- খেলা
- শেষ থেকে শুরু চান সাকিব
শেষ থেকে শুরু চান সাকিব

সদ্য নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়া সাকিবের প্রধান লক্ষ্য, যেখানে থেমে গিয়েছিল জয়যাত্রা, সেখানেই ফিরে যাওয়া। আর সেই লক্ষ্য পূরণের মিশন শুরু হচ্ছে আগামী ক'দিনের মধ্যে। এত দিন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাকিব গতরাতে পা রেখেছেন দেশের মাটিতে।
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় সব ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকেই দূরে ছিলেন সাকিব। ক্রিকেটবিহীন ওই সময়টায় তাকে ব্যক্তিগত জীবনে যেমন ভালো-মন্দ নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তেমনি অজস্র কৌতূহল আর জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছিল সমর্থক-ক্রীড়ানুরাগী সবার মধ্যে। সবার সব জিজ্ঞাসার জবাব দিতে দেশে ফেরার আগমুহূর্তে ইউটিউবের দ্বারস্থ হয়েছেন সাকিব। যেখানে সংবাদকর্মী ও ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। যার মধ্যে তার নিষেধাজ্ঞা সময়ের অনুভূতি-অভিজ্ঞতা আর ফিরে আসার পরের ভাবনা-পরিকল্পনা তো ছিলই, সঙ্গে ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত, ম্যাচ সেন্স, এমনকি লিওনেল মেসির বার্সা ত্যাগের প্রসঙ্গ পর্যন্ত। সাকিবের প্রশ্নোত্তর পর্বের উল্লেখযোগ্য অংশ রইল এখানে।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা: এখন আমার লক্ষ্য যেখানটায় শেষ করেছিলাম আগে সেখানে পৌঁছানো। এরপর যেন আরও ভালো করতে পারি, সেই তাড়না থাকবে। সবার যে অনুপ্রেরণা আর দোয়া, সেটার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রস্তুতি যেমন: (সেপ্টেম্বরে) বিকেএসপির ট্রেনিংটা খুবই ভালো ছিল। আমার খুব দরকার ছিল। যদিও ইচ্ছা ছিল আরও ১৫-২০ দিন করার। যেহেতু শ্রীলঙ্কা সিরিজ হয়নি, ওটা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি। আরও ১৫-২০ দিন করতে পারলে সামনের এক-দুই বছরের জন্য আমার পরিপূর্ণ প্রস্তুতি হয়ে যেত। তবে এখনও যেহেতু সময় আছে, সামনে একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আছে, আশা করি সেখানে খেলে অনুশীলনের যে গ্যাপটা আছে সেটা পূরণ করতে পারব।
মাঠের ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনা: জানি না, কী করব। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি। উইন্ডিজের সঙ্গে খেলা হলে আর আমি টিমে থাকলে চেষ্টা থাকবে, মানুষের ভালোবাসা এবং সাপোর্টের প্রতিদান যেন দিতে পারি।
নিষেধাজ্ঞায় আফসোস: অবশ্যই আফসোস হয়েছে। অনুতপ্তও হয়েছি। আমার এরকম একটা ভুল করা উচিত হয়নি। আমি এটা থেকে বড় শিক্ষা নিতে পারব বলে আমার ধারণা। আর শাস্তি বেশি বা কম হওয়াটা আমার ওপর নির্ভর করে না। যেটা দিয়েছে আমি মাথা পেতে নিয়েছি। আমি মনে করেছি, এ জায়গা থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।
সতীর্থদের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে কিনা: আসলে কার মনের ভেতর কী আছে, বলা মুশকিল। সন্দেহ হতেই পারে, অবিশ্বাস তৈরি হতেই পারে। সেটা কখনোই অস্বীকার করি না। তবে যেহেতু এর ভেতরও সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল, কথা হয়েছে, আমি কখনও ওভাবে ফিল করিনি। আশা করি এ জায়গাটিতে সেভাবে সমস্যা হবে না। তারা যেভাবে আমাকে বিশ্বাস করত, এখনও সেভাবেই বিশ্বাস করবে। তবে আপনি যদি ওভাবে বলেন, (অবিশ্বাস) করতেই পারে, এটা আসলে অস্বাভাবিক কিছু নয়। মনের কোনায় সন্দেহ জাগতেই পারে, এটা নিয়ে আফসোসের কিছু নেই। কারণ ঘটনাটাই এরকম। যে কোনো সময় যে কারও মনের কোনায় সন্দেহ জাগতে পারে। তবে আমার ধারণা, আমার প্রতি সবার আগে যে বিশ্বাস ছিল, এখনও থাকবে।
তদন্ত চলা অবস্থায় মানসিক অবস্থা যেমন ছিল: খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমার জন্য অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতি ছিল। এটা কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই ভালো অনুভূতির ব্যাপার নয়। অনেক কঠিন সময় ছিল। তবে হ্যাঁ জানতাম, হয়তো কিছু একটা হতে পারে। কখনও মনে হচ্ছিল, কিছু নাও হতে পারে। বুঝতে পারছিলাম না, কী ধরনের ফল আসছে। তবে তদন্ত চলার সময়টা কখনোই সহজ ছিল না।
যা মিস করেছেন: সত্যি কথা বলতে খুব বেশি কিছু একটা মিস করিনি। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই বালাদেশকে মিস করেছি। কারণ বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে ছিলাম।
অন্যদের খেলা দেখার সময় খেলতে না পারার কষ্ট: এ ধরনের কোনো চিন্তা কাজ করেনি। আমি জানতাম, এক বছর খেলতে পারব না। তাই চিন্তাও আসেনি। যখন খেলা হয়েছে, দেখার চেষ্টা করেছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে খুব বেশি খেলা সময়ের কারণে দেখতেও পারিনি। তবে সময়টা অনেক ভালো কেটেছে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে লকডাউনে সময় পেরিয়ে যাওয়া: আমি নিজেকে সবসময়ই ভাগ্যবান মনে করি। আমার মনে হয় এটাও লাক। খুব বেশি মিস করিনি। এ সময়ে খুব বেশি খেলা হয়নি। মিস করার সুযোগটা তাই তৈরি হয়নি। হয়তো বাংলাদেশ টিম খেলার মধ্যে থাকলে সেটা দেখতে গিয়ে মিস করতাম। যেহেতু বালাদেশের কোনো খেলা দেখার সুযোগ হয়নি, মিসও করিনি।
জীবন দর্শনে করোনা আর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব: করোনা আর নিষেধাজ্ঞা জীবনকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে। অনেক বেশি আইডিয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। স্ট্রাগল না এলে মানুষ শিখতে পারে না বলে আমার বিশ্বাস। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ অনেক পরিপকস্ফ হয়ে ফিরতে পারে। আমারও সেটাই চেষ্টা থাকবে। এক বছর আগে যেভাবে চিন্তা করতাম, এখন অনেক ভিন্নভাবে চিন্তা করি। আমার জীবনে এই সময়টা অনেক বেশি সাহায্য করবে বলে মনে করি।
গত ১২ মাসে তাকালে কী মাথায় আসে?: ভালো ভালো স্মৃতি। যেহেতু পরিবারের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। ওটা মিস করব। কারণ অতটা সময় আর পাব না।
অধিনায়কত্ব ফিরে পেলে: এখন মাথায় আছে একটা জিনিসই। কীভাবে কামব্যাক করতে পারি। কীভাবে নিষেধাজ্ঞার আগে পারফরম্যান্স যে জায়গায় ছিল সেখানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরতে পারি। তারপর ওখান থেকে যেন আরও বেশি উন্নতি করতে পারি।
কোচদের আশাবাদ: ফাহিম স্যার আর সালাউদ্দিন স্যার আমার কাছ থেকে আশা করছেন, এটা আমার জন্য ভালো দিক, চ্যালেঞ্জিং দিক। তারা যেহেতু বিশ্বাস করেন, আমার ভেতরেও এই বিশ্বাসটা জন্ম নেবে। চেষ্টা করব আগের জায়গা থেকে শুরু করতে। তারপর যেন আগের জায়গাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারি, সেই চেষ্টা তো সবসময় থাকবেই।
টি২০ বিশ্বকাপ ভাবনা: জানি না টি২০-তে আমরা কতটা এগিয়েছি। তবে টি২০র সৌন্দর্য হচ্ছে এখানে কেউ ফেভারিট নয়, যে কোনো দিন যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। ওটা আমাদের একটা ভরসা। যেহেতু আমরা এখন নিয়মিত টি২০ খেলেছি, ২০১৫-১৬ থেকে এখন অনেক ভালো একটা দল আমরা, অনেক বুঝতে পারি কীভাবে খেলা উচিত, সেটা আমাদের সাহায্য করবে আরেকটু ভালো খেলার জন্য।
মেসির কঠিন সময়ে ভক্ত সাকিবের ভাবনা যা ছিল: আমি চাচ্ছিলাম মেসি ম্যানসিটি বা পিএসজিতে চলে যাক। আমার ধারণা, ওই দুই ক্লাবে গেলে অনেক ভালোভাবে খেলতে পারত, ফ্রি খেলত পারত। যেহেতু ওর ক্যারিয়ারের একদম শেষ সময়। এই বছর আর পরের বছর হয়তো ভালোভাবে উপভোগ করতে পারত। যেটা হয়তো বার্সেলোনায় অতটা সম্ভব নয়। কারণ শেষ তিন-চার বছর তার একার ওপর চাপ গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত যেহেতু বার্সাতেই আছে, আমি চাইব নিজেদের সেরাটা দিয়ে বার্সেলোনাকে শিরোপা এনে দিয়ে যেন বের হতে পারে, যদি পরের বছর বের হতে চায়।
ব্যাটসম্যানের থট রিডিং কীভাবে করেন: কীভাবে করে জানি না। তবে খেলার ভেতরে ম্যাচ সেন্স কাজ করে। মন থেকে যখন যেটা করা দরকার বলে বিশ্বাস করি, সেটাই করি। সবসময় ঠিক হয় না। তবে বেশিরভাগ সময় সফল হই। এটা আসলে অভিজ্ঞতার কারণে হয়। মাথার বুদ্ধির খেলাও আছে।
ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত: সেরা মুহূর্ত এখনও আসেনি। সেরা মুহূর্ত হবে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতলে, সেটা ওয়ানডে হোক বা টি২০। তবে এখন পর্যন্ত বললে অন্যতম সেরা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয় আর ২০১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স, ব্যক্তিগত দিক থেকে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বার্তা: কেউ যেন আমার মতো ভুল না করে। এমন পরিস্থিতি হলে আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট অনুসরণ করবেন। ভুল করবেন না। হেলা করবেন না। হালকাভাবে নেবেন না। অবশ্যই রিপোর্ট করবেন।
বিতর্ক এড়াতে সচেতন থাকার চেষ্টা: কেউই চায় না বিতর্কে জড়াতে। সবাই সচেতন থেকে বিতর্ক এড়িয়ে চলা যায় কীভাবে, সেটাই চায়। তবে কিছু মানুষ দিয়ে হয়তো সেটা সবসময় সম্ভব হয় না। আমি আরও বেশি সতর্ক থাকার চেষ্টা করব, যেন একদমই কোনো বিতর্ক না হয়।
মন্তব্য করুন