জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষ করেই দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে গেছেন রাসেল ডমিঙ্গো। দেশে পৌঁছে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন চলায় এখনও ঘরবন্দি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ। চার দেয়ালের ভেতরে থাকলেও দেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন। যোগাযোগ রেখেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার এবং কোচিং সহকর্মীদের সঙ্গেও। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোনে রাসেল জানালেন, ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে আর ভালো লাগছে না তার। ভালো সময়ের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন। টাইগার প্রধান কোচের সঙ্গে সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন আলী সেকান্দার

সমকাল : দ. আফ্রিকায় করোনোভাইরাসের চিত্র কেমন?

রাসেল ডমিঙ্গো : জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৩৫০ জন। সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুহার কম। লকডাউন চলছে পাঁচ সপ্তাহ হলো। আরও কয়েক সপ্তাহ হয়তো ঘরে থাকতে হবে আমাদের। যদিও সীমিত পরিসরে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইচ্ছে করলে এখন বাইরে যাওয়া যায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের আরও কিছুদিন ঘরে থাকা উচিত।

সমকাল : করোনাভাইরাসের টেস্ট প্রক্রিয়া ঠিক আছে বলে মনে করেন?

রাসেল ডমিঙ্গো : আমার মনে হয় ঠিক আছে। উন্নত দেশগুলো যেভাবে টেস্ট করে, এখানেও সেটা অনুসরণ করা হচ্ছে। ৩ লক্ষ ৬৯ হাজারের মতো পরীক্ষা হয়েছে। প্রায় ছয় কোটি মানুষের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা।

সমকাল : লকডাউনের ফলে বহু মানুষ নিশ্চয়ই সমস্যায় পড়েছে। সরকার থেকে কি খেটে খাওয়া মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে?
রাসেল ডমিঙ্গো : কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়েছে মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় গরিব মানুষ অনেক। তাদের জন্য খুব খারাপ সময় এটা। পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা সব মহল থেকেই করা হচ্ছে। সরকার থেকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি বাড়ি। আমি বলব, সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।

সমকাল : বাংলাদেশের খোঁজ পান?

রাসেল ডমিঙ্গো : নিয়মিতই পাচ্ছি। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। কারও কারও সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। বেশিরভাগের সঙ্গে যোগাযোগ হয় আমাদের জাতীয় দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। কিছু তথ্য সেখান থেকে পাই। মিডিয়ার মাধ্যমেও খবর পাচ্ছি। ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই। যত দ্রুত ক্রিকেটে ফিরতে পারব, ততই ভালো।

সমকাল : ক্রিকেট কতটা মিস করছেন?

রাসেল ডমিঙ্গো :  নিঃসন্দেহে আমি ক্রিকেট মিস করছি। ছয় সপ্তাহ ধরে প্র্যাকটিস বন্ধ। আগামী সপ্তাহে ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল। সেটা হচ্ছে না। ক্রিকেট কোচ হিসেবে অবশ্যই দলকে মিস করছি। কত কিছু করার ছিল, দলটাকে গুছিয়ে এনেছিলাম। সামনে হয়তো নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। কিন্তু কবে সেই দিন আসবে, জানা নেই। একটা সুখবর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

সমকাল : করোনা-উত্তর ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়াও তো নতুন চ্যালেঞ্জ?
রাসেল ডমিঙ্গো : নতুন পরিস্থিতিতে অবশ্যই ক্রিকেটে একটা বড় পরিবর্তন আসবে। ছেলেদের সঙ্গে বসে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পথগুলো খুঁজে বের করতে হবে। দলের ভেতরে একটা নিয়মশৃঙ্খলা রাখতে হবে, যাতে করে ভাইরাস ছড়াতে না পারে। খেলায় যে পরিবর্তনগুলো আসবে, সেখানে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিপক্ষকে সম্ভাব্য সব দিক থেকে মোকাবিলার পথ খুঁজতে হবে। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে বোলাররা নতুন পরিস্থিতিতে কীভাবে মানিয়ে নেবে, সে দিকটা দেখতে হবে।

সমকাল : দর্শকহীন ক্রিকেটের কথা কল্পনা করতে পারেন?

রাসেল ডমিঙ্গো : দর্শক ছাড়া খেলা প্রাণহীন। কিছু করারও নেই। এমন একটা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, যেখানে খেলা শুরু হলে দর্শক ছাড়াই করতে হতে পারে। দর্শক টিভিতে খেলা দেখবে আর মিডিয়ার মাধ্যমে খবর নেবে। যদিও এটা আদর্শ নয়। জ্যামপ্যাক স্টেডিয়ামে খেলার মজাই আলাদা। খেলোয়াড়রা সেটাই পছন্দ করে। উপমহাদেশে তো ক্রিকেটের অন্যরকম ক্রেজ। ক্রিকেট পাগল দর্শক। সেদিক থেকে দেখলে দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা কষ্টের। বাস্তবতা মেনে হয়তো কয়েক মাস দর্শক ছাড়া খেলতে হতে পারে।

সমকাল : লালা, ঘাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আসছে। বল শাইন করার ব্যাপারটা ভেবে দেখেছেন?

রাসেল ডমিঙ্গো : বল শাইন একটা নতুন সমস্যা দেখা দেবে। আমরা এটা নিয়ে কথা বলছি। আইসিসি বিকল্প খুঁজছে। খেলার স্বার্থে একটা না একটা পথ তারা খুঁজে বের করবে। বল রিভার্স সুইং করাতে যে জিনিসগুলো করা যাবে, সেটা করা হবে। আমরা অনেক কথা বলেছি। কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই বিকল্প সম্পর্কে আমরা জানতে পারব।

সমকাল : ক্রিকেটে সামাজিক দূরত্ব মানা কি সম্ভব?

রাসেল ডমিঙ্গো : সামাজিক দূরত্ব রাখা ক্রিকেট দলের পক্ষে কঠিন। আমাদের ট্রাভেল করতে হয়। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে হবে। একই জায়গায় প্র্যাকটিস থাকে। একটাই চেঞ্জ রুম। সেক্ষেত্রে ছেলেদের সতর্কতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই জায়গাগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি সচেতন হতে হবে সবাইকে। এই ইস্যুতেও ছেলেদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। তারা কোন পরিস্থিতিতে আছে। সবার মানসিক অবস্থা কেমন। অবশ্যই খেলা শুরু হলে কিছু নিয়মশৃঙ্খলা বেঁধে দেওয়া থাকবে। আশা করি সমস্যা হবে না।