৯ মে থেকে বুন্দেসলিগা পুনরারম্ভের পরিকল্পনা নিয়েছেন জার্মান ফুটবল কর্তারা। প্রথম দিনেই পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে থাকা লাইপজিগের মুখোমুখি হবে আরেক শিরোপাপ্রত্যাশী বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। করোনাভাইরাসের এই মহাসংকটকালে ফুটবলকে কীভাবে নিরাপদে মাঠে ফেরানো যায়, সে লক্ষ্যে একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ফুটবলাররা কীভাবে অনুশীলন করবেন, কীভাবে ম্যাচ খেলবেন, কেউ পজিটিভ হয়ে গেলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেছেন তারা। ফুটবলারদের ব্যক্তিগত জীবনাচারও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তারা। খেলোয়াড়রা হোটেল কিংবা বাড়িতে যেখানেই অবস্থান করেন না কেন, সঙ্গীর মধ্যে যদি ভাইরাসের কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে যৌন সম্পর্ক তো দূরের বিষয়, চুমুও খেতে পারবেন না। ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩০০ মানুষ থাকতে পারবেন। এই লোকসংখ্যার মধ্যে থাকবেন চারজন পুলিশ, ১০ জন সাংবাদিক, চারজন বলবয়, আট মাঠকর্মী এবং ৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী। জার্মানির এই মডেল সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশও এটি অনুসরণ করতে পারে। লিখেছেন নাজমুল হক নোবেল

কীভাবে খেলবেন ফুটবলাররা

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মাঠে অবশ্যই দলগুলো কয়েকটি বাসে করে আসবে। আর সবার জন্য মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক। বাস মাঠে প্রবেশের আগে অবশ্যই ভালোভাবে জীবাণুনাশক দিয়ে সংক্রমণরোধী করতে হবে। প্রতিটি দল মাঠে আসবে ও যাবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, একসঙ্গে দল বেঁধে যাতায়াত চলবে না। আর হোম ম্যাচে স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা তাদের নিজস্ব গাড়িতে একা আসবেন। মাঠে প্রবেশের আগে থার্মোমিটার দিয়ে খেলোয়াড়দের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। মাঠের প্রতিটি রুম জীবাণুনাশক দিয়ে সংক্রমণরোধী করতে হবে এবং প্রতিটি রুমের দরজা সব সময় খোলা থাকবে। শুরুর একাদশ ও অতিরিক্ত খেলোয়াড়রা আলাদা আলাদাভাবে ওয়ার্মআপ করবেন। আর ড্রেসিংরুমে অবস্থানের সময় প্রত্যেকের মাঝে অবশ্যই দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং খেলোয়াড়দের একা একা গোসল করতে হবে।

প্রতিটি দলের শেফ আগেভাগে খাবার তৈরি করে মাঠে পৌঁছে দেবেন এবং খেলোয়াড়রা সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত পানির বোতল ব্যবহার করবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মাঠে ব্যক্তিগত আলোচনা এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সঙ্গে কানে কানে ফিসফিস করে কথা বলা চলবে না। উভয় দলের ফুটবলাররা একই সময়ে টানেলে থাকতে পারবেন না। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কেউ পাহারায়ও থাকবেন না। কোনো দলীয় ছবি তোলা হবে না, হ্যান্ডশেকও করা যাবে না। মাঠে দুই দল একসঙ্গে দাঁড়াতেও পারবে না। এমনকি মাঠে কোনো ধরনের মাস্কটও থাকবে না। ডাগআউটে অতিরিক্ত খেলোয়াড়রা দুই বা তিন সিট ফাঁকা রেখে বসবেন। ম্যাচের পর সাক্ষাৎকার যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করা হবে। আর মিক্সড জোনে কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না।

বাড়িতে কীভাবে থাকবেন

খেলোয়াড়দের যতটা সম্ভব বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে অবস্থানকালীন দর্শনার্থীদের সঙ্গে কম দেখা করতেও বলা হয়েছে। আর কোনোভাবেই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া যাবে না। বাইরে গেলেও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা যাবে না এবং অবশ্যই দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। পরিবারের সব সদস্যের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের অতীত রেকর্ডও সংরক্ষণ করতে হবে। আর সঙ্গীর যদি কোনো ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে যৌন সম্পর্ক তো দূরের বিষয়, চুমুও খাওয়া যাবে না। কারও সঙ্গেই টুথব্রাশ, তোয়ালে, থালা-বাসন, পানীয় এবং বিছানার চাদর শেয়ার করা যাবে না। বাড়িতে থাকার সময় খেলোয়াড়দের মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাড়িতে অবশ্যই নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। খেলোয়াড়রা কাশি ও নাক পরিস্কারের সময় অবশ্যই দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন। এবং অবশ্যই মুখোমুখি হয়ে এসব কাজ তারা করবেন না। পেছন ফিরে কাশি দেবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রুমাল বা বাহুতে মুখ মুছে ফেলবেন।

অনুশীলনের নীতিমালা

প্রথম ট্রেনিং সেশনের আগেই পুরো দলের ভাইরাস টেস্ট করা হবে। মৌসুম শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সপ্তাহে দু'বার করে টেস্ট করা হবে। এর মধ্যে ম্যাচ শুরুর আগে অবশ্যই টেস্ট করতে হবে। ফুটবলাররা অনুশীলন গ্রাউন্ডে প্রবেশের আগেই পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণু দূরীকরণ কর্মকর্তা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ নেই। অনুশীলনে একে অপরের কাছাকাছি যাওয়াটা যতটা সম্ভব কমানো হবে এবং টিম মিটিং হবে একটি বড় কামরায়। আর খেলোয়াড়দের মধ্যে অবশ্যই দুই মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। রান্নাঘরে খাওয়া চলবে না, সেখান থেকে খাবার নিয়ে দূরে চলে যেতে হবে। খেলোয়াড়দের বাড়িতে গোসল ও কাপড় বদলানোর জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং অবশ্যই নিজেদের ব্যবহূত কাপড়চোপড় ও বুট তাদের নিজেদেরই ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

হোটেলে অবস্থানের নিয়মাবলি

হোটেলে প্রতিটি দলের সংরক্ষিত প্রবেশপথ ও লিফট থাকবে। হোটেলের অন্য দর্শনার্থীদের সংশ্রব এড়িয়ে চলতে হবে। দেখা হয়ে গেলেও কমপক্ষে দুই মিটার দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। খেলোয়াড়রা কনুই দিয়ে লিফটের বোতাম চাপবেন। খেলোয়াড়রা হোটেলের বারে যেতে পারবেন না। রুম সার্ভিসও তাদের জন্য নিষিদ্ধ। রুমের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। আর দল হোটেলে অবস্থানরত অবস্থায় রুম পরিচ্ছন্নতার কাজ করা যাবে না।

যদি কেউ পজিটিভ হয়

পরীক্ষায় যদি কেউ পজিটিভ হয়, তাহলে পুরো দলকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কেবল সংক্রমিত খেলায়াড় লক্ষণ প্রকাশের পরের ১৪ দিনের জন্য আইসোলেশনে চলে যাবেন। পজিটিভ হওয়া খেলোয়াড় অবশ্যই কঠোরভাবে আইসোলেশনের সব নিয়ম মেনে চলবেন। ক্লাবের চিকিৎসক তার দেখাশোনা করবেন এবং সংক্রমিত খেলোয়াড়ের সব তথ্য লিগ কমিটির কাছে নিয়মিত সরবরাহ করবেন। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না। সুস্থ হওয়ার পর কোনো খেলোয়াড়ের মাঠে ফেরাটা ক্লাবের ওপর নির্ভরশীল।