প্রথম ইনিংসে কিউই পেসারদের গতি এবং সুইংয়ের কাছে পরাস্ত টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটিং বিপর্যয়ে ১২৬ রানেই গুটিয়ে যায় সাদমান-মুমিনুলরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন ইয়াসির আলী। ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল আরও ১৯৬ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে তারা এখনো পিছিয়ে ৩৯৫ রানে।  

ফলোঅনে পড়ায় ম্যাচের তৃতীয় দিন আবারো ব্যাটিংয়ে নামতে পারে বাংলাদেশ। অথবা নিউজিল্যান্ড দল আবারো নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে পারে। এই ব্যাপারে কিউই দলপতির সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।

এদিন টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন ট্রেন্ট বোল্ট। মেহেদী হাসান মিরাজকে বোল্ড করে উইকেটের ৩০০ পূর্ণ করলেন বাঁহাতি পেসার। ২৯৬ উইকেট নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে মাঠে নেমেছিলেন বোল্ট। প্রথম ওভারে সাদমানকে ফেরানোর পর তার শিকার হন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে বোল্ট তুলে নেন মিরাজের উইকেট। ৭৫ টেস্ট ম্যাচে বিরাট এ কীর্তি গড়লেন তিনি।

নিউ জিল্যান্ডের চতুর্থ বোলার হিসেবে এ কীর্তি গড়েছেন বোল্ট। তার ওপরে আছেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৪৩১), ড্যানিয়েল ভেট্টরি (৩৬১) ও টিম সাউদি (৩২৮)।

এর আগে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ল্যাথামের ডাবল সেঞ্চুরি ও কনওয়ের সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৬ উইকেটে ৫২১ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১১ রান ‍তুলতেই চার উইকেট হারায় সফররত বাংলাদেশ।

ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারেই শিকার টাইগার ওপেনার সাদমান। ৮ বল খেলে করেন ৭ রান তিনি। অভিষেকটা দুঃস্বপ্নের মতো হলো মোহাম্মদ নাইম শেখের। পাঁচ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই তাকে বোল্ড করে দেন সাউদি। 

৬ষ্ঠ ওভার পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৬ষ্ঠ ওভারে বোল্টের করা দ্বিতীয় বলে ল্যাথামের তালুবন্দি হন শান্ত। মাত্র ৪ রান করতে পারলেন শান্ত। বাংলাদেশের বিপদ আরো বাড়ে মুমিনুলের আউটে। রানের খাতা খোলার আগেই সাউদির বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

চা পানের বিরতির পর প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরলেন লিটন। শেষ সেশনে খেলতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ড হয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১৮ বল থেকে ৮ রান করতে পেরেছেন লিটন। 

বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলো নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কা।  ২৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল সফরকারীরা। শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে প্রতিরোধ পেয়েছে বাংলাদেশ। সোহান ও ইয়াসিরের ব্যাটে ষষ্ঠ উইকেটে প্রথমবার তারা জুটি বেঁধেছেন। দুজনের জুটিতে উঠেছে ৬০ রান। দলীয় ৮৭ রানে সাউদির বলে এলবির শিকার হন সোহান। ৬২ বলে ৪১ রান করেন তিনি।

এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মিরাজও। ইয়াসির রাব্বির সঙ্গে ৯.৪ ওভারের জুটিতে ২২ রান যোগ করেন বোল্টের ৩০০তম টেস্ট উইকেটে পরিণত হন ৫ রান করা মিরাজ। তার বিদায়ে ফলো-অনের শঙ্কা আরও চেপে বসে বাংলাদেশের ওপর।

এর মাঝেই নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ইয়াসির রাব্বি। ছয় নম্বরে নেমে সাত চারের মারে ৮৫ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। তবে তার ফিফটি হওয়ার আগের বলেই অষ্টম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরের পথ ধরেন ২ রান করা তাসকিন আহমেদ। ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে জেমিসনের বাউন্সারে হাতে ব্যথা পান ইয়াসির। ঠিক পরের বলেই আরেকটি বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েন ড্যারেল মিচেলের হাতে। ইয়াসির করেন ৯৫ বলে ৫৫ রান।

পরের ওভারে শরিফুল ইসলামকে বোল্ড বাংলাদেশকে অলআউট করেন বোল্ট। এতেই ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ফাইফার তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেওয়া বোল্ট। এছাড়া সাউদি তিনটি ও জেমিসনের শিকার দুই উইকেট।

এর আগে মাত্র ১ উইকেটে প্রথমদিন শেষ করা দুই কিউই ব্যাটার টম লাথাম এবং ডেভন কনওয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলায় আবারও ব্যাট করতে নামেন। এবাদত হোসেনের করা দিনের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে কনওয়ে। দলীয় ৩৬৩ রানে কনওয়েকে রান আউট করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফলে ২১৫ রানে ভাঙে এই জুটি। আউট হওয়ার আগে করেন ১০৯ রান। ১৬৬ বলে খেলা ইনিংসটি ১২টি চার এবং একটি ছয়ে সাজানো।

কনওয়ে আউট হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ব্যক্তিগত ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন দলীয় অধিনায়ক এবং ওপেনার টম লাথাম। ব্যক্তিগত ২৮ রানে রস টেলর আউট হওয়ার পর শূন্যরানেই ফেরেন হেনরি নিকোলস। এই উইকেট দুটিই নিয়েছেন টাইগার পেসার এবাদত। পরে ড্যারেল মিচেল আউট হয়েছেন মাত্র ৩ রানে।

ষষ্ঠ উইকেটে টম ব্লান্ডেলকে সঙ্গে নিয়ে ৭৬ রানের জুটি গড়েন লাথাম। রান তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠা কিউই দলনেতা সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশি অধিনায়কের বলে। আউট হওয়ার আগে করেন ২৫২ রান। ৩৭৩ বলে লেখা এই ইনিংসটি ৩৪ রান এবং ২টি ছয়ে সাজানো।

এদিকে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করে ৫৭ রানে ব্লান্ডেল এবং ৩ রানে জেমিসন অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশ একাদশ:

সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, নুরুল হাসান সোহান, লিটন দাস, ইয়াসির আলি, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও শরীফুল ইসলাম।

নিউজিল্যান্ড একাদশ:

টম লাথাম, উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, রস টেলর, হেনরি নিকলস, টম ব্লান্ডেল, ড্যারেল মিচেল, কাইল জেমিসন, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট।