্যাটসম্যানের পছন্দের ব্যাটিং অর্ডার দিতেন না তিনি; বরং বিগত পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান ঘেঁটে ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ করতেন। জাতীয় দলের সাবেক এই কোচের সাহসী পদক্ষেপ ও কৌশলের কারণে লাভবানই হয়েছিল বাংলাদেশ।
ক্রিকেটারদের দল হিসেবে খেলতে বাধ্য করতে পেরেছিলেন তিনি। জাতীয় দলের বর্তমান কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচ মাস হলো। রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে তৃতীয় সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। চন্ডিকার মতো রাসেল আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা এখনও দেখাননি; বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার স্বার্থে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতরেই আছেন। তবে পাকিস্তান সফরে টি২০ সিরিজে বাজে হারে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে রাসেলকে।
সিরিজ শুরুর ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও নাঈম শেখ রান করলেও দলের যে খুব বেশি কাজে লেগেছে, বলা যাচ্ছে না। বরং তামিম-নাঈম বেশি করে ডট বল খেলায় স্লগ ওভারে ব্যাটসম্যানরা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচের ব্যাটিং আরও খারাপ হয়।
তামিম রান পেলেও বাকিরা জুটি বা ঝটিকা স্কোর করতে পারেননি। বরং তামিমের অতিমাত্রায় ধরে খেলার প্রবণতা দলের ওপর চাপ তৈরি করেছে। ডমিঙ্গো পরীক্ষা চালাচ্ছেন স্লগ ওভারে, খুঁজছেন হার্ড হিটার কাউকে। তার এই গবেষণায় গিনিপিগ বানানো হচ্ছে আগ্রাসী ওপেনারদের (লিটন, আফিফ, সৌম্য)। অথচ তিনি কিছুতেই পাওয়ার প্লে এবং শ্নথ ওপেনারকে (তামিম ইকবাল) নিয়ে পরীক্ষা করছেন না। এটা কি শুধুই ভারী নামের কারণে? নাকি এটা ভেবে যে, বোর্ডের ওপর মহল নাখোশ হবে, সেই কারণে?
কারণ যা-ই হোক, এখন পর্যন্ত ডমিঙ্গোর স্লগ ওভারে হার্ডহিটার খুঁজে পাওয়ার তত্ত্ব ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ কি তিনি ওপেনিং জুটি নিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারবেন? টিম মিটিংয়ে বলতে পারবেন, আফিফ-লিটন কিংবা লিটন- নাঈমকে দিয়ে ইনিংস শুরু করে দেখা যাক না। এখানে টিম ম্যানেজমেন্ট হলো কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচক। কোচ 'নতুন এসেছি' বলে প্রতি সিরিজেই রক্ষণ করে যাচ্ছেন।
মাহমুদুল্লাহ সিরিজ বাই সিরিজ অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে কোনো সিনিয়রকে চটাতে রাজি নন। আর নির্বাচকপ্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ব্যাটিং অর্ডার 'আমি ঠিক করি না' বলে এড়িয়ে যেতে চান। মাঠে ক্রিকেটারদের সাহসী, ভয়ডরহীন খেলার কথা বললেও আদতে টিম ম্যানেজমেন্টই ভীরু ভীরু সব সিদ্ধান্ত দেন।
পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে বাঁচতে হলে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি টিম ম্যানেজমেন্টকেও ইতিবাচক মানসিকতা দেখাতে হবে। দলের স্বার্থে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো রাসেল স্বৈরাচার কোচ হলে কেউ মন্দ বলবে না। কেই মনঃক্ষুণ্ণ হলেও তাতে পাত্তা না দিলেই হলো।
কারণ ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থ সবার আগে। দল জিতলে ছোট ছোট পারফরম্যান্সও প্রশংসিত হয়। কেউ প্রতিক্রিয়া দেখালে কোচ তাকে আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারেন, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হতে পারে না। দলের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ব্যক্তিকে নেওয়া হয়।
ভারত সফরে ইন্দোরে প্রথম টেস্ট চলাকালে রাসেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, টেস্ট দল খোলনলচে পাল্টে ফেলতে চান তিনি। যারা টেস্ট খেলতে চায় তাদেরই দলে নেবেন। সম্পূর্ণ নতুন সেটআপ নিয়ে খেললেও বর্তমান দল যা খেলছে, তার চেয়ে খারাপ হবে না। টি২০ দলের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন রাসেল। ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙেচুরে দেখতে পারেন সফল হওয়া যায় কিনা।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু রোববার ফোনে লাহোর থেকে জানান, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি২০ ম্যাচের একাদশে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। রাসেল ডমিঙ্গোই পরিবর্তনটা করে দেখতে চান। নান্নু বলেন, পরিবর্তন করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। আমি তো টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ নই। তবে কোচ বলেছেন, শেষ ম্যাচে একাধিক পরিবর্তন করতে চান। রুবেল হোসেন, হাসান মাহমুদ দুজনকে খেলাবেন। ব্যাটিং অর্ডারেও ওপর-নিচ করতে চান।
লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার টপঅর্ডারে খেলে অভ্যস্ত। টি২০র ওপেনিং জুটির জন্য দু'জনই ভালো। পাকিস্তানের কন্ডিশন ও বোলিং লাইনআপ বিচারে অন্তত একজনকে ওপেনিং পজিশন দিলে মন্দ হতো না। কারণ দু'জনই শট খেলতে পছন্দ করেন। সেটা না করে তামিম ও নাঈমের স্লো ব্যাটিংয়ের ওপরই আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও স্লগ ওভারে মেরে খেলার মতো ব্যাটসম্যান খুঁজে পেতে সৌম্যকে সাত নম্বরে খেলানোর পেছনে যুক্তি দিয়েছেন কোচ।
সৌম্য যেহেতু সাতে সফল হননি, তাহলে কি কৌশল পরিবর্তনের সাহস দেখাতেন কোচ? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সে রকম একটা ইঙ্গিত রেখেছেন। আজ ম্যাচ শুরু হলে বোঝা যাবে, কতটা সাহসী হতে পারলেন রাসেল ডমিঙ্গো।
মন্তব্য করুন