- খেলা
- ২০ বছরের খরা কাটানোর সিরিজ
২০ বছরের খরা কাটানোর সিরিজ

ছবি: ফাইল
পরিচিত মহলে কথাটি মুশফিক প্রায়ই বলে থাকেন, আমরা বিদেশে যখনই কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলতে যাই, সেখানে কোনো না কোনো ইতিহাসের হাতছানি থাকে। মুশফিকের সেই কথা ধরেই বলা যায়, আজ সেঞ্চুরিয়নে বিকেল ৫টায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যখন বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামবে, তখনও সেই ইতিহাস লেখার সুবর্ণ সুযোগ থাকবে তামিমদের সামনে। সেই ২০০২ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত অভিযাত্রী টাইগাররা। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি২০ মিলিয়ে গত কুড়ি বছরে কুড়িটি ম্যাচ খেলেছে স্বাগতিকদের বিপক্ষে। দুর্ভাগ্য, যার মধ্যে একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশের। এবার সেই বন্ধ্যত্বই যেন ঘোচানোর পণ করেছে বাংলাদেশ দল। তামিমদের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তো ঘোষণাই দিয়েছেন- 'এবার আমরা এমন কিছু করে দেখাব, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ আগে কখনোই করতে পারেনি।'
স্বভূমে দাঁড়িয়ে ডমিঙ্গোর এতটা আত্মবিশ্বাসের কারণ তিনি খোলাসা করেননি। তবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে এভাবেই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে টাইগাররা ইতিহাস গড়েছিল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হারের বন্ধ্যত্ব ভেঙে ফেলেছিল। সেটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এবার আফ্রিকায় হবে না কেন? তা ছাড়া আত্মবিশ্বাসের কারণ তো আরও রয়েছে। যদিও তা তিন বছর আগের কথা, কিন্তু স্মৃতি যে এখনও টাটকা। লন্ডনের ওভালে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই প্রোটিয়া বধ করেছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচটিতে ৩৩০ রান তুলেছিলেন সাকিব-সৌম্যরা। দু'দলের ওয়ানডেতে সর্বশেষ দেখা তো ওটাই। ডি কক- ডু প্লেসিসদের যদি বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হারানো যায়, তাহলে বাভুমাদের উঠানে গিয়ে কেন একটি জয় মিলবে না? অ্যালান ডোনাল্ড, আলভে মরকেলদের কোচিং প্যানেলে এনে সেটাই যেন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন রাসেল ডমিঙ্গো। প্রোটিয়া কাঁটা দিয়েই প্রোটিয়া-বধের একটা কৌশল হয়তো তৈরি করেছেন ডমিঙ্গো। যদিও এটা মেনে নিয়েই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন যে, এই সিরিজে অবশ্যই দক্ষিণ আফ্রিকা ফেভারিট আর বাংলাদেশ আন্ডারডগ। এই জানুয়ারিতেই ভারতকে ঘরের মাঠে ৩-০ সিরিজ হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ওপর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রোটিয়াদের সেরা দলটিই খেলছে। আইসিসির সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় দশ ম্যাচে তিন জয় নিয়ে দশ নম্বরে রয়েছে। গত বছর তারা ঘরের মাঠে পাকিস্তান আর অ্যাওয়ে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হেরেছে। উপমহাদেশের স্পিনারদের সামনে প্রোটিয়ারা যে খানিকটা অস্বস্তিতে থাকে সেটা বেশ স্পষ্ট। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ থেকে সুপার লিগের পুরো ত্রিশ পয়েন্ট নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেজন্য দলের আটজন আইপিএলে থাকলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেই তারা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডি কক, মালান, বাভুমা, মার্করাম, ফন ডার ডুসেন আর ডেভিড মিলার মিলিয়ে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইন যথেষ্ট শক্তিশালী। সেই সঙ্গে রাবাদা, এনগিডি, শামসি, প্রিটোরিয়াস মিলে বোলিং লাইনআপটা এমন যে, সেখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তবে কে না জানে, নিজেদের দিনে টাইগারদের রূপ কতটা ভয়ংকর হতে পারে। নিউজিল্যান্ড আর আফগানিস্তান সিরিজ থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন লিটন দাস। ওপেনিংয়ে তার ভালো একটি ইনিংস দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে। আজকে যে মাঠে খেলতে নামছে বাংলাদেশ সেখানে গত রোববারেও একটি ঘরোয়া ম্যাচ হয়েছিল। যেখানে সাড়ে তিনশর ওপর রান উঠেছিল। যদিও এই মাঠটি দক্ষিণ আফ্রিকার পেস সহায়ক হিসেবেই পরিচিত সবার কাছে। কিন্তু গত কয়েক বছর মাঠের পিচে বদল আনা হয়েছে। আর তাই এখানে রানের ফুলঝুরি উঠতে পারে এবং সেটা কাজে লাগানোর জন্য তিন নম্বর ব্যাটিংয়ে সাকিবের কাছ থেকে দল আজ অনেক কিছুই প্রত্যাশা করছে। সেই সঙ্গে মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকেও দায়িত্বশীল ইনিংস দেখার অপেক্ষা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সাতে আফিফ হোসেন আর আটে মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে কতটা দিতে পারে তার ওপরও নির্ভর করছে টাইগারদের টোটাল স্কোর। বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর, তাসকিন আর শরিফুল থাকবেন। টাইগারদের এই বোলিং লাইনআপ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তবে বিশ্বকাপের যে ম্যাচটি বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল, সেখানে তিনশর ওপর রান ওঠার পেছনে পাওয়ার প্লের একটা বড় ভূমিকা ছিল। আজও অন্তত সেই পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাচ মিসের যে ঘুণপোকা ধরেছে গত কয়েকটি সিরিজে। সেটা থেকেও নিজেদের মুক্ত করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের হারাতে হলে আসলে সব জায়গা থেকেই নিখুঁত হতে হবে আজ টাইগারদের।
মন্তব্য করুন