হোটেল, বায়োসিকিউর বাবল করেই সময় কাটছে মুস্তাফিজদের। নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেই গিয়েছিলেন ভারতে আইপিএল খেলতে। বায়োসিকিউর বাবলের ভেতরেও করোনা হানা দেওয়ায় ভারতের টি২০ টুর্নামেন্টটি স্থগিত করা হলে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরেও সস্ত্রীক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করছেন মুস্তাফিজ। ঢাকার রোদ-হাওয়া গায়ে লাগাতে হোটেল থেকে ছাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। ক্রিকেট, বায়ো-বাবল এবং বিরতি নিয়ে মুস্তাফিজের মতামত জেনেছেন আলী সেকান্দার

সমকাল : দেশে ফিরেও হোটেলে বন্দি, একঘেঁয়ে লাগছে?

মুস্তাফিজ :একটু তো লাগছেই। গ্রামের বাড়িতে না গেলে তো হয় না। এতদিন খেলার ভেতরে ছিলাম। ঢাকায় ক'দিন এভাবে থাকতে হবে, বুঝতে পারছি না।

সমকাল : সামনে তো জাতীয় দলের অনেক খেলা, আরও আটকে থাকতে হবে?

মুস্তাফিজ : বিসিবি এগুলো নিয়ে হয়তো ভাবছে। আমাদের মনে হয় টানা খেলার ভেতরেও কিছু কিছু গ্যাপ আছে। পুরো সূচিটা আমি দেখিনি। তবে যতটা জেনেছি, বিরতি থাকবে।

সমকাল : আইপিএলে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। ওখানে বোলিং নিয়ে খুব কাজ করেছেন বুঝি?

মুস্তাফিজ : আইপিএলে যাওয়ার আগে থেকেই আমি চেষ্টা করছিলাম বোলিংয়ে কিছু কিছু কাজ করতে। বিশেষ করে সুইংটা নিয়ে কাজ করছিলাম। নিউজিল্যান্ডে গিবসন আমাকে অনেক সময় দিয়েছেন। নতুন বলে বোলিং করে ভালোই লাগছিল। শতভাগ টাচে ছিলাম। আমার মনে হয়, একটা পর্যায়ে যেতে পেরেছি। আইপিএলে গিয়েও অনেক প্র্যাকটিস করেছি। নিউজিল্যান্ডে পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। কোয়ারেন্টাইনের সাত দিন পুনর্বাসন করে গেছে। একদিন অনুশীলন করেই ম্যাচ খেলি ভারতে। এরপর প্রতিদিনই চেষ্টা করেছি উন্নতি করার।

"আব্বা, আম্মা, ভাই, বোন, ছোটদের দেখি না প্রায় ৭০ দিনের বেশি। প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি। আব্বা-আম্মাকে খুব মিস করছি"

সমকাল : আইপিএল স্থগিত হওয়ায় কোনো আক্ষেপ?

মুস্তাফিজ : আফসোস তো হয়ই। তবে সবার আগে স্বাস্থ্য। আইপিএলে বিশ্বের কত ক্রিকেটার খেলে। খেলোয়াড়দের মধ্যে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ে তখন বন্ধ না করে উপায় কী। সবার ভালোর জন্যই খেলা স্থগিত হয়েছে।

সমকাল : আপনি জাতীয় দলের স্ট্রাইক বোলার। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ নিয়ে নিশ্চিই অনেক প্রত্যাশা?

মুস্তাফিজ : স্ট্রাইক বোলার কিনা জানি না। সুযোগ পেলে দেশের জন্য সব সময় ভালো করার চেষ্টা করি। যেন আমাকে দিয়ে আমার দেশের উপকার হয়। আমাকে দিয়ে একটি ম্যাচ জিতলে সেটা বড় প্রাপ্তি।

সমকাল : কখনও কি মনে হয়, ইনজুরি না হলে আরও ভালো জায়গায় থাকতে পারতেন?

মুস্তাফিজ : না, ওভাবে চিন্তা করি না। খেলার ভেতরে ইনজুরি থাকবেই। সবটাই মেনে নিতে হবে। আর সুস্থ থাকলেও যে ধারাবাহিক ভালো খেলব সে নিশ্চয়তাও দিতে পারব না। যখন যেটা হয় মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

সমকাল : শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট সিরিজ হেরেছে। হোমে ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ কেমন দেখেন?

মুস্তাফিজ : আমরা তো অবশ্যই চেষ্টা করব সিরিজের সব ম্যাচ জিততে। তবে কথা হচ্ছে, কবে হোটেল থেকে বের হতে পারব জানি না। ওখানে পাঁচ দিন হোটেলে ছিলাম। এখানে কতদিন থাকতে হবে; কে জানে। আমার মনে হচ্ছে বাইরের হাওয়া-বাতাস লাগাতে পারলে ভালো হতো। জিম, হালকা বোলিং করা প্রয়োজন। স্কিলের প্র্যাকটিসগুলো মাথায় রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করা জরুরি। অল্প অল্প করে করতে পারলেই হবে। বেশ কিছু দিন হয়ে গেল বসে রয়েছি। ছন্দ থাকতে থাকতে মাঠে ফেরা দরকার। গ্যাপ হয়ে গেলে ঝামেলা হয়ে যাবে। রুমে জিম বা রানিং যতই করেন না কেন মাঠের মতো হবে না। মাঠে রোদ থাকে, গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। এগুলো আগে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আমি না, সাকিব ভাইও আছে। আমাদের দু'জনের জন্যই মাঠে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে ভালো।

সমকাল : কভিড সিচুয়েশনে ক্রিকেটে কোনো পরিবর্তন দেখতে পান?

মুস্তাফিজ : পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে। কভিডের এই চিন্তাটাই তো ছিল না আগে। এখন যেখানেই যান ভাইরাস নিয়ে চিন্তা। খেলতে নামছেন জানেন না কোনো খারাপ সংবাদ পাবেন কিনা। প্রতিদিন যে মানুষ মারা যাচ্ছে সেগুলোও স্পর্শ করে। খেলার মধ্যে এটা প্রভাব ফেলেই।

সমকাল : বাড়িতে যেতে মন টানছে?

মুস্তাফিজ : খুবই। আমি এতদিন পরিবারের থেকে দূরে থাকিনি। আব্বা, আম্মা, ভাই, বোন, ছোটদের দেখি না প্রায় ৭০ দিনের বেশি। প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি। আব্বা-আম্মাকে খুব মিস করছি। আপনারা তো জানেন, আমি ছুটি পেলেই গ্রামের বাড়িতে যাই। এবার যেতে পারছি না, একটু আক্ষেপ তো আছেই।