- খেলা
- টি-২০ ক্রিকেট শুরুর গল্প
টি-২০ ক্রিকেট শুরুর গল্প
ছবি: ফাইল
অনেকটা ঠেকায় পড়ে টি-২০ সংস্করণের ভাবনা শুরু। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভারতের প্যাড-গ্লাভস পরে ব্যাট ধরতে শেখা। কিন্তু ক্রিকেটকে বৈশ্বিক করেছে ওয়ানডে সংস্করণ। আশির দশকে ওয়ানডে ক্রিকেট ছিল তুমুল জনপ্রিয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে শুরু করেছে। নব্বয়ের দশকেও তা জনপ্রিয়তা হারায়নি। কিন্তু পরের দশকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটকেও ‘সময় নষ্ট’ ভাবতে শুরু করেন দর্শকরা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভালোই চলছিল। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট আর দর্শক টানতে পারছিল না। বিশেষ করে ইংল্যান্ডে, যেখানে কি-না কাউন্টি ক্রিকেট ছিল বেশ দর্শক প্রিয়। ফলত, ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় বেনসন এন্ড হেজেস কাপও মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। টিভি স্বত্ত্ব থেকে আয় হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। বিজ্ঞাপন পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে।
ইংল্যান্ডকে তাই ক্রিকেটের দর্শক ধরে রাখতে, অর্থ রোজগার করতে কিছু একটা করতেই হতো। ইসিবির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ স্টুয়ার্ট রবার্টসন তাই ১৯৯৮ সালে ২০ ওভারের ক্রিকেটের ফর্মুলা বের করেন। কিন্তু এমসিসি হেসে উড়িয়ে দেয় সেই প্রস্তাব। বিজ্ঞাপন সংস্থা সাড়া দিল না। কাউন্টি দলগুলোও ভ্রু কোঁচকালো, ‘২০ ওভারের ক্রিকেট’? সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট তাই সে বছর আলোর মুখ দেখল না।
আবার ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ৫০ ওভারের ক্রিকেটও নতুন আলো এনে দিতে পারল না। দর্শক কমতে শুরু করল আরও বেশি। নেমে আসলো ১৭ শতাংশে। দর্শক খেলা না দেখায় বিজ্ঞাপন সংস্থাও অর্থ লগ্নি করার মানে খুঁজে পেল না। ইসিসির পিঠ ঠেকে গেল দেয়ালে। তারা আবার ২০ ওভারের ক্রিকেট মাঠে নামানোর চিন্তা করল। তবে এবার কিছুটা আঁটঘাট বেধেই নামল তারা। করে নিল বাজার সমীক্ষা। তার জন্য অগ্রিম ঢালল দুই থেকে আড়াই লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড। কিন্তু ফল খুব একটা ভালো আসল না।
দুই তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা সোজা জানিয়ে দিলেন, তাদের নতুন সংস্করণে কোন আগ্রহ নেই। বাকি ক্রিকেটমোদিদের অর্ধেক জানাল, যদি সন্ধ্যায় হয় তবে তারা সময় করে দেখতে পারে। ওই দর্শকদেরই লক্ষ্য হিসেবে ধরল ইসিবি। ১৮৭৭ সালে টেস্ট, ১৯৭১ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের পর ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় হলো ২০ ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে। ইসিবি যার নাম দিল টি-২০।
তবে এই সংস্করণকে দেওয়া হলো না তেমন গুরুত্ব। ক্রিকেটাররা মজা করতে মাঠে আসতেন। মাঠে চেয়ারলেডারের ব্যবস্থা। দর্শকদের সঙ্গে অ্যালকোহল, ভালো খাবার-দাবার। মাঠে উচ্চশব্দে গান সব মিলিয়ে একটা পিকনিক-পিকনিক ভাব থাকত। আয়োজকরা দেখলেন দেদারছে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং ক্রিকেটার ও দর্শকদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাবটাকে পুঁজি করতে লাগলেন তারা। নিজেরাও টি-২০ ক্রিকেটকে গুরুত্বহীন সংস্করণ এমন ভাব প্রকাশ করতে লাগলেন। দাঁড়িয়ে গেল ইংল্যান্ডের টি-২০ লিগ।
তার প্রায় দু’বছর পরে ২০০৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ মাঠে গড়ালেও থেকে গেল সেই গা-ছাড়া ভাব। মজা করে ১৯৮০’র দিককার প্রচলিত জার্সি পরে খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। নিশ্চিত জয় দেখে অজি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা আন্ডারআর্ম বল করার চেষ্টা করেন। আম্পায়ার বিলিবার্ডেন তাকে লাল কার্ড দেখান।
এরপর পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারতেকে টি-২০ খেলার প্রস্তাব দেওয়া হলো। ভারত নাকচ করে দিল প্রস্তাব। তাদের মতে, এটা ৫০ ওভারের ক্রিকেটের আকাঙ্খা নষ্ট করে দেবে। অথচ সেই ভারতই টি-২০ ক্রিকেটকে সবেচেয় জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রেখেছে। সেটা ২০০৭ সালে। ভারত ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিদায় নিল এবং একই বছর এমএস ধোনীর নেতৃত্বে ভারতের টি-২০ বিশ্বকাপ জয় টি-টোয়েন্টিকে জনপ্রিয় করল।
দর্শক প্রিয়তার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট সংস্করণ এখন টি-২০। বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগে এর চিন্তা মাথায় আসা রর্বাটসনের, ‘ইসিবির খুব কাছে থেকে এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। কখনো চিন্তাই করিনি এর ভবিষ্যত কী, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তখন শুধু মাঠে দর্শক কী করে আনা যায় এই ছিল চিন্তা। যদিও তা থেকে আমার পকেট ভারী হয়নি। ভালো লাগা হলো, এখন টি-২০ কিভাবে আসলো এটা নিয়ে যখন আলাপ হলে আমার নাম উচ্চারণও হয়।’
মন্তব্য করুন