চার মাস ধরে ঘরবন্দি ফুটবলাররা। করোনায় মার্চে স্থগিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাফুফে। সরকারের অনুমতির পর ইউরোপের চারটি দেশ- জার্মানি, স্পেন, ইংল্যান্ড ও ইতালিতে পুনরায় শুরু হয় ঘরোয়া লিগ। কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা ক্লাবগুলোর দাবির মুখে মৌসুম বাতিল করেন। চাইলে আরেকটু সময় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন বলে মনে করেন ফুটবলাররা।

ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার লিগ বাতিলের সিদ্ধান্তটি বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ভালোভাবে নেননি। তাদের না নেওয়ার পেছনে বড় কারণ ক্লাবগুলোর কাছে পাওনা বকেয়া নিয়ে কোনো সুরাহা না হওয়া। লিগ বাতিল করলেও সঠিক দিকনির্দেশনা পাননি খেলোয়াড়রা। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফুটবলার তাদের হতাশার কথা বলেছেন। ফুটবল লিগ শুরু এবং ক্লাবগুলোর কাছে পাওনা বকেয়ার সমাধান নিয়ে এর আগেও দু'দফায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সিনিয়র খেলোয়াড়রা।

কিন্তু ফেডারেশন সভাপতির কাছ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় শনিবার পেশাদার লিগের মোট ২৭ ফুটবলার যান বাফুফে কর্তাদের কাছে। সেখানে শুধু আলোচনায়ই নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে এসেছেন খেলোয়াড়রা। এই সাত দিনের মধ্যে যদি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন বাফুফে সভাপতি, তাহলে খেলোয়াড়রা সবাই মিলে পরবর্তী করণীয় নিয়ে বসবেন।

কভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশের সব খেলাধুলাই বন্ধ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও চাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইনডোর গেমসগুলো চালু করতে। সেটা করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। কিন্তু ফুটবলে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয়। যে কারণে সবকিছু ভেবেই ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা লিগ বাতিলের পথে হেঁটেছে। তবে খেলোয়াড়রা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনছেন বর্তমানে চলা ইউরোপিয়ান লিগগুলো।

তাদের কথা, দর্শক ছাড়াও লিগ শুরু করা যেত। এখন খেলা বন্ধ, অর্থের অভাবে ভিন্ন পেশার দিকে চলে যাচ্ছেন ফুটবলাররা। যেটা মানতে পারছেন না সিনিয়র খেলোয়াড়রা। এভাবে চলতে থাকলে একসময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরও পড়তে হবে অর্থকষ্টে। পরিবার নিয়ে পড়ে যাবেন মহাবিপদে। যেহেতু ফুটবলারদের আয়ের বেশিরভাগ অংশই আসে লিগে খেলে, তাই লিগটা দ্রুত শুরুর তাগিদ তাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ফুটবলার বলেন, 'আমাদের তো একটা পরিবার আছে। আমরা বুঝি ক্লাব চলে স্পন্সর ও ডোনেশনে। কিন্তু টাকা না পেলে আমরা কীভাবে চলব। আপনি দেখেন, আমরা বি লিগের ফুটবলাররা এখনও হয়তো চলতে পারতেছি। কিন্তু নিচের দিকের লিগে খেলা ফুটবলাররা আছে দুরবস্থায়। এখন আমাদের পাওনা টাকা আমরা চাচ্ছি। ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বললেও তারা টালবাহানা করছে। সেই জন্যই তো আমরা বাফুফের কর্তাদের কাছে গিয়েছি। তারাই আমাদের শেষ ভরসা। শেষ পর্যন্ত বাফুফে যদি আমাদের বকেয়া পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না করতে পারে, তাহলে আমাদের অন্য কিছু করতেই হবে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিরুপায় হয়েই তো উনাদের কাছে এসেছি। সামনে এমন দিন আসবে যে, আমাদেরও পড়তে হবে অর্থ সংকটে।'