ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রিয়াল ছেড়েছেন তিন বছরের বেশি হলো। এই তিন বছরের প্রথম বছর লস ব্লাঙ্কোসরা ভুগেছে অনেকখানি। আক্রমণভাগে সিআর সেভেনের শূন্যতা পূরণে কোচ বদলেছে একাধিক। অনিয়মিতদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বারবার। ফরমেশন নেড়েচেড়ে হয়েছে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবু সমাধানের খোঁজ পায়নি ক্লাবটি। তবে আর দশটি ক্লাবের মতো রাশি রাশি খেলোয়াড় কিনে অহেতুক অর্থের অপচয় করেনি তারা। আস্থা ছিল পুরোনোদের ওপর। কেবল সুদিনের অপেক্ষা মাত্র। ধীরে ধীরে সেই সুবাস সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। তরুণ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর অভিজ্ঞ করিম বেনজেমা হয়ে যান 'দ্য গেম চেঞ্জার'। গত মৌসুম থেকে এই দু'জনের মধ্যে বোঝাপড়াটাও জমে বেশ। যার আরেকটি ঝলক দেখা গেল বুধবার রাতে ঘরের মাঠে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্নায়ুঠাসা যুদ্ধে প্রধান সেনাপতির কাজটা করেছেন বেনজেমাই। তারকায় ঠাসা পিএসজিকে একাই কাত করেছেন, নাচিয়েছেন পুরো বার্নাব্যুর গ্যালারি, বসেছেন রিয়ালের নতুন রাজার সিংহাসনে।

রাউল গনজালেস, স্টেফানো, পুসকাসের পর যে বার্নাব্যুতে লম্বা সময় রাজত্ব করেন রোনালদো। তিনি যাওয়ার পর সেই সোনালি ঘরটা নিজের করে নিয়েছেন বেনজেমা। অন্তত বুধবার রাতে পিএসজিকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর মাদ্রিদবাসী তাকে রাজার আসনে বসাতেই পারে। কেবল একটা ম্যাচের কারিগর কেন, রেকর্ড বই ওলটপালট করে দিয়েও এই আসনের দাবিদার এখন বেনজেমা। তিন গোল করে রিয়ালের সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করলেন। দলটির হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন রোনালদো। তার গোলসংখ্যা ৪৫০টি। এর পরের নামটি রাউল গনজালেসের। তিনি করেছেন ৩২৪ গোল। আর বেনজেমার গোলসংখ্যা এখন ৩০৯টি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তো সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় এখন দুইয়ে উঠেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার।

একে থাকা রোনালদোর মোট গোল ১০৫টি। এতদিন রিয়ালের জার্সিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গোলদাতা ছিলেন রাউল গনজালেস। তার গোলসংখ্যা ৬৬। পিএসজির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তাকে টপকে যান বেনজেমা (৬৭)। এখানেই শেষ নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের যে পাঁচজন হ্যাটট্রিক করেছেন। তাদের মধ্যে বেনজেমা দ্বিতীয় সর্বাধিক হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়। সবচেয়ে বেশি সাতটি হ্যাটট্রিক করেন রোনালদো। আর তিনটি বেনজেমা। বাকি তিনজন (রোনালদো লিমা, রদ্রিগো ও গনজালেস) একটি করে হ্যাটট্রিক করেছেন। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউটে নিজ দেশের ক্লাবের বিপক্ষে প্রথম হ্যাটটিক করা খেলোয়াড়ও বেনজেমা।

৫৯ হাজার ৮৯৫ জন দর্শক; এমবাপ্পের গোলে যাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা, ৬১ থেকে ৭৮ এই সতেরো মিনিট তাদের উল্লাসে নড়ে যায় পিএসজির ভিত। তাই অনেক চেষ্টা করেও আর ম্যাচের গতিবিধি বদলাতে পারেননি মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেরা। ম্যাচের পর বেনজেমাও দর্শকদের ক্রেডিট দিতে ভোলেননি, 'এই ম্যাচে দর্শকদের অনুভূতি যেমন ছিল সেটাই আমরা এতদিন চেয়েছিলাম। এই জয়টা তাদের জন্যই।'