দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ২৫ জনের মতো কোচ আছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অধীনে। তাদের প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেয় বাফুফে। প্রধান কোচ জেমি ডে, টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডিরেক্টর স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসসহ আছেন আরও কয়েকজন বিদেশি। এ ছাড়া বাফুফের চুক্তিভিত্তিক ২০ জনের মতো দেশি কোচ আছেন। করোনাভাইরাসের কারণে খেলাধুলা বন্ধ থাকায় এসব কোচ এখন বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন। বিদেশি কোচরা আছেন নিজ নিজ দেশে। কিন্তু কাজ না থাকলেও তাদের দিতে হচ্ছে মাসিক বেতন।

দেশি-বিদেশি কোচ মিলিয়ে প্রতি মাসে বাফুফের খরচ হয় ৫০ হাজার ইউএস ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪২ লাখ ৫৫ হাজার)। এখন কোনো কাজ ছাড়াই এই টাকা দিতে হচ্ছে কোচদের। যেটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য বড় ক্ষতি। করোনার থাবায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও অনুষ্ঠেয় চুক্তিগুলোও শঙ্কার মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছে বাফুফে।

স্পন্সর ছাড়া শুরু হয়েছিল এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। পৃষ্ঠপোষক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তাও শেষ করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সেই চুক্তি ঝুলে গেছে। একাধিক সূত্রের খবর, বিপিএলে প্রায় তিন কোটি টাকার স্পন্সর পেয়েছিল ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এই অর্থ দিয়ে দলগুলোর অংশগ্রহণ ফিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাতে খরচ করতে পারত বাফুফে।

কিন্তু করোনার থাবায় সব এলোমেলো হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বাফুফে পড়তে যাচ্ছে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে। 'আসলে ক্ষতির সম্মুখীন বলতে আমাদের এখানে কোচ আছেন, তাদের তো বেতন দিতে হচ্ছে। যদিও করোনার কারণে কোনো খেলা নেই। কিন্তু তারা যেহেতু চুক্তিভিত্তিক কোচ, তাদের পেছনে আমাদের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশি-বিদেশি আরও অনেক চুক্তি ঝুলে গেছে। প্রিমিয়ার লিগের স্পন্সরও চূড়ান্ত করতে পারিনি। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ভালোই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে'- বলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ।

এই অবস্থায় বাফুফে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ফিফা) কাছে সাহায্য চাইবে বলে জানান তিনি, 'দেশি-বিদেশি কোচদের বেতন দেওয়ার দায়িত্ব তো আমাদের। এটা ফিফার না। তার পরও আমরা দেখব যে ফিফার এ রকম কোনো ফান্ড আছে কিনা। যদি থাকে আমরা অবশ্যই সাহায্যের জন্য ফিফার কাছে আবেদন করব। এ ছাড়া করার তো  কিছু নেই।'

১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ জেমি ডের চুক্তির মেয়াদ। কভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচগুলো স্থগিত হওয়ার পর দেশে চলে গিয়েছেন এই ইংলিশ। কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ডলার পাঠাতে হচ্ছে বাফুফেকে। করোনার যে অবস্থা তাতে করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক খেলা শুরু নিয়ে আছে শঙ্কা। এই অবস্থায় জেমি ডের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আছে উভয়সংকটে আছে বাফুফে। নতুন করে চুক্তি নবায়ন করলে খেলা না থাকলেও তাকে মাসিক বেতন দিতে হবে। আবার চুক্তি নবায়ন না করা হলে পুনরায় তাকে পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে আছে সংশয়। তাই দুই-তিন দিনের মধ্যে জেমি ডের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় ফেডারেশন।

এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আছে বাফুফের নির্বাচন। অবস্থা ভালো হলে তবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগ পর্যন্ত বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিই দায়িত্ব চালিয়ে যাবে। তবে ফুটবলপাড়ায় গুঞ্জন উঠেছে, করোনার কারণে পেছানো নির্বাচন হবে না। এসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন সোহাগ, 'রিউমার ইজ রিউমার। অবস্থাটা ভালো হোক, তখনই নির্বাচন নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।'

বাফুফের মতো আর্থিক ক্ষতির মুখে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোও। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না বিদেশি ফুটবলাররা। তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখতে হচ্ছে ক্লাবগুলোকে। খেলা না থাকলেও বসে বসে বেতন নিচ্ছেন খেলোয়াড়রা। এই অবস্থায় আর্থিকভাবে ক্ষতিতে পড়া ক্লাবগুলোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফেডারেশন। এই প্রসঙ্গে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা ক্লাবগুলোকে বলেছি বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে। এই ছাড়া করার কিছু নেই।'