কিছু সীমাবদ্ধতা, কিছু বিতর্ক নিয়ে ২২ জানুয়ারি মাঠে গড়ায় বঙ্গবন্ধু বিপিএল। ধীরে ধীরে দুর্বলতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠে। ঢাকার প্রথম পর্ব বাদ দিলে উইকেটও ভালো ছিল। লিগ পর্ব শেষ করে বিপিএলে এখন প্লে-অফে। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এলিমিনেটরে খুলনা টাইগার্সের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আর প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। স্বাভাবিকভাবেই আজ আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে কোয়ালিফায়ার। আর এই আকর্ষণ বাড়িয়ে দিতে মাঠে ফিরছে দর্শক। সংখ্যায় বেশি না হলেও বিপিএলে দর্শক ফেরাটাই বড় খবর। এতে করে 'ইউনিভার্স বস' ক্রিস গেইলের আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচবে। অন্য তারকাদেরও প্রেরণা জোগাবে সমর্থকদের স্লোগান। এমন রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ্য করে ফাইনালের টিকিট পেতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে মরিয়া হয়ে লড়বে সাকিবের বরিশাল আর ইমরুলের কুমিল্লা। তাই সমীহের ভেতরেও লুকিয়ে আছে মাঠের চ্যালেঞ্জ।

ভালোমানের বিদেশি ক্রিকেটার এনে যে দুটি দল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের আকর্ষণ বাড়িয়েছে, সেই বরিশাল আর কুমিল্লা টুর্নামেন্টের সেরা দল হিসেবেই খেলছে প্রথম কোয়ালিফায়ার। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, মুজিবুর রহমান, মঈন আলি, ফাফ ডু প্লেসিস, সুনিল নারিনরা টুর্নামেন্টের মূল আকর্ষণ। এই বৈশ্বিক টি২০ তারকাদের ক্রিকেট শো দেখার অপেক্ষায় দর্শক। বিশেষ করে গেইল শো দেখা হয়নি তাদের। ইউনিভার্স বস পুরো টুর্নামেন্টে একটিমাত্র হাফসেঞ্চুরি করেছেন। কোনো সন্দেহ নেই, প্লে-অফে তার ব্যাট থেকে বড় ইনিংস চাইবে দল। যদিও ৪২ বছর বয়সী গেইল ছন্দ হারিয়েছেন আগেই। এখন তিনি চলছেন নামের ভারে। এরপরও তার কাছে দর্শকের চাওয়া অনেক। সেটা বোঝা যায়, গেইল এখনও দু-একটি চার-ছক্কা হাঁকালে গর্জে ওঠে গ্যালারি। গেইলের চেয়ে ব্রাভোর কাছ থেকে বেশি পাচ্ছে দল। প্রতি ম্যাচেই কমবেশি পারফর্ম করছেন ক্যারিবীয় এ অলরাউন্ডার। তার ট্রেডমার্ক ড্যান্স আজও দেখা যেতে পারে মিরপুরে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে বরিশালের মূল আকর্ষণ থাকবেন সাকিব আল হাসান। কুমিল্লার জন্য আজ বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাকিব-মুজিব জুটির ৮ ওভার স্পিন খেলা। সাকিবের কথা অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে। ব্যাটে-বলে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখিয়ে এই বিপিএলে টানা পাঁচ খেলায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার বিশ্বরেকর্ড গড়ে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছেন তিনি। ফাইনালে ওঠার ম্যাচেও বরিশালের ভরসা সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। তবে কুমিল্লার মতো সমশক্তির দলের বিপক্ষে জিততে হলে একা সাকিবের ওপর নির্ভর না করাই ভালো। তিন বিভাগে সমন্বিত পারফরম্যান্স দিয়ে অলআউট খেলতে হবে টেবিল টপারদের। গতকাল দলের প্রতিনিধি হয়ে জিয়াউর রহমান সে কথাই বললেন, 'আমরাও ভালো দল, কুমিল্লাও। এ ধরনের ম্যাচে যারা নার্ভ শক্ত রাখতে পারবে, নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলবে, জিতবে তারাই।'
কুমিল্লা বিপিএলের অভিজ্ঞ দল, দু'বারের চ্যাম্পিয়ন। বড় ম্যাচের চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। মঈন আলি, নারিনরা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলে হাত পাকানো। কুমিল্লার দেশি ক্রিকেটাররাও ছন্দে আছেন। তাদের ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই গভীরতা বেশ। কুমিল্লার উপদেষ্টা কোচ স্টিভ রোডসের মতে,'টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর কাল (আজ) আমাদের জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি, ওরা (বরিশাল) ভালো দল। অন্য সবার মতো আমরা ওদের সঙ্গে খেলেছি, ওদের শক্তির জায়গা জানি। তবে আমরাও খুব ভালো খেলছি। খুব কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং একটি ম্যাচের অপেক্ষায় আছি।' লিগ পর্বে বরিশাল জিতেছে সাতটি ম্যাচ, কুমিল্লা ছয়টি। দুই দলের দু'বারের মুখোমুখিতে জয়ের অনুপাত সমান। সেদিক থেকে খুব একটা পার্থক্য নেই। বরং মঈন শেষ ম্যাচের মতো অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখালে বিপদে পড়তে পারে বরিশাল। সেক্ষেত্রে দুই দলের ড্রেসিংরুম সক্রিয় থাকবে তারকাদের অকার্যকর করতে প্ল্যান দিতে। দেশের দুই চৌকস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এ বিষয়ে পারদর্শী। তবে সাকিব সক্রিয় থাকলে ভেস্তে যেতে পারে সবার পরিকল্পনা।