- খেলা
- টপঅর্ডারে এই অস্থিরতা কেন
টপঅর্ডারে এই অস্থিরতা কেন

বড্ড অস্থির সবাই। সামান্য কিছুতেই চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেওয়ার ফেসবুকীয় একটি প্রবণতা ইদানীং মহামারির মতো আকার ধারণ করেছে। ক্রিকেটও তার বাইরে নয়। দলের টপঅর্ডার বিন্যাসেই তার প্রমাণ। লিটন কুমার দাস রান পাচ্ছিলেন না সেই উইন্ডিজ সিরিজ থেকেই। বিকল্প হিসেবে তামিমের সঙ্গী হিসেবে তখন থেকেই কখনও ইমরুল, কখনও নাঈম শেখের নাম উঠে আসে ফেসবুকের দেয়ালগুলোতে। ফেসবুকের সেই কানকথা শুনেই যে স্ট্যান্ডবাই থেকে নাঈমকে গতকাল একাদশে রাখা হয়েছিল, তা হয়তো স্বীকার করবেন না টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ। তবে এটাও অস্বীকার করবেন না যে, লিটনকে বসিয়ে দেওয়ার একটা চাপ ছিলই। কিন্তু গতকাল নাঈম শেখ ১ রানে আউট হওয়ার পরই উল্টে গেছে ফেসবুকের দেয়াল লিখন- 'তার ফুটওয়ার্ক ভালো না, লিটনই ভালো ছিল, নাঈম শেখ চলে না... যে লোকগুলো ম্যাচের আগেও নাঈমকে নিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছিল, তারাই কিনা বদলে গেল মাত্র একটি ম্যাচ দেখেই! ক্যারিয়ারের প্রথমবার ওডিআই ওপেন করতে নেমে নার্ভাস থাকতেই পারেন নাঈম, তবে তাকে অবশ্যই সময় দিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
সমর্থকদের এই ধৈর্যচ্যুতি আর অযৌক্তিক আবদারগুলোকে প্রশ্রয় দিতে গিয়েই টপঅর্ডারে অস্থিরতা তৈরি করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। টপ আর মিডল অর্ডার মিলে প্রথম ছয়জনের চারজনই সিনিয়র ক্রিকেটার। ধারাবাহিক পারফর্ম তাদেরও থাকে না; কিন্তু তাদের দলে থাকা না থাকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন এই সিরিজের মাঝেই বলেছেন, দলের সিনিয়রদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। অথচ তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন লিটন দাস ওপেনার কিনা, তা নিয়ে। তাহলে যত সমালোচনা কেবল ব্যাটিং অর্ডারের ওই দুটি জায়গাতেই। যেখানে কখনও সৌম্য সরকার, কখনও নাজমুল হোসেন শান্ত, কখনও বা আফিফ হোসেন ধ্রুব- নাঈম শেখকে পরের ম্যাচ খেলানো নিয়েই কথা ওঠে। এভাবে টানা মানসিক চাপের মধ্যে থেকে দলের ওই দুই পজিশনের ব্যাটসম্যানকে খেলে যেতে হয়। সমর্থকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের টানা এই সমালোচনার কারণেই দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৭.৩৫ স্ট্রাইক রেট নিয়েও সৌম্য সরকারকে বসে থাকতে হয় (তামিম স্ট্রাইক রেট ৭৮.৩৫, সাকিব স্ট্রাইক রেট ৮২.১৩, মুশফিক স্ট্রাইক রেট ৭৯.০৬, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭৭.১১)।
টপঅর্ডারে জায়গা না মেলায় সৌম্যকে লোয়ার অর্ডারে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। এটা ঠিক যে, বিশ্বকাপ থেকেই রানে ছিলেন না সৌম্য। কিন্তু এটাও তো ঠিক, তাকে নিয়ে বিশ্বকাপের পর থেকে কখনও তিনে, কখনও পাঁচে, কখনও বা সাতে খেলিয়ে একটা বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, দলে তোমার নির্ধারিত কোনো জায়গাই নেই। ফর্ম না থাকলে কাউকে বাইরে রাখায় সবচেয়ে ভালো যদি তার চেয়ে কেউ করে, তাকেই সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু কম্বিনেশনের কারণে দলের সেরা স্ট্রাইক রেটের ব্যাটসম্যানকে একাদশে জায়গা দেওয়া যায় না, তখন সেটা দুর্ভাগ্যই বটে।
অন্যদিকে নাজমুল হোসেন শান্তকে টানা তিন নম্বরে খেলানোর পর সাকিব ফেরায় সেই জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার কাছেও বার্তাটা পরিস্কার- দলে চার সিনিয়রের জায়গা ঠিক রেখে তবেই বিকল্প খোঁজা চলবে। সাকিব এসে এই সিরিজে যতই তার রান ১৫, ০, ৪ থাকুক না কেন। যুক্তি সাজানো আছে সাকিবের জন্য- সে বিশ্বমানের খেলোয়াড়, পরের সিরিজেই ফিরে আসবে সে! 'পরের সিরিজ' তা যত পরেই আসুক না কেন। তার জন্য অপেক্ষা করার সময় আছে টিম ম্যানেজমেন্টের। অস্থিরতা যত ওই তামিমের সঙ্গী নিয়ে!
মন্তব্য করুন