- খেলা
- মাঠের ভেতর যেমন প্রচুর কিক খেয়েছি, বাইরের জীবনেও তেমন...
মাঠের ভেতর যেমন প্রচুর কিক খেয়েছি, বাইরের জীবনেও তেমন...
শেষ সাক্ষাৎকার

৩০ অক্টোবর ছিল ম্যারাডোনার ৬০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে ব্যালন ডি'অর পুরস্কারের কর্তৃপক্ষ 'ফ্রান্স ফুটবল' ম্যাগাজিন তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। মৃত্যুর আগে এটিই ছিল তার পূর্ণাঙ্গ শেষ সাক্ষাৎকার। যার চুম্বকাংশ রইল এখানে
প্রশ্ন :আত্মজীবনী 'আই অ্যাম দিয়েগো অব দ্য পিপল'-এ লিখেছেন, তারা আমাকে ফিওরিতো (বুয়েনাস আয়ার্স প্রদেশের একটি শহর) থেকে ছুড়ে ফেলেছে, লাথি দিয়ে বের করে দিয়েছে। আবার লিখেছেন, যা পারতাম তা করেছি, খুব খারাপ করেছি বলে মনে হয় না...
ম্যারাডোনা :ক্যারিয়ার জুড়েই নানান আঘাত আমাকে সইতে হয়েছে। মাঠের ভেতর যেমন প্রচুর কিক খেয়েছি, মাঠের বাইরের জীবনেও তেমনি। যতভাবে সম্ভব সব রকমভাবেই আঘাত পেয়েছি। কিছু মানুষ তো আমার পরিবার, আমার ভাই, আমার মেয়ে এমনকি বেনজাকেও (দ্বিতীয় মেয়ে জিয়ানিনা ও অ্যাগুয়েরোর সন্তান) নিস্তার দেয়নি। তবে এত কিছুর পরও যখন আমি যুদ্ধের কথা ভাবি, এই পৃথিবীতে কত শিশু অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে বলে মনে পড়ে, তখন বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে আমার ভাগ্যবানই মনে হয়।
প্রশ্ন :অনেক বছর এ দেশ ও দেশ ঘুরে আবার ফিরে এলেন আর্জেন্টিনায়। এই ফেরাটা কেমন?
ম্যারাডোনা :২০১০ বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে কোচিং করানোর পর যখন টিকতে পারলাম না, তখন নিজের পেশা ও প্যাশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর অন্য দেশে চলে গিয়েছিলাম। কারণ জুলিও গ্রোন্ডোনা (১৯৭৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট) আমাকে পছন্দ করত না। এ কারণেই বাইরে চলে যাই (মেক্সিকো ও আরব আমিরাতে কোচিং)। এখন ফিরে এলাম। ভালো লাগছে। এটা সত্যি যে, করোনা মহামারির কারণে পরিস্থিতি এখন ভালো নেই। এটা আসলে সব লাতিন আমেরিকানের জীবনকেই কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
প্রশ্ন :৬০ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলে পা রাখার দিনগুলোর কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে?
ম্যারাডোনা :আমি যখন নিজের শুরুর দিনগুলোর দিকে তাকাই, তখন যা কিছু অর্জন তার জন্য মনটা তৃপ্তিতে ভরে যায়। ভাবতে ভালো লাগে, যারা আমার খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসত, টিভির সুইচ অন করত, তাদের আমি খুশি করতে পেরেছি, আনন্দ দিতে পেরেছি। ফুটবলের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে আমি নিজেও খুশি। আর এটাই আমার গর্ব করার সবচেয়ে বড় উৎস।
প্রশ্ন :১৯৮২-৮৪ বার্সেলোনায় আর ১৯৮৪-৯১ ন্যাপোলিতে আপনি সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে খারাপ, চোট, শিরোপা, তারকার মর্যাদা, বিতর্ক- নানান রকমের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন...
ম্যারাডোনা :আমি তখন ইউরোপে গিয়েছিলাম চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। ওই সময় দক্ষিণ আমেরিকানদের জন্য সেখানে গিয়ে খেলাটা এত সহজ ছিল না। আমি তখন ঝুঁকিটা নিলাম। নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে সফলও হলাম। এটাই আমি, এভাবে সবকিছু করে থাকি।
প্রশ্ন :৬০তম জন্মদিনে কোন উপহারটা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
ম্যারাডোনা :আমি স্বপ্ন দেখি ইংলিশদের বিপক্ষে আরও একটা গোল করেছি। এবারেরটা ডান হাত দিয়ে (হাসতে হাসতে)।
প্রশ্ন :১৯৯৫ পর্যন্ত নন-ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা ব্যালন ডি'অরের জন্য বিবেচিত হতো না। ওই বছরই ফ্রান্স ফুটবল আপনাকে অনারারি ব্যালন ডি'অর দেয়। এই স্বীকৃতিটা কি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
ম্যারাডোনা :অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাউথ আমেরিকানরা যদি আগে থেকে পেত, আমি একটা হলেও পেতাম। আসলে কয়েকটা পেয়ে যেতাম। এর পরও যে শেষ পর্যন্ত একটা পেয়েছি, সেটি আমার জন্য আনন্দদায়ক ছিল।
প্রশ্ন :এখনকার কোন খেলোয়াড়রা আপনাকে স্বপ্ন দেখায়?
ম্যারাডোনা :মেসি ও রোনালদো, রোনালদো ও মেসি। এই দু'জন অন্য সবার চেয়ে ওপরে। অন্য কেউ এ দু'জনের কাছাকাছিও আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা দু'জন যা করেছে, কেউ তার অর্ধেকও করতে পারেনি।
প্রশ্ন :আপনাকে যদি ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের বাছাই করতে বলা হয়, কাকে কাকে নেবেন?
ম্যারাডোনা :প্রথম কথা হচ্ছে, এমন অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড় আছে যাদের খেলা আমি দেখিইনি। আমার ছোটবেলায় আর্জেন্টিনার একজন অবিশ্বাস্য গোলকিপারের কথা শুনতাম, নাম অ্যামাদেও ক্যারিজো (১৯৫৮ বিশ্বকাপ খেলেছেন)। ছিলেন জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, যিনি আমার ক্যারিয়ার শুরুর আগমুহূর্তে সরে গেছেন, আমার তার সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়নি। এভাবে অনেকেই আছে যাদের আজকের বিশ্ব ভুলে গেছে; কিন্তু ওই সময়ে খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। আমাকে যদি মিডফিল্ড বাছতে বলা হয় তাহলে আমি জাভি ও লুকা মডরিচকে নেব। ওপরের দিকে নিঃসন্দেহে মেসি আর রোনালদো খেলবে।
প্রশ্ন :আত্মজীবনী 'আই অ্যাম দিয়েগো অব দ্য পিপল'-এ লিখেছেন, তারা আমাকে ফিওরিতো (বুয়েনাস আয়ার্স প্রদেশের একটি শহর) থেকে ছুড়ে ফেলেছে, লাথি দিয়ে বের করে দিয়েছে। আবার লিখেছেন, যা পারতাম তা করেছি, খুব খারাপ করেছি বলে মনে হয় না...
ম্যারাডোনা :ক্যারিয়ার জুড়েই নানান আঘাত আমাকে সইতে হয়েছে। মাঠের ভেতর যেমন প্রচুর কিক খেয়েছি, মাঠের বাইরের জীবনেও তেমনি। যতভাবে সম্ভব সব রকমভাবেই আঘাত পেয়েছি। কিছু মানুষ তো আমার পরিবার, আমার ভাই, আমার মেয়ে এমনকি বেনজাকেও (দ্বিতীয় মেয়ে জিয়ানিনা ও অ্যাগুয়েরোর সন্তান) নিস্তার দেয়নি। তবে এত কিছুর পরও যখন আমি যুদ্ধের কথা ভাবি, এই পৃথিবীতে কত শিশু অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে বলে মনে পড়ে, তখন বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে আমার ভাগ্যবানই মনে হয়।
প্রশ্ন :অনেক বছর এ দেশ ও দেশ ঘুরে আবার ফিরে এলেন আর্জেন্টিনায়। এই ফেরাটা কেমন?
ম্যারাডোনা :২০১০ বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে কোচিং করানোর পর যখন টিকতে পারলাম না, তখন নিজের পেশা ও প্যাশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর অন্য দেশে চলে গিয়েছিলাম। কারণ জুলিও গ্রোন্ডোনা (১৯৭৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট) আমাকে পছন্দ করত না। এ কারণেই বাইরে চলে যাই (মেক্সিকো ও আরব আমিরাতে কোচিং)। এখন ফিরে এলাম। ভালো লাগছে। এটা সত্যি যে, করোনা মহামারির কারণে পরিস্থিতি এখন ভালো নেই। এটা আসলে সব লাতিন আমেরিকানের জীবনকেই কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
প্রশ্ন :৬০ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলে পা রাখার দিনগুলোর কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে?
ম্যারাডোনা :আমি যখন নিজের শুরুর দিনগুলোর দিকে তাকাই, তখন যা কিছু অর্জন তার জন্য মনটা তৃপ্তিতে ভরে যায়। ভাবতে ভালো লাগে, যারা আমার খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসত, টিভির সুইচ অন করত, তাদের আমি খুশি করতে পেরেছি, আনন্দ দিতে পেরেছি। ফুটবলের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে আমি নিজেও খুশি। আর এটাই আমার গর্ব করার সবচেয়ে বড় উৎস।
প্রশ্ন :১৯৮২-৮৪ বার্সেলোনায় আর ১৯৮৪-৯১ ন্যাপোলিতে আপনি সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে খারাপ, চোট, শিরোপা, তারকার মর্যাদা, বিতর্ক- নানান রকমের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন...
ম্যারাডোনা :আমি তখন ইউরোপে গিয়েছিলাম চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। ওই সময় দক্ষিণ আমেরিকানদের জন্য সেখানে গিয়ে খেলাটা এত সহজ ছিল না। আমি তখন ঝুঁকিটা নিলাম। নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে সফলও হলাম। এটাই আমি, এভাবে সবকিছু করে থাকি।
প্রশ্ন :৬০তম জন্মদিনে কোন উপহারটা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
ম্যারাডোনা :আমি স্বপ্ন দেখি ইংলিশদের বিপক্ষে আরও একটা গোল করেছি। এবারেরটা ডান হাত দিয়ে (হাসতে হাসতে)।
প্রশ্ন :১৯৯৫ পর্যন্ত নন-ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা ব্যালন ডি'অরের জন্য বিবেচিত হতো না। ওই বছরই ফ্রান্স ফুটবল আপনাকে অনারারি ব্যালন ডি'অর দেয়। এই স্বীকৃতিটা কি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
ম্যারাডোনা :অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাউথ আমেরিকানরা যদি আগে থেকে পেত, আমি একটা হলেও পেতাম। আসলে কয়েকটা পেয়ে যেতাম। এর পরও যে শেষ পর্যন্ত একটা পেয়েছি, সেটি আমার জন্য আনন্দদায়ক ছিল।
প্রশ্ন :এখনকার কোন খেলোয়াড়রা আপনাকে স্বপ্ন দেখায়?
ম্যারাডোনা :মেসি ও রোনালদো, রোনালদো ও মেসি। এই দু'জন অন্য সবার চেয়ে ওপরে। অন্য কেউ এ দু'জনের কাছাকাছিও আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা দু'জন যা করেছে, কেউ তার অর্ধেকও করতে পারেনি।
প্রশ্ন :আপনাকে যদি ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের বাছাই করতে বলা হয়, কাকে কাকে নেবেন?
ম্যারাডোনা :প্রথম কথা হচ্ছে, এমন অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড় আছে যাদের খেলা আমি দেখিইনি। আমার ছোটবেলায় আর্জেন্টিনার একজন অবিশ্বাস্য গোলকিপারের কথা শুনতাম, নাম অ্যামাদেও ক্যারিজো (১৯৫৮ বিশ্বকাপ খেলেছেন)। ছিলেন জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, যিনি আমার ক্যারিয়ার শুরুর আগমুহূর্তে সরে গেছেন, আমার তার সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়নি। এভাবে অনেকেই আছে যাদের আজকের বিশ্ব ভুলে গেছে; কিন্তু ওই সময়ে খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। আমাকে যদি মিডফিল্ড বাছতে বলা হয় তাহলে আমি জাভি ও লুকা মডরিচকে নেব। ওপরের দিকে নিঃসন্দেহে মেসি আর রোনালদো খেলবে।
মন্তব্য করুন