
পশ্চিমা দেশের নকশার ছোঁয়া রেখে মাঠের উত্তর প্রান্তে তৈরি ভিআইপি গ্যালারির। যেখানে ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুম, সেখানে গতকাল দুপুরে টিম ম্যানেজমেন্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে যে আলোচনাই হোক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ জয়ে সিরিজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়ারই কথা। পেশাদার ক্রিকেটের লক্ষ্যও তাই। এই ম্যাচ ঘিরে গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে যে সংবাদ সম্মেলন হলো, তাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সম্ভাব্য জয়ের চেয়েও বেশি ফোকাস ছিল মাশরাফির বিদায়, তার উইকেট না পাওয়া এবং আরও কিছু। ফাঁকফোকরে যে এক-দুটি প্রশ্ন ম্যাচ ঘিরে হলো, তার উত্তরে সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সতীর্থদের ভালো ক্রিকেট খেলে নিজেদের পছন্দের সংস্করণে জয়ে ফেরার আহ্বান জানান মাশরাফি।
সময়ের দর্পণে দেখলে আট মাস ধরে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়হীন। নিজেদের প্রিয় এবং শক্তিশালী সংস্করণে বেমানান ঠেকতে পারে এই পারফরম্যান্স। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাত মাস ধরে ৫০ ওভারের ক্রিকেটই খেলা হয়নি টাইগারদের। বিশ্বকাপ-উত্তর সময়ে গত বছর জুলাইয়ে শ্রীলংকা সফরে তামিমের নেতৃত্বে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলে হোয়াইটওয়াশ প্রাপ্তি। যে সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সাকিব আর ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি মাশরাফি ও সাইফউদ্দিনের। নতুন বছরে হোম সিরিজ দিয়ে তারা দু'জন ফিরলেও সাকিব নিষেধাজ্ঞায়। পুনর্গঠনের সিরিজে ভালো ক্রিকেট খেলার একটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে স্বাগতিকদের। আজ জয় দিয়ে শুরু করার ব্যাপারে অধিনায়ক আত্মবিশ্বাসী একমাত্র টেস্ট ম্যাচ ভালো করায়। মিরপুরে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জয়ের ধারাবাহিকতা ওয়ানডে সংস্করণেও থাকবে, আশা করা যায়। তবে নড়াইল এক্সপ্রেস চান সিলেটে অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচ সিরিজে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে, 'জিম্বাবুয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনেক ভালো দল। এই ফরম্যাটে তারা প্রচুর ক্রিকেট খেলে। অবশ্যই আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ যেতে চেষ্টা করব। আমরা কাল (আজ) ভালো শুরু করতে পারলে এর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে ভালো করতে হবে। কারণ, জিম্বাবুয়ে যে কোনো দলকে হারাতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কাল (আজ) ভালো শুরু করা।'
মাঠের পারফরম্যান্স ঠিকমতো না হওয়া, সাকিবের নিষেধাজ্ঞা, মাশরাফিকে বাদ দিয়ে খেলোয়াড়দের দাবি আদায়ের আন্দোলন একটু হলেও দূরত্ব সৃষ্টি করে থাকতে পারে। সেখান থেকে বেরিয়ে দল হিসেবে পুনর্গঠিত হওয়া অত্যাবশ্যক। আর এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে মাশরাফিকেই। ড্রেসিংরুমের দূরত্ব ঘুচিয়ে হারের বৃত্ত থেকে দলকে এক সুতোয় বাঁধার দায়িত্ব মাশরাফিকেই দিয়েছে বিসিবি। অধিনায়কও আশাবাদী পারবেন, 'সবাই পেশাদার, যার যার দায়িত্ব সবাই জানে। আর এই ক্রিকেটারদের সঙ্গেই তো এত বছর খেলেছি। সুতরাং সমস্যা হওয়ার কোনো কারণই নেই।'
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সংস্করণ অনুসারে দল গঠনের প্রয়োজন থেকে দলটাকে ঢেলে সাজিয়েছেন নির্বাচকরা। শ্রীলংকায় খেলা শেষ ওয়ানডে সিরিজের দলের সাতজনকে বাদ দিয়ে অভিজ্ঞ আর নতুনদের নেওয়া হয়েছে। পাঁচজন দলে ফিরেছেন আর দু'জন নতুন। সেদিক থেকে দেখলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ টাইগারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষারও। অধিনায়ক মাশরাফিও তাই কোচের পরিকল্পনামতো এগোতে চান, 'কোচের একটা পরিকল্পনা আছে। কোচের পরিকল্পনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কারণ, সেও নতুন এসেছে। কিছু খেলোয়াড়কে সেট করতে চাইবে, খুব স্বাভাবিক। তাকে ওই সহযোগিতাটা সবাইকেই করতে হবে।'
বিদেশে সিরিজ খেলার বিষয়টি মাথায় রেখে ঘরের মাঠেও পেস বোলারদের আধিক্য রেখে প্রথম দুই ওয়ানডের স্কোয়াড। ১৫ জনের দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ আল-আমিন হোসেনরা। সিলেটের কন্ডিশনও কিছুটা স্পোর্টিং করার পরিকল্পনা কিউরেটরের। সবুজ আউটফিল্ডের মতো পিচও সবুজ ছিল গতকাল। আজ কতটা ঘাস ছেঁটে দেওয়া হবে, তার ওপর একাদশ সাজাতে চেষ্টা করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ধরে নেওয়া যায়, মাশরাফির নেতৃত্বে কম করে হলেও তিনজন সিমার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে দলে পাওয়ায় ছয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার সাহস দেখাতে পারে। পেস বোলাররা ছন্দে থাকায় চারজনকে একাদশে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর আফিফ হোসেনের অভিষেক হলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলতে পারে একজন।
মন্তব্য করুন