ভালোবাসার টানে ফুটবলে আসা। বাফুফে নির্বাচনে প্রথমবার এসেই করেছেন বাজিমাত। সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন দেশের অন্যতম বৃহত্তর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া। ফুটবল নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপে বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল :প্রথমবারই বাজিমাত। নির্বাচন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা।

আতাউর রহমান :আমার কাছে মনে হয়েছে যদি ফেডারেশনে থাকি তাহলে হয়তো ভালো কিছু করা যাবে। আসলে ফুটবল ফেডারেশন থেকে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। ফুটবলকে ভালোবাসি বলেই ফুটবলে আসা। আমার মনে হয় এখনও ফুটবলের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ফুটবলের প্রতি টান থেকেই কিন্তু ফেডারেশনে আসা। কাউন্সিলর, ডেলিগেটদের সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই। করোনার কারণে আমরা কোনো জেলায় যেতে পারিনি। তারপরেও যতটুকু সম্ভব কথা বলেছি। ডেলিগেটরা মনে করেছেন আমাদের মতো লোকের প্রয়োজন। যারা তাদের পাশে থাকবেন এ বিশ্বাসটা তাদের মনে জন্মেছে। যে কারণে তারা ভোট দিয়েছেন।

সমকাল :আটজন সহ-সভাপতি প্রার্থী। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

আতাউর রহমান :নির্বাচন মানেই একটা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তারা কেউই বলেন না তিনি নির্বাচনে জিতবেন না। আপনাদের সঙ্গে একজন বলেছেন, সালাউদ্দিনের ২০ ভোটও নেই। তিনি কিন্তু এক ভোট পেয়েছেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে জিতবেন। প্রত্যেকেরই একটা আশা থাকে। আমারও আশা ছিল, আমি জিতব।

সমকাল :অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা হয়েছে।

আতাউর রহমান :আমার মনে হয় না ভোটাররা এতটা নিচু মনের। ভোটারদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতা আছে। সারা বাংলাদেশে মাত্র ১৩৯ ভোটার। আপনি দেখেন জেলা থেকে যারা ভোটার হয়েছেন তারা কিন্তু নিজ ইচ্ছায় ভোটার হতে পারেননি। সেখান থেকে ১০-১৫ জন লোকের প্রস্তাব ছিল ওই ব্যক্তি কাউন্সিলর হিসেবে যোগ্য। ক্লাবগুলো মিটিং করে তাদের যোগ্য ব্যক্তিকে পাঠিয়েছে ফেডারেশনে ভোট দেওয়ার জন্য। তা হলে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তাতে করে ডেলিগেটদের ছোট করা হয়।

সমকাল :লিগ করার জন্য জেলাগুলোকে বছরে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। তাদের চাওয়া ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।

আতাউর রহমান : নতুন যে ২১ জনের টিম আসছে; এটা খুবই সুন্দর টিম। টাকা পয়সার বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। এখানে মানুষের আন্তরিকতা থাকতে হবে। যারা ডিএফএর কর্মকর্তা আছেন তাদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে। জেলা থেকে তারা যদি স্পন্সর জোগাড় করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে আমরা যারা আছি ঢাকাতে, চেষ্টা করব তাদের স্পন্সর জোগাড় করে দিতে। খেলা চালু করতে গেলে তাদের পাশে থাকতেই হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে থাকতে পারি, তা পরবর্তী দিনগুলোতে বুঝতে পারব।

সমকাল :আড়ালে থেকে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। এখন তো নির্বাচিত সহসভাপতি। ফুটবল উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতে চান?

আতাউর রহমান :আগে কী দায়িত্ব দেওয়া হয়, কতটুকু দায়িত্ব পালন করার মতো সুযোগ আসবে, এর ওপর নির্ভর করবে কতটুকু কাজ করতে পারব। প্রথমে মনে করি, একের প্রতি আরেকজনের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। অর্থাৎ আমাদের টিমের মধ্যে সে শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিকতা, ঘনিষ্ঠতা যদি না থাকে তাহলে কোনো কাজেই আপনি এগোতে পারবেন না। নির্বাচন করতে গিয়ে সবার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে সেরা একটি টিম হয়েছে। এখানে কাজ করার সুন্দর পরিবেশ আছে।

সমকাল :আপনি নিজেও বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

আতাউর রহমান :সবাই তো একাডেমি একাডেমি বলে। আমাদের দরকার একটি ইনস্টিটিউট, যেটি থেকে তৈরি হবে খেলোয়াড় এবং সেই ইনস্টিটিউটে থাকতে হবে মানসম্পন্ন শিক্ষা। ইনস্টিটিউট হতে হবে এরকম যে, আপনি আপনার ছেলেকে দিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবেন। সে ফুটবলও খেলবে, আবারও জিপিএ ফাইভও পাবে। আপনি জানেন ব্রাজিল খেলোয়াড় এক্সপোর্ট করে। তাদের কিন্তু ভালোমানের ইনস্টিটিউট এবং ট্রেনিং সেন্টার আছে, সেখান থেকে খেলোয়াড় তৈরি হয়। আমার যদি খেলোয়াড় না থাকে বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখব কী করে? স্বপ্ন দেখতে হলে প্রথমেই খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।

বিকেএসপির কথাই ধরুন, সেখানে মানুষ সন্তানদের দিচ্ছে এ কারণে, আমার বাচ্চারা পড়ালেখাও করবে, খেলাধুলাও করবে। শুধু ফুটবলের জন্য এ রকম ইনস্টিটিউট দরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী। সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যে সম্পর্ক আছে আমার ধারণা যে এটি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।এটি যদি করতে পারি, ৫ কিংবা ১০ বছর লাগুক আমরা একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পারব।