বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের ঘোরই যে কাটছে না। টি২০ বিশ্বকাপে প্রবেশের দিন থেকে মাঠে ও মাঠের বাইরে লাগামহীন কার্যকলাপ তাদের। কথা ও কাজে মেরু আর মরুর মতো অমিল। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির বেসারতি করা দলই মাঠে গিয়ে হয় নাস্তানাবুদ। 

সুপার টুয়েলভের চার ম্যাচ পার করেছে এই করে। হতে পারে চাকরির খাতিরে কোচরা সেলসম্যানের মতো কথার তুবড়িতে বাংলাদেশ দলকে বিশ্বকাপ মঞ্চে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। মাঠের ক্রিকেট তো মোড়কে মোড়া পণ্য নয় যে রংচঙ দেখে ভেতরটা বোঝা যাবে না। খেলা হচ্ছে বইয়ের খোলা পাতার মতো, যে কেউ দেখে ভালোমন্দ বুঝে নিতে পারেন। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারা দল অস্ট্রেলিয়াকে আজ হারিয়ে দেবে- এ কথা বিশ্বাস করার মতো লোক অন্তত এ মুহূর্তে পাওয়া কঠিন। তবুও স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ জেতার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তার বিশ্বাস, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য আত্মবিশ্বাস নিতে হলে বিশ্বকাপের শেষটা জয়ে রাঙাতে চাইবেন মাহমুদউল্লাহরা।

পেশাদার কোচদের এই হয়েছে জ্বালা; খারাপ করলেও চাবুকের পরিবর্তে খেলোয়াড়দের সমর্থন দিয়ে যেতে হয়। রাসেল ডমিঙ্গো, অটিস গিবসনের পর গতকাল সে কাজটিই করলেন রঙ্গনা হেরাথ, 'পেশাদার হিসেবে আমাদের প্রবল শক্তি নিয়ে ফিরতে হবে। আর একটি ম্যাচ বাকি আছে। আমাদের জয়ের মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকবার ম্যাচ জয়ের সুযোগ। আমি নিশ্চিত, ছেলেরা সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবে।' 

হেরাথ বোধ হয় ভুলে গেছেন, এই অস্ট্রেলিয়া সেই দল না, যাদের তারা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচও শেরেবাংলার মতো স্লো এবং টার্নিং নয়। তাই স্টিভেন স্মিথদের বিশ্বকাপ দলকে হারাতে হলে অলৌকিক ক্রিকেট খেলতে হবে টাইগারদের। স্পিন ট্র্র্যাকে খেলা হলেও স্কোরবোর্ডে বোলারদের ডিফেন্ড করার মতো রান দিতে হবে। গত চার ম্যাচে এই কাজটিই করে দেখাতে পারেননি ব্যাটাররা। চেষ্টায় যেখানে গলদ, সেখানে জয় নামক সোনার হরিণকে শিকল পরানোর বৃথা চেষ্টা যেন! কারণ অবশ্য আছে, পেশাদার ক্রিকেটে ম্যাচের আগে হারা যায় না। নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়া টাইগার কোচরা সেটাই করছেন।

এই সংস্করণে অসিদের বিপক্ষে ৯ ম্যাচ খেলে চারটিতে জয় বাংলাদেশের। পরিসংখ্যানের নিক্তিতে তোলা হলে আজকের ম্যাচে টাইগারদের পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বিশেষ করে দুই দলের শেষ মুখোমুখিতে বাংলাদেশ যেখানে সফল, সেখানে বিশ্বকাপ মঞ্চে জিততে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যে দলের লক্ষ্য সেমিফাইনাল খেলা, তারা সহজে ছেড়ে দেবে না। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অসিদেরও চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেরা চারের রেসে থাকা। যদিও পয়েন্ট পাওয়ার লড়াইয়ে মানসিক চাপে থাকবেন অ্যারন ফিঞ্চরা। সব হারানো বাংলাদেশ শিবিরে চাপ থাকার কথা নয়; বরং বাড়ি ফেরার আগে হালকা মেজাজে ভালো ক্রিকেট খেলা গেলে ভালো। হেরাথেরও বিশ্বাস, চাপহীন ক্রিকেট খেলবে দল, 'আমি যেটা বিশ্বাস করি, এই ছেলেরাই ভালো খেলার সামর্থ্য রাখে। আমাদের এখনও একটি ম্যাচ বাকি আছে। আমি নিশ্চিত, ছেলেরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ সামনে রেখে। আমাদের উইনিং কম্বিনেশন দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে হবে।'

জয়ের ছন্দে ফেরার জন্য স্পিননির্ভর দল খেলাতে পারে বাংলাদেশ। দুবাইয়ের কন্ডিশনও স্পিনারদের জন্য সহায়ক। সে ক্ষেত্রে শেখ মেহেদীর সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ খেলতে পারেন। তলপেটের ব্যথা ভালো না হওয়ায় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানের খেলা হচ্ছে না আজ। সুতরাং শেষ ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে অসিদের বিপক্ষে। দুবাইয়ে টসে জেতাও গুরুত্বপূর্ণ। মাহমুদউল্লাহরা টস জিতলে পরে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ, এই মাঠে বেশিরভাগ ম্যাচই চেজ করা দল জিতেছে।

এই ম্যাচ জিততে পারলে পরের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। টি২০ র‍্যাংকিংয়ে সেরা সাতে উন্নীত হবে দল। আর হেরে গেলে নবম স্থানেই থাকবে। তবে শেষ দুই ম্যাচ ক্যারিবীয়রা শ্রীলঙ্কা আর অসিদের কাছে হারলে র‍্যাংকিংয়ের সেরা আটে চলে যাবে বাংলাদেশ। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অষ্টম স্থান ধরে রাখা গেলে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে টাইগাররা। আইসিসির নতুন নিয়মে চলমান বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা দুই দল ছাড়াও ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত র‍্যাংকিংয়ের সেরা ছয় দল সরাসরি খেলবে পরের বিশ্বকাপে। সুপার টুয়েলভে খেলা নিচের চার দল খেলবে বাছাইপর্বে। বাংলাদেশ আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলে সমীকরণের ধাঁধায় পড়তে হতো না। তাই দেশে ফেরার আগে ঘোর কাটিয়ে আজ ম্যাচ জয়ের চেষ্টা করলে আখেরে লাভ বাংলাদেশ দলের।