টেস্টে অনেকদিন ধরেই নিয়মিত নন সাকিব আল হাসান। তাই ২০১৯ সাল থেকে বেশিরভাগ টেস্ট ম্যাচেই স্পিন বিভাগে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেও নেই সাকিব। সে কারণে উইকেট নেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলো তাইজুলকে। একাগ্রতা দেখিয়ে সাতটি উইকেটও পেলেন তিনি। গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে জুম সংবাদ সম্মেলনে তাইজুল নিজের মুখেই বললেন, সাকিবের রোলটা পালন করতে হচ্ছে তাকেই।

সাকিব অলরাউন্ডার হওয়ায় একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে তাইজুলের খুব একটা সমস্যা হয় না। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থাও থাকে বাঁহাতি এ স্পিনারের ওপর। বোলিংটা ভালোই করেন তিনি। এ বছর যে ক'টি টেস্ট খেলেছেন তাতে মোটামুটি ছন্দে ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন নিজের পুরোনো ছন্দ ফিরে পাওয়ায়। ড্যানিয়েল ভেট্টরির পরামর্শে মাঝে দু'বার বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করে ট্র্যাকচ্যুত হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। মনের জোরে সেখান থেকে ফিরেও এসেছেন পুরোনো অ্যাকশনে। যে কোচের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে ফিরে পেলেন তাইজুল, সেই সোহেল ইসলাম শিষ্যকে প্রশংসায় ভাসালেন গতকাল, 'আমার কাছে সাহসী ছেলে সবসময় পছন্দ। একটা পর্যায় থেকে আরেকটা পর্যায়ে যেতে ঝুঁকি নেবে, এ রকম চরিত্র পছন্দ। ওই সময় সে (তাইজুল) যে সাহস দেখিয়েছে বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন নিয়ে ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সেটিতে সফল হয়নি, তাই পুরোনো অ্যাকশনে চলে এসেছে। পুরোনো ছন্দ ফিরে এসেছে।'

৫৭ ওভারে ১৪৫ রানে কোনো উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। সেই দলকে ২৮৬ রানে বেঁধে ফেলার কারিগর ছিলেন তাইজুল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচে খুব বেশি টার্ন না পেলেও জোরের ওপর বল করে একের পর এক উইকেট শিকার করেন তিনি। এভাবে ছন্দ দেখানোর কারণ সম্পর্কে তাইজুল বলেন, 'এটা সত্যি যে, আমি আমার পুরোনো অ্যাকশনেই সফল। আসলে একটু চেষ্টা করেছিলাম যে, আরও ভালো কিছু করা যায় কিনা। অ্যাকশন যে বদল করা যাবে না বা করে যে বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তা নয়। অনেক বড় সাহায্য পেয়েছি সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে। অনেক আগে থেকেই উনার সঙ্গে কাজ করে আসছি। আমি যখন আবার পুরোনো অ্যাকশনে ফিরতে চেয়েছি, সোহেল ভাইয়ের কারণেই তা সহজ হয়ছে। কারণ উনি আমার অ্যাকশন সম্পর্কে খুব ভালো জানেন।'

শুধু অ্যাকশন দিয়ে নয়, দলের প্রতি দায়িত্ব থেকেও সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাইজুল। তার মতে, 'সাকিব ভাই অনেক দিন নিয়মিত খেলেন না। তাকে ছাড়াই আমাদের খেলতে হচ্ছে। যেহেতু সাকিব ভাই খেলছেন না তাই আমাকেই স্পিনে মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং আমি সেটা করছি।'

মিরপুরে স্লো ও টার্নিং উইকেটে খেলা হয়। স্পিনাররা সোজা বল ফেলেও টার্ন পান। ফ্ল্যাট উইকেটে সেটা সম্ভব হয় না। সে কারণে ফ্ল্যাট উইকেটে স্পিনারদের ভালো করার পথ খুঁজছিলেন তিনি, 'মিরপুরে যখন আমাদের স্পিনাররা খেলে, একটা মানসিকতা থাকে যে, অনেক আক্রমণাত্মক থাকব বা কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট পাব। কিন্তু এই ধরনের উইকেটে (চট্টগ্রাম টেস্টের মতো) বা দেশের বাইরে উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা থাকে না অতটা। এজন্যই আমরা গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করছি যে, এ রকম ফ্ল্যাট উইকেটে কীভাবে ধৈর্য ও নিশানা ধরে রেখে ওভারের পর ওভার বল করা যায়। স্পিনারদের মানসিকতায় যে বদলটা এসেছে, এটা একটা বড় ব্যাপার। সব জায়গায় মিরপুরের মতো উইকেট আমরা পাব না। তবে ছেলেরা এই যে শিখছে, এটাই ওদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।'

তাইজুলও মনে করেন, ফোকাস ধরে রেখে বোলিং করে গেলে যে কোনো উইকেটে সফল হতে পারবেন তারা।