সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজেও তাকে মনে হয়েছে 'ছায়া কোচ'! জেমি সিডন্সের আগমনের পর নেটে ব্যাটারদের সঙ্গে বেশি তাকেই কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকেও সিডন্সের ক্লাসের শ্রোতা মনে হয়েছিল। তবে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে কিন্তু ডমিঙ্গোর ওপরই পুরো কৌশল সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তার স্বভূমি, তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন আর ক্রিকেট সংস্কৃতির ওপরও তার দখল রয়েছে; সে কারণে তার ওপরই আস্থাটা বেশি।

নিজের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেয়ে রাসেল ডমিঙ্গোও তার মতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। আলভে মরকেলকে শুধু তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের জন্য হায়ার করেছেন। তার হাতে পাওয়ার হিটিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন ডমিঙ্গো নিজেই। এ ছাড়াও বোলিং কোচ হিসেবে অ্যালন ডোনাল্ডকে তারই সুপারিশে আনা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই সিরিজে টাইগাররা অনেকটা প্রোটিয়া কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে চাইছে। বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এতটা স্বাধীনতা বোধহয় তিনি আগে কখনোই পাননি। তাই এবারের সিরিজটি রাসেল ডমিঙ্গোর জন্যও বাড়তি চ্যালেঞ্জ।
অপেক্ষা সেটা দেখার যে, ডমিঙ্গো, ডোনাল্ড আর মরকেল- এই ত্রয়ী কোচ দিয়ে টাইগাররা কতটা সফল হতে পারে এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। এই সিরিজটির জন্য দেশ থেকে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারেনি তামিমের ওয়ানডে স্কোয়াড। জোহানেসবার্গে পৌঁছেই যা কিছু অনুশীলন করেছেন তারা। তবে এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ, পাওয়ার হিটিং প্র্যাকটিস, ক্যাচিং প্র্যাকটিস নিয়ে বেশ কিছু সেশন পার করেছেন তামিমরা। আজ সেঞ্চুরিয়ানের যে সুপারস্পোর্টস পার্কে খেলা হবে, সমুদ্র পিষ্ঠ থেকে তা এক হাজার ৪৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অনভ্যস্ততার কারণে অনেকেরই শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্বস্তি হয়। এই ধরনের কন্ডিশনে ক্যাচিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে অনেক সময়ই ভুল হয়ে থাকে।

রাসেল ডমিঙ্গোর এ সবই জানা। তাই স্বভূমে দাঁড়িয়ে ছেলেদের এই ব্যাপারগুলোতেই সতর্ক করে দিয়েছেন ডমিঙ্গো। জানিয়ে রেখেছেন, এই মাঠে একটি বা দুটি ক্যাচ মিসের খেসারত কতটা মারাত্মক হতে পারে। ডমিঙ্গো মনে করেছেন, একটি বা দুটি সেশনে ব্যাটিং অনুশীলন করলেই ব্যাটিংয়ের সব ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে ওঠা যায় না। তবে ফিল্ডিংয়ের ভালো কিছু সেশন সেক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। ডমিঙ্গো তার দলের ব্যাটিংয়ের কৌশলের দায়িত্বটা ছেড়ে দিয়েছেন মূলত আলভে মরকেলের কাছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে নয়, মরকেল বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মাত্র পাঁচ দিনের জন্য। এমনকি তিনি টিম হোটেলেও থাকছেন না। বাড়ি থেকে প্রতিদিন মাঠে আসছেন।

আর বোলিংয়ের দায়িত্বটা এরই মধ্যে কাঁধে তুলে নিয়েছেন কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। তরুণ পেসার শরিফুলকে নিয়ে বেশ আশাবাদী। ডমিঙ্গোর এই 'নিজস্ব সিরিজ'টা পরীক্ষকের মতো পর্যবেক্ষণ করছেন দলের সঙ্গে থাকা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। টি২০ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর ডমিঙ্গোকে অনেকটা ওএসডি করে রাখা হয়েছিল। ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজে দলের পুরো দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনকে। যদিও সেই সিরিজে তিনি সফল ছিলেন না। তার পরই ফের ডমিঙ্গোকে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে পর্যন্তও সেভাবে সক্রিয় থাকতে পারেননি তিনি।

এবার বিসিবি তার ওপর আস্থা রেখেছে নিজের দেশে টাইগারদের দায়িত্ব দিয়ে। ডমিঙ্গোর বিশ্বাস, ওয়ানডেতে তার দল অনেকটাই ব্যালেন্সড। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর মতো সব ধরনের ক্ষমতা তার দলের রয়েছে। যদি সেটা সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে হয়তো আগামী টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আর টাইগারদের চাকরি নিয়ে ডমিঙ্গোর কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।