অস্ট্রেলিয়ার এই ট্রফিটাই সেরা

ছবি: এএফপি
নাজমুল হক নোবেল
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩:০৩
অ্যালান বোর্ডার থেকে প্যাট কামিন্স– যেন একটি উপমহাদেশীয় বৃত্ত পূরণের গল্প। ১৯৮৭ সালে লাহোরে অ্যালান বোর্ডারের নেতৃত্বে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এর পর ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় শিরোপা জেতেন স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্করা।
গত রোববার আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ানদের এই শিরোপার চক্র পূরণ করেন প্যাট কামিন্স। বিশ্বকাপের ১৩ আসরের মধ্যে এটি তাদের ষষ্ঠ শিরোপা। এই ছয় শিরোপার মধ্যে সবকিছু বিবেচনায় কামিন্সের দলের অর্জনটাই নাকি সেরা!
এই সেরা বলার মূল কারণ হলো, ফাইনালের প্রতিপক্ষ ভারত। শিরোপা জিততে না পারলেও প্রায় সবাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন, আসরের সেরা দল ছিল ভারত। রোহিত-কোহলির ব্যাটিং লাইন এবং বুমরাহ-শামিদের বোলিং নিয়ে গড়া এ দলটি হয়তো ভারতের ইতিহাসের সেরা দল।
ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার যথার্থ বলেছেন, পুরো আসরে রাজত্ব করেও কেবল মাত্র একটি বাজে দিনের কারণে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারলেন না রোহিত-কোহলিরা। র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ১ নম্বরে ও অস্ট্রেলিয়া আছে তাদের পরেই। তবে পাশাপাশি অবস্থান হলেও এ দু’দলের মাঝে ব্যবধানটা বিস্তর।
ভারতের সঙ্গে তাদের শক্তির ব্যাপক পার্থক্যের কারণেই ফাইনালে ৫৮ রানের অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরা ল্যাবুশেনের কাছে বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল, ‘অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ভারত এবারের আসরের সেরা দল। কিন্তু আজ আমাদের বোলাররা দুর্দান্ত ছিল। এর পর কী ব্যাটিং প্রদর্শনীই না দেখিয়েছে ট্রাভিস! এই ট্রফি আমার সেরা অর্জন।’
ফাইনাল ও সেমিতে ম্যাচসেরা হওয়া ট্রাভিস হেড নাকি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ৪৭ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায়ই তাঁর এই দুশ্চিন্তার কারণ, ‘বিশ্বকাপ জয়ের অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। তবে মারনাস দারুণ একটা ইনিংস খেলে আমার ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে নিয়েছে।’
ওয়ার্নার, স্মিথ, স্টার্কদের মতো হ্যাজেলউডেরও এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। তাঁর কাছেও ২০১৫ সালে মেলবোর্নে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে জেতা ট্রফির চেয়ে এটি এগিয়ে, ‘আমি তো এটিকেই এগিয়ে রাখব। শক্তিতে ভারতের ধারেকাছে কেউ নেই, তার ওপর তাদের এত দর্শকের সামনে খেলা। এ বিষয়টিকে অবশ্যই হিসাবে রাখতে হবে।’ সেই দলের সাতজন আছেন এবারের দলে।
শক্তির বিচারে অতীতের পাঁচ বিশ্বকাপজয়ী দলের চেয়ে বর্তমান দলটির অর্জনকে এগিয়ে রাখতেই হবে। ১৯৮৭ শিরোপাজয়ী অ্যালান বোর্ডারের দলে ডেভিড বুন, জিওফ মার্শ, ডিন জোন্স, ক্রেইগ ম্যাকডার্মট, ব্রুস রিড, স্টিভ ওয়াহর মতো তারকারা ছিলেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দাপটের মধ্যগগণে ছিল স্টিভ ওয়াহর দল। মার্ক ওয়াহ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, রিকি পন্টিং, মাইকেল বেভান, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রাদের সামনে কোনো দল দাঁড়াতেই পারত না।
স্টিভ ওয়াহর হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার যে সর্বগ্রাসী সোনালি প্রজন্মের আবির্ভাব, তা পূর্ণতা পেয়েছিল রিকি পন্টিংয়ের হাতে। পরের দুই আসরে দাপটে শিরোপা জিতেছিলেন তারা। ঘরের মাঠে ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী দলটিও খারাপ ছিল না। মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, অ্যারন ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েল, স্টার্করা তখন টগবগে তরুণ। সে সঙ্গে ফর্মের তুঙ্গে থাকা শেন ওয়াটসন ও মিচেল জনসন ছিলেন। খেলাও ছিল তখন দেশের মাটিতে। তাদের শিরোপা জয়ও নিশ্চিতই ছিল। সে তুলনায় রোববার আহমেদাবাদে অসাধ্যই সাধন করেছেন কামিন্স-ট্রাভিসরা। বিশ্বকাপ জয়ী অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তো এই শিরোপাকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া ইতিহাসে সেরা সাফল্যের মর্যাদা দিয়েছেন।