টেস্টের ম্যাচ ফি যেখানে ছয় লাখ টাকা সেখানে এনসিএলের টায়ার ওয়ানের ম্যাচ ফি ৬০ হাজার টাকা। জাতীয় দলের 'এ' প্লাস ক্যাটাগরির একজন ক্রিকেটারের বেতন প্রায় ছয় লাখ টাকা, সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারকে দেওয়া হয় ২৮ হাজার টাকা

ফেডারেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ধনী, খেলোয়াড়দের মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা বেশি। ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটারদের কথা বলা হচ্ছে। এই ধনী ফেডারেশনের মধ্যেও আছে চরম বৈষম্য। বৈষম্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে গত বছর আন্দোলনেও নেমেছিলেন ক্রিকেটাররা। এরপরও দেশের অধিকাংশ ক্রিকেটারের ভাগ্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। এই বৈষম্য কমিয়ে আনতেই উদ্যোগী হয়েছে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

দেশের ক্রিকেটের টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনে সেটা অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন কোয়াব সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্য দেখতে পাচ্ছেন তিনি। দেবব্রত জানান, কোয়াবের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এই বৈষম্য কমিয়ে আনা।

সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিক থেকে বিশ্বের সব দেশেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি তিন দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দেওয়া হয়েছে মর্যাদার আসন। দেবব্রত পাল মনে করেন, বাংলাদেশ জাতীয় দল আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য। কোয়াব নেতার মতে, 'আমাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যবধান কমানো। অর্থনৈতিক, বেতন কাঠামো, সুযোগ-সুবিধা এবং মর্যাদার দিক থেকে মর্যাদা কাছাকাছি হতে হবে। এই ব্যবধান যতদিন না কমবে ততদিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব না। কোয়াবের জন্য এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান কমানো।'

টেস্টের ম্যাচ ফি যেখানে ছয় লাখ টাকা সেখানে এনসিএলের টায়ার ওয়ানের ম্যাচ ফি ৬০ হাজার টাকা। প্রথম শ্রেণির 'এ' ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন ২৯ হাজার টাকার মতো। ৯১ জন ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে চুক্তিতে। ক্রিকেটারদের আন্দোলনে ৫০ শতাংশ বেতন বাড়াতে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। বিসিবির প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়ানো। সে প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়িত হয়নি। দেবব্রত পালের মতে, 'জাতীয় দলের এ প্লাস ক্যাটাগরির একজন ক্রিকেটারের বেতন ছয় লাখ টাকা, সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারকে দেওয়া হয় ২৮ হাজার টাকা। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা যেমন আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি, অবকাঠামোগত সুবিধা পাচ্ছে, কোচিং স্টাফ, গ্রাউন্ডস, বল, অবকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদেরও এই সুযোগ-সুবিধাগুলো দিতে হবে। আমরা বলছি না হুবহু সমান করা হোক। সেটা ১৯-২০ বা ১৮-২০ হতে হবে। ৫-২০ হতে পারে না।

যখন এই জায়গাগুলোতে উন্নতি হবে তখন দেখবেন জাতীয় দলের জন্য ব্যাকআপ থাকছে ৮০ জন ক্রিকেটার। এটা করা গেলে ক্রিকেটাররাই লাভবান হবে। জাতীয় দলে যে খেলছে সে যদি এক বছর পারফম্যান্স না করে তাহলে চলে আসবে ছয় লাখ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে। এটা হতে পারে না। আমরা ম্যাচ ফি একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন হবে আশা করি। বোর্ডের সঙ্গে এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।' প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দাবির মুখে এটা একটা চাপ হয়ে এসেছে কোয়াবের জন্য। কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আন্দোলন করেছিলেন মূলত বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য। সম্প্রতি সেটা আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন তারা। ক্রিকেটাররা এখন সরাসরি আন্দোলন কর্মসূচি না দিয়ে কোয়াবের মাধ্যমে স্বার্থ উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক আকরাম খানও বৈষম্য কমার পক্ষে, 'আমরা একটা চেষ্টা করছি। পাপন (নাজমুল হাসান) ভাই সব সময় চান ক্রিকেটাররা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাক। ম্যাচ ফি বেড়েছে, সমানে হয়তো বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন আসবে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও হয়তো বাড়বে। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা থাকলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধার দিকগুলো আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করা যেত। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করি পরিস্থিতি ভালো হলে পাপন ভাই কিছু কাজ করবেন।'