ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সবাইকে মানবিক হতে হবে: মুমিনুল

সবাইকে মানবিক হতে হবে: মুমিনুল

ছবি: ফাইল

...

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০ | ০১:০৬

করোনাভাইরাসের কারণে বেশিরভাগ মানুষই কাজে যেতে পারছেন না। অনিশ্চিত সময় কাটছে সবার। এই কঠিন সময়ে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানালেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। দেশের স্বার্থে মানুষজনকে ঘরে থাকারও অনুরোধ করলেন তিনি। দেশের এই কঠিন সময় ও ক্রিকেট নিয়ে ফোনে মুমিনুল হকের সঙ্গে কথা হয় আলী সেকান্দারের

সমকাল: সময় কাটে কী করে?

মুমিনুল: অলস সময়। ফ্ল্যাটের চার দেয়ালের ভেতরে সময় থমকে গেছে। টিভি দেখি, পেপার পড়ি। এই তো।

সমকাল: ট্রেনার যে কাজগুলো দিয়েছে, তার কী হচ্ছে?

মুমিনুল: সেগুলো করছি। জিম করি। ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ করি। ঘরের ভেতরে যতটা করা সম্ভব করছি।

সমকাল: করোনাভাইরাস তো পুরো পৃথিবীকেই তো থমকে দিল?

মুমিনুল: অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। এই সময়ের মানুষের কল্পনাতেও ছিল না এমন কোনো বিপদ হতে পারে। পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। যেভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুর খবর আসছে, তাতে একটু দুশ্চিন্তা তো হয়ই। তবে কী, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন জীবন যাপন করলে ভালো। যে নির্দেশনা দেওয়া আছে সেগুলো ঠিকঠাক পালন করলে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমি সবাইকে বলব, সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখতে এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে।

সমকাল: এই বিপদ কি মানুষকে নতুন করে ভাবার বার্তা দিল?

মুমিনুল : অবশ্যই এটা একটা বার্তা। মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। আমাদের দেশ জনবহুল, মানুষজন অনেক, বাতাসে প্রচুর ধুলা। আমরা সতর্ক হলে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে অনেক রোগবালাই থেকেই রক্ষা পাব।

সমকাল: খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবায়?

মুমিনুল: অবশ্যই। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই তো খেটে খাওয়া। মধ্যবিত্ত তো এক দুই মাস ভালোভাবে পার করে দিতে পারবে। যে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন জোগাড় করে তার কী হবে? রিকশাওয়ালা, কাঠের কাজ করে, দিনমজুর, বাসাবাড়িতে কাজ করে এই মানুষগুলোর জন্য জীবন কঠিন। এই পরিস্থিতিতে বেরও হওয়া যাবে না। আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে বের হচ্ছে। তাদের কথা ভাবলে কষ্ট হয়।

সমকাল: আপনারা তো বেতনের অর্ধেকটা দিলেন?

মুমিনুল: আমরা যেটুকু দিয়েছি সেটা দিয়ে ক'জন আর সুবিধা পাবে। সামর্থ্যবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জানি না কতদিন এভাবে চলবে। ১৫ দিন, ২০ দিন বা এক মাস দুই মাসও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের সবাইকে একযোগে মানবিক হতে হবে।

সমকাল: মানুষের জন্য কী বার্তা দেবেন?

মুমিনুল: কোনো দেশের সরকারের একার পক্ষে এই বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। মানুষকেই সচেতন হতে হবে। সবাইকে ভাবতে হবে আমি নিরাপদ থাকলে পরিবার নিরাপদ। পরিবার নিরাপদ থাকলে প্রতিবেশী নিরাপদ। প্রতিবেশী নিরাপদ থাকলে মহল্লা, দেশ ও জাতি নিরাপদ। বেশি কিছু না, যে কাজগুলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে সেগুলো পালন করলেই হবে। কয়েকটা দিনই তো। ১৫ দিনের কষ্টের বিনিময়ে সারা জীবনের ভালো থাকা গেলে সেটা কেন করব না। জানি অনেকের পক্ষে এটা করা কঠিন তারপরও দেশের প্রয়োজনে এটা করতে হবে।

সমকাল: এক মাস আগেও কি ভেবেছেন এভাবে ক্রিকেট ছেড়ে ঘরবন্দি থাকবেন?

মুমিনুল: না, কখনোই ভাবিনি। যেদিন প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচ খেললাম ওইদিনই মনে হচ্ছিল।

সমকাল: এখন তো কল্পনাও করা যাচ্ছে না, কবে ক্রিকেট মাঠে ফিরবে?

মুমিনুল: কেউ বলতে পারবে না কবে খেলতে পারব। ক্রিকেটটা খুব মিস করছি। প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠে ব্যাটটা হাতে নিই। যাতে করে মনের ভেতরে একটা টান অনুভব করি। জানি না কবে খেলতে পারব।

সমকাল: যদি পাঁচ-ছয় মাস খেলতে না পারেন?

মুমিনুল: কর্মক্ষেত্রে যেতে না পারা কষ্টের। যে কাজই করেন সেটা রুটি রুজি। ভালোবেসে কাজটা করে। কাজটা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে খুব সমস্যা হবে। এটাই তো ধ্যানজ্ঞান, কাজ করতে না পারলে হতাশা চলে আসবে। এখান থেকে যে আয়-রোজগার হয় তা দিয়ে জীবন চলে। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে তো কিছু করারও থাকে না।

সমকাল: জাতীয় দল নিয়ে একটু কথা বলতে চাই, ঠিক গুছিয়ে ওঠার মুহূর্তে খেলা বন্ধ হওয়া একটা বড় ধাক্ক কি-না?

মুমিনুল: একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে তো আছি। সমস্যা হওয়ার কথা না। খেলা তো সবার জন্যই বন্ধ। আমি যতটুকু জানি, বাসায় থাকলেও জাতীয় দলের সবাই কিছু না কিছু করছে। পেশাদার ক্রিকেটাররা কোনো দিনই বসে থাকে না। ক্রিকেটের টেকনিক তো আমরা ভুলে যাব না। ফিটনেস ও মেন্টাল কাজগুলো ঠিক থাকলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আবার গুছিয়ে নিতে পারব।

সমকাল: টেস্ট দলটা কতটা গোছাতে পারলেন?

মুমিনুল: মোটামুটি, একটা জায়গায় এসেছে। পুরোটাই তো পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে। একটা ম্যাচের ফল দেখে কিছু বলা কঠিন। বড় দলের বিপক্ষে যখন ভালো খেলতে শুরু করব তখন বলতে পারব গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। সেদিক থেকে বলব, কিছুটা গোছানো হয়েছে, পুরোপুরি গোছগাছ করতে আর একটু সময় লাগবে।

সমকাল: একটু বলবেন কোন কোন জায়গায় আরও গোছানোর বাকি?

মুমিনুল: আমরা দল হিসেবে এখন ৬০ ভাগ হয়তো খেলতে পারছি। এটাকে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। আমার কাছে যেটা মনে হয় আগে আমরা বেশিরভাগ আত্মকেন্দ্রিক ছিলাম। ওই জায়গায় কিছুটা উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। আমি চাই দলের ভেতরে আত্মকেন্দ্রিক বলে কিছু থাকবে না। সবাই দলের জন্য খেলবে। কারণ জাতীয় দলে নেওয়াই হয় দলের জন্য খেলতে। এই উন্নতির একটা চলমান প্রক্রিয়া যেখানে একজন আরেকজনকে সহযোগিতা না করলে হবে না। ড্রেসিংরুমের চলাফেরা, কথাবার্তা, বাইরের চলাফেরা এগুলো নিয়ে অনেক কথা বলেছি। এই জায়গাগুলো পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেলে মাঠের পারফরম্যান্সও ভালো হবে।

সমকাল: অধিনায়কের জড়তা কেটেছে?

মুমিনুল: পুরোপুরি কাটেনি। আরেকটু সময় লাগবে। দু-তিন মাস খেলা না হলে কিছুটা পিছিয়ে যাব। ছোটবেলায় তো অধিনায়কত্ব করিনি। হঠাৎ করে নেতৃত্ব পাওয়ায় নিজেকে তৈরি করতে হচ্ছে। তবে এখন কমান্ড করতে পারি।

সমকাল: মাঠের বাইরে সতীর্থদের কতটা উজ্জীবিত করেন?

মুমিনুল: পাকিস্তান সিরিজের পর থেকে চেষ্টা করছিলাম সবার সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে। বিসিএল চলার সময় একজন আরেকজনকে সাহায্য করছিল। কিছু রুটিন ওয়ার্ক আছে টেস্ট দলের। সেগুলো করছে কি করছে না, তার খোঁজখবর নিই। যখন কেউ ভালো করে তাকে সবাই বাহ্বা দেই। একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। করোনার কারণে গত কয়েক দিন কারও সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ হয়নি। ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য, আমি আবার নিয়মিত যোগাযোগ রাখব সবার সঙ্গে। সিনিয়রদের কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। জুনিয়রদের জিনিসগুলো মনে করিয়ে দিতে হয়। ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা আমার প্রথম ছিল, সে কারণে তেমন কিছু বলতে পারিনি। পাকিস্তানে টেস্ট খেলার সময়ও পর্যবেক্ষণ করেছি। এখন সবাইকে বলতে পারি। নির্দেশনা দিতে পারি।

সমকাল: দল গোছানো নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা হয়?

মুমিনুল: এই ব্যাপারকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। কোচের সঙ্গে আমার নিয়মিত আলাপ হয়। একটা দল করতে গেলে সব জিনিস মাথায় রাখতে হয়। কোন বোলার নিয়মিত খেলবে, কোন বোলারকে হাতে রাখবেন, কোন বোলার ভবিষ্যতে সার্ভিস দেবে- তার একটা তালিকা আছে। একটা ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। সেই ইউনিট থেকেই টেস্ট দল গোছানো হবে।

সমকাল: এখন যারা খেলছে তারা সবাই কি টেস্ট ক্রিকেট পছন্দ করেন?

মুমিনুল: এখন যারা আছেন তারা সবাই টেস্ট ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে নিবেদিত। যাদের ভেতরে দেখব টেস্ট ম্যাচ খেলায় বিন্দুমাত্র অনীহা আছে তাদের নেওয়া হবে না। খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাসতে হাসতে কথা বলে জানতে চাই, কার টেস্ট খেলার ইচ্ছে আছে, কার নাই। যে বলে টেস্ট খেলা কষ্ট তাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি। আমরা চাই যারা এই সংস্করণে খেলতে পছন্দ করে, দেশ ও দলের ভালোর জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত, তারাই হবে টেস্ট দলের সদস্য। বর্তমানে যারা টেস্ট স্কোয়াডে আছে সবাই পাঁচ দিনের ক্রিকেট নিয়ে ভাবে, এই সংস্করণে খেলতে চায়।

সমকাল: ম্যাচ ফি বৃদ্ধি এবং টেস্ট ক্রিকেটারদের চুক্তির অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো সুফল পাচ্ছেন?

মুমিনুল: এই উদ্যোগ নেওয়ায় ক্রিকেট বোর্ডকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। ম্যাচ ফি ছয় লাখ টাকা করায় টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতি হবে। কারণ দিন শেষে সবাই তো টাকাই চায়। অনেকেই আগে টেস্ট খেলতে চাইত না। আগে যাদের ভেতরে অনীহা দেখেছি তারাই এখন টেস্ট খেলতে মরিয়া। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে গেছে। কারণ দুটো টেস্ট খেললে ১২ লাখ টাকা পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পারফর্ম করে দলে জায়গা পাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। আগে যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে চাইত না এখন তারা নিজে থেকেই খেলে। কারণ হলো টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া।

আরও পড়ুন

×