সোনারগাঁও হোটেলের উল্টো দিকের কফিশপটা আজও খোলা হয়, তামিমরাও সোনারগাঁও হোটেলে থাকেন। শুধু যাওয়া হয় না সেখানে। ওই কফিশপে আড্ডা দেওয়ার কত স্মৃতিই না মনে পড়ে টাইগারদের। কাছে থেকেও যেতে পারছেন না তারা। কভিড-১৯ কেড়ে নিয়েছে অতীতের সেই চলার স্বাধীনতা।

এবারের ক্যাম্পটাও যে ভিন্ন, বায়োসিকিউর বাবলে চার দেওয়ালের ভেতরে ছকে বাঁধা জীবন। খোলা করিডোরেও ক্রিকেটারদের সামনে অদৃশ্য দেওয়াল তুলে দিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। দুটি ফ্লোর, একটি লিফট, সুইমিংপুল, জিম আর দোতলার ডাইনিং হলের বাইরে যাওয়া নিষেধ স্কোয়াডের প্রত্যেক সদস্যের। 'নিউ নরমাল' জীবনে মানিয়ে নিচ্ছেন মুমিনুলরাও। ক্রিকেটারদের এই ত্যাগ স্বীকার সার্থক হবে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া হলে। তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে লঙ্কা সফরের জন্যই তো কষ্ট করা মাহমুদুল্লাহদের।

বায়োসিকিউর বাবলে ক্রিকেটাররা হোটেলে ওঠার পাঁচ দিন হয়ে গেছে। আরও কত দিন থাকতে হবে জানা নেই কারও। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের চিঠিটা কবে আসবে জিজ্ঞাসা ক্রিকেটারদের। হোটেলের সময় কেমন কাটে সৌম্য সরকারের কাছে ফোনে জানতে চাওয়া হলে সরল উত্তর মেলে, 'ভালো'। দ্বিতীয় প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে নিজেই জানতে চান, 'সফর হবে তো?' আশ্বস্ত হওয়ার মতো প্রতিউত্তর যে পাবেন না, অজানা ছিল না তারও। তবুও অভ্যাসবশে জানতে চাওয়া।

ছেলে ভোলানোর মতো শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডও (এসএলসি) হবে-হচ্ছের গল্প বলে ভুলিয়ে রেখেছে বিসিবিকে। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য তাই বলেই ফেলেন, 'অনিশ্চিত জীবন ভালো লাগে না।' ২০ সেপ্টেম্বর হোটেলে ওঠার দিনও ক্রিকেটাররা জানতেন, ২৭ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ উড়ানে কলম্বো যাবেন। এখন তারা বুঝে গেছেন, পূর্বের সূচিতে যাওয়া হবে না। শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন বায়ো-বাবল পাওয়া যায়নি গতকাল পর্যন্ত। কলম্বোয় আজ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস। এসএলসির চিঠি আজ না এলে অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে।

বিসিবি থেকে গত দুই সপ্তাহে যত চিঠি গেছে এসএলসিতে তা কাগজের দিস্তার চেয়েও কম নয়। ভাগ্যিস ইন্টারনেট মুক্তি দিয়েছে চিঠি লেখার কাগজের হিসাব রাখা থেকে। এত চিঠি লিখেও এসএলসি উত্তর আসে, 'আমরা চেষ্টা করছি টাস্কফোর্সকে বোঝাতে।' কলম্বোর চিঠিতে বিসিবি লিখেছে, বায়োসিকিউর বাবল না পাওয়া পর্যন্ত সফরের বাকি অনুষঙ্গ ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তাতেও যে কোনো লাভ হয়নি জেনে গেছেন ক্রিকেটাররা। তাই কারও ফোন পেলে খেলোয়াড়দের প্রশ্ন থাকে, সফর হবে তো?

'সফর যবে হবে তবে দেখা যাবে' মিঠুনের ভাবনা এমনই। 'নিউ নরমাল' জীবনকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন তিনি। দু'দিন হলো হোটেলে উঠেছেন মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যান। হোটেলে থেকে নিরাপদে দলগত অনুশীলন করতে পারা বড় প্রাপ্তি তার কাছে, 'খেলা থাকলে তো হোটেলে থাকতে হয়। তখন হয়তো বের হতে পারি, এখন পারি না। তবে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যেতে পারি। জিম, সুইমিং করতে পারি। আমাদের ফ্লোরে একটা 'রিক্রিয়েশন' রুম করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেউ কেউ যায়, কিছুটা সময় কাটায়। আসলে প্র্যাকটিস করার পর শরীর ক্লান্ত থাকে। বিশ্রাম নেওয়ার পর, টিভি দেখলে সময় চলে যায়। এটাও তো একটা অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে আরও অনেক সিরিজের জন্য বায়ো-বাবলে থাকতে হতে পারে। এই প্র্যাকটিসটা তখন কাজে দেবে।'

রিক্রিয়েশন রুমে টেবিল টেনিস, দাবা, লুডুর মতো ইনডোর গেম খেলা যায়। সেখানে সময়টা ভালো কাটে রুবেলদের। সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজ ব্যস্ত থাকেন ইউটিউবে। এমনি করে যায় যদি দিন যাক না।