দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছেন হার না মান ২০৩ রানের ইনিংস। মুমিনুলের সঙ্গে ২২২ আর লিটনকে নিয়ে ১১১ রানের জুটি তার। নিজের এ ইনিংসকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ইনিংস ঘোষণা করায় তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন, ভবিষ্যতে ট্রিপল সেঞ্চুরি করবেন টেস্টে


প্রশ্ন: ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপনের ধরনটা অন্যরকম মনে হলো?

মুশফিক: কোনো কিছু চিন্তা করে হয়নি। আমার ছেলে ডাইনোসরের খুব ভক্ত। ডাইনোসর দেখলে অন্যরকম উদাযপন করে। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর সেটাই করেছি। আমার ডাবল সেঞ্চুরিটা ওর জন্য।

প্রশ্ন: সেঞ্চুরির উদযাপনে ব্যাটের চপেটাঘাত কাকে উদ্দেশ্য করে?

মুশফিক: না না, এটা কারও উদ্দেশ্যে ছিল না। আমি কখনোই কারও প্রতি বিস্ম্ফোরক বা বিদ্বেষ প্রকাশে কিছু করি না। সবসময়ই মনে করি, নিজের লড়াই নিজের সঙ্গে।

প্রশ্ন: ডাবল সেঞ্চুরি কি চাপ থেকে মুক্তি দিল?

মুশফিক: সবশেষ টেস্ট ইনিংসেও ৭৪ রান করেছি। আমার কাছে কখনও চাপ মনে হয়নি। আমার কাছে সব সময় মনে হয়, একাদশ যখন আমি থাকব তখন যেন জয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারি। আমাদের দলের একটা পরিকল্পনা ছিল, প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের যে-ই থিতু হতে পারে সে যেন একশ', দেড়শ' বা দুইশ' করে। মুমিনুলও অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে। আগের দিন শান্তও ভালো ব্যাটিং করেছে। আমার ভাগ্য ভালো, আমি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের দল খুব ভালো একটা অবস্থানে আছে। যেটা কি-না আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল।

প্রশ্ন: তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

মুশফিক: তুলনার কথা বলেন, ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট খুব ভালো ছিল। বোলিংয়ে তেমন হুমকি ছিল না। আমি যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছি এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে সহজ উইকেট ছিল বলে আমার মনে হয়।

প্রশ্ন: হঠাৎ ইনিংস ঘোষণায় ট্রিপল সেঞ্চুরির আক্ষেপ থেকে গেল?

মুশফিক: তা তো অবশ্যই। আমার একটা পরিকল্পনা ছিল। সত্যি বলতে কী, আমি ভাবিনি এই সময়ে ইনিংস ঘোষণা করে দেবে। হাতে দুই দিন সময় ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, আমরা যত ব্যাটিং করব, উইকেট তত ভাঙতেও পারত। আবার একই সঙ্গে, দলই সবসময় আগে আসবে। চা-বিরতির সময় ইনিংস ঘোষণা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আধঘণ্টার একটু আগে জানতে পারি আজ ওদের ৬ থেকে ৮ ওভারের মতো ব্যাট করাব। এরপর আমরা একটু রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমার একটা ভাবনা ছিল লিটন একশ' করলে আমি হয়তো তিনশ'র কাছে চলে যাব। আজকে হতো না, কাল (আজ) প্রথম সেশনে তিনশ' হয়ে যেত। তবে ভবিষ্যতে এমন সুযোগ আবার এলে চেষ্টা করব কাজে লাগিয়ে তিনশ' করতে।

প্রশ্ন: ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখা যেতে পারে?

মুশফিক: অবশ্যই সম্ভব। শুধু আমার না, টপ অর্ডারে অন্যরাও করতে পারে। যদি ভবিষ্যতে সুযোগ আসে তাহলে হবে। বিশ্ব ক্রিকেটের দিকে তাকালে দেখবেন, অনেকেরই দু-তিনটি করে ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে। তারা যদি করতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কেন পারবে না।

প্রশ্ন: আপনি কি ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছেন?

মুশফিক: বাংলাদেশে তো এটা বাদ দেওয়ার সময়। তবে এটাই সেরা সময় কখনও ভাবি না। বিশ্ব ক্রিকেটে খেয়াল করলে দেখবেন, এই সময়টা একজন ব্যাটসম্যান বা বোলারের পরিণত হওয়ার সময়। কারণ ১০ থেকে ১৫ বছর খেলার পেছনে ব্যয় করেছে। এখন ফেরত দেওয়ার সময়। আসলে প্রতিটি ইনিংসই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়গুলো আর ফিরে পাব না। একশ', দুইশ' বা তিনশ', যেটাই হোক যেন নটআউট থাকতে পারি।

প্রশ্ন: টেস্টে বড় ইনিংস খেলার পেছনে কি অনুশীলনের ভূমিকা আছে?

মুশফিক: আমি সেরা প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করি। যেটা বলেছেন, সেটার সঙ্গে আমি একমত। যখন আমি ধারাবাহিকভাবে একটা সেশন করব আউট কিংবা বিট হওয়া ছাড়া, এটা আমাকে অনেক বড় আত্মবিশ্বাস দেবে। যখন এক ঘণ্টা আউট না হয়ে, বিভিন্ন বোলারকে খেলবেন তখন দেখা যায় আপনার ব্যাটিং স্টামিনা ভিন্ন থাকে। এই ব্যাপারগুলো আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। প্র্যাকটিসে অনেক সময় আউট হয়ে গেলে পরের দিন ওদের চ্যালেঞ্জ করি, আউট করতে পারলে এটা দেব, ওটা দেব। এই জিনিসগুলো আমাকে হেল্প করে।

প্রশ্ন: টেস্ট রানে তো তামিমকে পেছনে ফেললেন?

মুশফিক: আমি এটা জানতাম না। তামিম অবশ্যই জানে। সে সব জানে। আমি সব সময়ই বলি, তামিম আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাটসম্যান। ওর সঙ্গে সব সময় আমার অন্যরকম একটা প্রতিযোগিতা থাকে। আমি ওকে অনেক অনুপ্রাণিত করি, সে আমাকে অনেক করে। আমি জানি আমার সাফল্যে সে অনেক খুশি এবং ওর সাফল্যে আমিও অনেক খুশি হই। এরকম স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা থাকলে দলের জন্য ভালো। আমি মনেপ্রাণে চাই সে যেন সর্বোচ্চ রান করে এবং এটাও চাই ওর থেকে যেন এক রান আমি বেশি করি।

প্রশ্ন: আপনি কি দেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান?

মুশফিক: উত্তর দেওয়া কঠিন। কিন্তু আপনি যেটা বললেন তার জন্য ধন্যবাদ। আমি কখনও নিজেকে সর্বকালের সেরা মনে করি না। আপনারা অনেক সময়ই বলেছেন যে, আমার টেকনিক, ধৈর্য যা অন্যদের থেকে ভালো। এটা হতে পারে কিন্তু আমার কাছে কখনও মনে হয় না। যখন নিজের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস দেখি, তখন নিজের কাছে অতটা ভালো লাগে না। তখন মনে হয় তামিমের মতো ওই ড্রাইভটা যদি করতে পারতাম বা সাকিবের মতো ওই কাট বা অন ড্রাইভ করতে পারতাম। অনেক কিছু মনে হয়। আমাকে আল্লাহ একটা জিনিস দিয়েছেন, আমার মাথাটা অন্যজনের থেকে একটু হলেও ভালো। যেটা আমি সব সময় ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানি এবং কখন কী করার চেষ্টা করতে হয়, সেটা জানি। সেগুলো থেকে আমি শিখতে পারি এবং সেগুলো করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: তামিম না আপনি শীর্ষে থাকতে চান?

মুশফিক: বাংলাদেশের ক্রিকেটে সব রেকর্ড কিন্তু ওর। ও একটা বেঞ্চ মার্ক সব সময় করেছে। একজন খেলোয়াড় ওটা করে দিলে সব সময় কথা হয় যে, কে কত তাড়াতাড়ি ওটা ভাঙতে পারে। আমরা হয়তো ওর কাছাকাছি যেতে পারি। সামনে যেন ওকে টপকাতে পারি। আমার ইচ্ছা আছে আমার বলে ওকে একবার আউট করার।