ব্যাপারটি নিয়ে যে তিনি বুঝছেন না, সেটা বলা যাবে না। দলীয় অনুশীলনের বাইরেও প্রিয় কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে নিজের একাডেমিতে বেশ কয়েকদিন আলাদা সেশন করেছেন। জিম্বাবুয়ে গিয়েও একক অনুশীলন করেছেন কয়েকবার, কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। সেই যে এপ্রিলে আইপিএল থেকে ব্যাটে রানের খরা শুরু হয়েছে তার। সেটা গতকাল হারারেতেও অব্যাহত ছিল। মাত্র ১৯ রান করেই আউট হয়ে যান তিনি।

অবশ্য পরিসংখ্যান বলছে, দেশের হয়ে গত টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে গত পাঁচটি ইনিংসে এই উনিশই তার সর্বোচ্চ স্কোর। টিম ম্যানেজমেন্ট জানেন, একদিন না একদিন রানে ফিরবেনই তিনি; কিন্তু সেই 'একদিন' কবে আসবে, সেটা সাকিব নিজেও জানেন না। সেই আত্মবিশ্বাসটাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। আসলে পারছেন না তিনি।

ব্যাট হাতে এমন খারাপ সময় তার আগেও এসেছিল। গেল বিশ্বকাপের আগে কোচ সালাউদ্দিনকে নিয়েই ভারতে একান্ত অনুশীলন করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে সেই পরিশ্রমের মূল্যও পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপে কাট শটেই নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করেছিলেন। সেইসঙ্গে তিন নম্বরে তার সাহসী মানসিকতাও দলকে অনেক সাহায্য করেছিল। ঠিক একই কারণে ব্যাটিংয়ে তার অফফর্মটাও দলকে ভোগাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ঘরের মাঠে গেল জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তুলনামূলক ভালো ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। তিন ওয়ানডে আর একটি টেস্ট মিলিয়ে ওই সিরিজে দুটি ফিফটি পেয়েছিলেন 'এসএইচ সেভেনটি ফাইভ'।

তারপর ওই কলকাতা নাইট রাইডার্স থেকেই ফর্ম হারাতে থাকেন ব্যাটসম্যান সাকিব। আইপিএলে তিন ম্যাচে মোট ৩৮ রান করেছিলেন। এই আইপিএলের কারণেই শ্রীলঙ্কা সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। যুক্তি সাজিয়েছিলেন- টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ভালো হবে বলে। টি২০-র প্রস্তুতি তার কতটা ভালো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের টি২০ ম্যাচগুলোতেও। জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার আগে ঢাকা লিগে মোট আটটি ম্যাচ খেলে সাকল্যে ১২০ রান করেছিলেন। তার আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেতেও সর্বোচ্চ ১৫ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন।

ব্যাটিংয়ে কিছু না করতে পারার ক্ষতিটা বোলিং দিয়ে মাঝেমধ্যে পুষিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু এটাও সত্য যে, দেশের হয়ে তিন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং অর্ডারে খেলতে নেমে দিনের পর দিন রান না করাটা দলকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট মিলিয়ে গত তিন মাসে মোট ১৩ ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ৩৭ রান এসেছে, যেটা আবাহনীর বিপক্ষে মিরপুরে সেই আলোচিত-সমালোচিত ম্যাচে। এই ১৩টি ইনিংসের মধ্যে দশের মধ্যে আছে সাতটি!

দলের মোস্ট সিনিয়র একজন হওয়ায় তার এই ফর্মহীনতা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ হয়তো মিডিয়ার সামনে মুখ খুলছেন না। তবে তাকে ঘিরে দলের মধ্যে প্রচ এক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, সেটা সাকিব নিজেও জানেন।

সাকিবের সর্বশেষ ৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ

রান            প্রতিপক্ষ            ফরম্যাট
১৯             জিম্বাবুয়ে              ওয়ানডে
৩               জিম্বাবুয়ে                টেস্ট
৪               শ্রীলঙ্কা                  ওয়ানডে
০               শ্রীলঙ্কা                  ওয়ানডে
১৫             শ্রীলঙ্কা                  ওয়ানডে