যে কোনো বড় কিছু অর্জনের পেছনে একটা গল্প থাকে। কিছুটা ক্রিকেট ম্যাচে ব্রেক থ্রু দেওয়ার মতো। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকবর আলী হয়ে ওঠার পেছনেও তেমনি একটি ব্রেক থ্রু আছে। বিকেএসপির এই ছাত্রের বিশ্বকাপই খেলার কথা ছিল না। প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৯ দলেই ডাকা হয়নি। কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান তিনি। বিসিবির জুনিয়র সিলেক্টর হান্নান সরকার ও বিকেএসপির প্রধান কোচ হাসানের ভূমিকাও ছিল তাতে।

হান্নান সরকার জানান, ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ক্যাম্পে ছিল আকবর। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাননি উইকেটরক্ষক এ ব্যাটসম্যান। বিকেএসপির হয়ে নিয়মিত খেলে গেলেও সেভাবে ফোকাসে ছিলেন না তিনি। বিসিবির রাডারেও ছিল না তার নাম। বাকিটা হান্নানের মুখেই শোনা যাক, "আমরা বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু খেলোয়াড় কম ছিল। ফলে বিকেএসপির মতি ভাইকে বলি একজন খেলোয়াড় দিতে। তিনি বিকেএসপি ক্রিকেটের চিফ কোচ হাসান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আকবরের নাম বলেন। একাদশে নিয়ে নিই তাকে। ছেলেটা ভালো স্কোর করে, সম্ভবত ৯৩ রান হবে। সে কিন্তু আমাদের রাডারে ছিল না। কারণ আমার জানা ছিল না, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার মতো বয়স আছে তার। মতি ভাই আমাকে বললেন, 'আকবরের তো বয়স আছে, ওকে নিবা না দলে।' বয়স আছে সেটা তো জানি না। বিকেএসপির কাছ থেকে ওর পাসপোর্টের কপি চেয়ে নিই এবং বোন টেস্ট করাই। তখন দেখলাম ওর বয়স আছে। বোন টেস্টে ১৭ বছরের মতো এসেছে। এরপর দলে নিই। প্রথম দিকে হৃদয় অধিনায়ক ছিল। দুই ম্যাচ পর আকবরকে অধিনায়ক করি। সে খুব ভালো করে। তার নেতৃত্বেই তো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো।"

ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে যে দলে খেলত আকবর, তার ম্যানেজার ছিলেন হান্নান সরকার। ২০১৭ সাল থেকেই এই তরুণের খেলা মুগ্ধ করেছিল ম্যানেজারকে। হান্নান বলেন, 'আকবরকে গতবারই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু নির্বাচনে আমি ছিলাম না, তাই নেওয়া হয়নি। এবার আমি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছিলাম তাই তাকে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।' আকবরের নেতৃত্বগুণ সহজাত। অনূর্ধ্ব-১৪ দল থেকেই অধিনায়ক তিনি। আকবরের বিকেএসপির কোচ মাসুদ হাসান বলছিলেন আকবরের আকবর আলী হয়ে ওঠার গল্প, 'ও ছাত্র হিসেবে ভালো। খুব ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার। লেগে থাকলে প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার হতে পারবে দেশের জন্য। অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অধিনায়ক ছিল আকবর। বিকেএসপির হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে। লিগে বিকেএসপি দলের অধিনায়কও সে। টানা অধিনায়কত্ব করায় তার নার্ভ শক্ত হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে ছেলেটা।'

বিকেএসপি থেকে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আকবর। ভালো ফল করলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করেননি। বরং বিকেএসপিতেই থেকে গেছেন ডিগ্রি শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে। আগামী তিন বছর বিকেএসপিতে গ্র্যাজুয়েশন করতে করতে সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ এবং লিগে খেলার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও পরিণত করে তুলতে পারবেন আকবর। নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ করা যেত না। এদিক থেকেও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বলতে হবে ক্রিকেটার আকবরকে। বিকেএসপির কোচ মাসুদ হাসানের বড় স্বপ্ন আকবরকে নিয়ে, 'ওর যা মেধা এবং একাগ্রতা তাতে সবকিছু ঠিক থাকলে সে ক্রিকেটার হবে। আমার বিশ্বাস, একদিন জাতীয় দলের অধিনায়কও হবে আকবর।' বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হওয়ার পরও যে ছেলে আবেগ বশে রেখে মাটিতে পা রাখে এবং আগামী দিনের কথা ভাবে, স্বাভাবিকভাবেই তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।