মায়ের স্বপ্নপূরণ করে আনন্দাশ্রু
শিরোপা হাতে হেড ও ল্যাবুশেনের উদযাপন। ছবি: এএফপি
তরিকুল ইসলাম রাজন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩:১৭
বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে আহমেদাবাদের ফাইনালের নায়ক ট্রাভিস হেড হলেও পার্শ্বনায়ক বলা যায় মারনাস ল্যাবুশেনেকে। ১১০ বলে অপরাজিত ৫৮ রান এই যুগে সাধারণ হলেও ফাইনালের পরিস্থিতিতে তা বেশ মূল্যবান। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে টানতে হেডকে সঙ্গ দেন তিনি। ১৯২ রানের অসাধারণ জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন ল্যাবুশেন।
দলের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ে অবদান রেখে নিজের আবেগ সামলাতে পারেননি অসি এই ব্যাটার। আইসিসির সঙ্গে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা আজকে যা অর্জন করলাম, তা অবিশ্বাস্য। অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে এটিই আমার সেরা অর্জন। ভারত এই টুর্নামেন্টের সেরা দল ছিল, কিন্তু নিজের সেরাটা দিলে অন্যদেরও সুযোগ রয়েছে। আমাদের বোলাররা অসাধারণ ছিল। ট্রাভিস ছিল দুর্দান্ত।’
অথচ মাত্র দুই মাস আগেও অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন না ল্যাবুশেন। সুযোগ পেয়ে দলকে এমন উপলক্ষ এনে দিতে পেরে গর্বিত তিনি। ‘যেভাবে সবকিছু হলো, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। অথচ দুই মাস আগেও আমি এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে দলে ছিলাম না।’
সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া দল যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, তখন ল্যাবুশেনেকে পাঠানো হয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে নিউজিল্যান্ডে। তবে চোটের কারণে স্মিথ ছিটকে গেলে হুট করেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বদলি পাঠানো হয় ল্যাবুশেনেকে। যথারীতি প্রথম ওয়ানডের একাদশে জায়গা পাননি তিনি। এদিন দর্শক গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন ল্যাবুর মা। একাদশে নেই জেনেও মায়ের বিশ্বাস ছিল কোনো না কোনোভাবে খেলবেন তাঁর ছেলে।
মায়ের সেই বিশ্বাসের জোরেই সেদিন ঘটে যায় অকল্পনীয় এক ঘটনা। মাথায় আঘাত পেয়ে ক্রিজ ছেড়ে উঠে যান ক্যামেরুন গ্রিন। তখন কনকাশন সাব হিসেবে আচমকা সুযোগ আসে ল্যাবুশেনের। মাঠে নেমেই ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে নিজে জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। সাত নম্বরে নেমে খেলেন ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস।
ম্যাচ শেষে সেদিন মায়ের বিশ্বাসের কথা জানিয়ে ল্যাবুশেনে বলেছিলেন, ‘মা বলেছিলেন, তুমি প্রথম ম্যাচটা খেলবে। আমি বলি, আমি তো একাদশে নেই। উত্তরে মা বলেছিলেন, তুমি খেলবে, প্রস্তুত থেকো।’ প্রথম ম্যাচে ভালো করায় দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশেও জায়গা পান ল্যাবুশেনে। ওই ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১২৪ রানের ইনিংস।
নাটকীয়তার এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও নাম ছিল না ল্যাবুশেনের। ভারত বিশ্বকাপের দলে এই ব্যাটারের ঠাঁই হয়েছে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই। তাঁর জায়গা হতো না যদি অ্যাস্টন আগার ইনজুরিতে না পড়তেন। অথচ ফাইনালের একাদশে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন ল্যাবুশেনে। সেই ল্যাবুশেনেই এখন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের পার্শ্বনায়ক।
ভাগ্যকে খুব বিশ্বাস করেন অসিদের এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষ। যেভাবে সবকিছু হয়ে তা আমার অবিশ্বাস্যই লেগেছে। যেভাবে আমার জীবনে সবকিছু হচ্ছে, তা এককথায় অকল্পনীয়। বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে, ফাইনালের একাদশে আমি থাকব না। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য। আমি আসলে বলার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তিন মাস আগেও আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে দলে ছিলাম না। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হই। সেখান থেকে টানা ১৯ ম্যাচ খেলা সত্যিই আমার জন্য অলৌকিক ঘটনা। জানি না, কীভাবে এর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে পারি।’