হেডিংলিতে প্রথম ইনিংসে ভারতকে ৭৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর কে? এক বাক্যে সবাই জেমস অ্যান্ডারসনের নাম বলবে। দুরন্ত সুইংয়ে কোহলি-রোহিতসহ তিন উইকেট তুলে নিয়ে শুরুতেই ভারতের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। অ্যান্ডারসনের বয়স এখন ৩৯। ইংরেজ এ পেসার বুড়ো বয়সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটবিশ্ব। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ইয়ান চ্যাপেলের মতে, সুইংকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন অ্যান্ডারসন। বিশ্বের যে কোনো উইকেটে সুইং করানোর এক বিরল ক্ষমতার অধিকারী তিনি।

২০০৩ সালে নাসের হুসেনের হাত থেকে অভিষেক টেস্ট ক্যাপ নিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। এরপর একে একে মাইকেল ভন, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, অ্যালিস্টার কুক, জো রুট টেস্টে ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, কেভিন পিটারসনেও অল্প কয়েকটি টেস্টে টস করেছেন। কিন্তু গত ১৯ বছর ধরে ইংলিশদের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে একজনই ছিলেন, সবার প্রিয় 'জিমি'। ক্রিস গেইল, মহেন্দ্র ধোনিরা এখনও ক্রিকেট খেললেও অ্যান্ডারসনের মতো টেস্ট খেলার ধকল নেন না। আইপিএল কিংবা দেশের হয়ে টি২০ খেলেই তারা জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু অ্যান্ডারসনের সেই লোভ নেই। অর্থকড়ি, গ্ল্যামার- এই সব থেকে বহু দূরে ইংরেজ এই পেসার। নিজের সব শক্তি জমিয়ে রাখেন টেস্ট খেলার জন্য। সর্বশেষ টি২০ খেলেছিলেন তিনি ২০০৯ সালে, আর ওয়ানডে ২০১৫ সালে। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেন না তিনি। সবাই যখন টেস্ট ছেড়ে টি২০র পেছনে ছুটছেন, অ্যান্ডারসন তখন ঋষির ধ্যানে লাল বল নিয়ে দৌড়াচ্ছেন।

অবাক বিষয় হচ্ছে, এই চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সেও অ্যান্ডারসনের দাপটে মরচে পড়েনি, বরং যত দিন যাচ্ছে তত ধার বাড়ছে। বয়সের সঙ্গে তিনি আরও ফিট হচ্ছেন। মেদহীন চেহারায় গালে হালকা দাঁড়ি নিয়ে তাকে বল হাতে দৌড়াতে দেখে একটা প্রশ্ন অবশ্যই জাগবে, এই ফিটনেসের রহস্য কী? রহস্য লুকিয়ে আছে তার দৌড়ের মধ্যেই। ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, মধ্য তিরিশে পড়ার পরই নিজের দৌড়ের ধরন পাল্টে ফেলেন অ্যান্ডারসন। অনুশীলনের পর নিজের দৌড়ের দিকে আলাদা করে নজর দিতেন তিনি। এমনভাবে দৌড়াতেন যাতে পেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে চাপ কম পড়ে। শরীর যেন তাড়াতাড়ি ভেঙে না যায় সেদিকেও কঠোর নজরদারি ছিল তার। গত কিছু দিন ধরেই ইংল্যান্ড দলে স্টুয়ার্ট ব্রড ও অ্যান্ডারসনকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হতো যেন দুই প্রবীণের ওপর চাপ বেশি না পড়ে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই চোটে পড়ে ছিটকে যান ব্রড। এরপর থেকে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জিমি।