- খেলা
- চামড়াঘাট ও ভৈরব আড়তে হাওরের বোরো ধান, দাম নিয়ে হতাশা
চামড়াঘাট ও ভৈরব আড়তে হাওরের বোরো ধান, দাম নিয়ে হতাশা

ট্রলারে আড়তে আনা বোরো ধান
এবারের বোরো মৌসুমে হাওরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ৮০ ভাগ পুষ্ট হলেই বোরো ধান কেটে ফেলার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে কৃষক পরিবারগুলোকে এই নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ হাওরের কৃষক বোরোধান গোলায় তুলতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। যদিও শ্রমিক সংকটের কারণে তারা দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করে গোলায় তুলতে পারছে না।
এদিকে কিশোরগঞ্জের ধানের প্রধান মোকাম করিমগঞ্জের চামড়াঘাট ও ভৈরবে আড়তগুলোতে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চলের ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও মিঠামইনসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা এলাকা থেকে এই দুই মোকামে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আসছে। তবে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা দিশেহারা। দাম নিয়ে কৃষকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় এরই মধ্যে হাওর অঞ্চলে আগাম ২৮/২৯ জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকরা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। আবার লগ্নিকারী কৃষকদের একটি বড় অংশ ধান নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন। ঋণের টাকা পরিশোধের আশায়। কিন্তু বাজারে ধানের উপযুক্ত মূল্য নেই।
গত ১৩ ও ১৪ এপ্রিল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোতে প্রতি মণ মোটা ধান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং চিকন ধান ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা ও ৯৫% শুকনো ধান সর্বোচ্চ ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নানা স্থান থেকে নতুন ধান আসতে শুরু করেছে চামড়াঘাট ও ভৈরব বাজারে।
হাওরের সঙ্গে নদীপথে চামড়াঘাট ও ভৈরব বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ থাকায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। এই দুই বাজারের শতাধিক আড়তে এসব ধান বিক্রি হচ্ছে।
ইটনা উপজেলার ধনপুর বাজারের কৃষক পুলিশ মিয়া জানান, কৃষকরা প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না। জমিতে ফসল ফলাতে প্রতিমণ ধান খরচ হয়েছে হাজার টাকারও বেশি। অথচ বাজারে গিয়ে কোনো কোনো কৃষক বাধ্য হয়ে লোকসানে ধান বিক্রি করছে।
ধানবিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, তার ৩৫ শতাংশ জমিতে ধান ফলাতে খরচ পড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। আর প্রতি ৩৫ শতাংশ জমিতে ধান উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৮ মণ। উৎপাদিত ধান বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করলে কিছুই থাকছে না।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরবে ধান বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক জমশেদ মিয়া। তিনি বলেন, হাওরের অধিকাংশ কৃষক জমি পত্তন নিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জমি চাষ করেন। সে জমিতে ফসল উঠানের পর দেনা পরিশোধ করতে তাড়াতাড়ি করে ধান বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করে কোনো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। ন্যায্য দামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা বলেন, হাওরের বেশিরভাগ কৃষকই গরিব। তাই বৈশাখ মাসের শুরুতেই তাদের ধান বিক্রি করতে হয়। কারণ মহাজনি সুদ পরিশোধ করতে তাদের উপর চাপ আছে। যদি কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতেন তাহলে ভালো দাম পেতেন।
কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. মজিবুর রহমান বেলাল বলেন, বাজারে আসা নতুন ধান বেশিরভাগই ভেজা। আবার কিছু ধান আধা-পাকা। তাই দাম খুবই কম। এসব ধান শুকিয়ে বিক্রি করলে কৃষকরা দাম আরও বেশি পেতেন।
তিনি কৃষকদেরকে এখন বিক্রি না করে ধান শুকিয়ে গুদামজাত করার পরামর্শ দেন। তাতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করলে এবার কৃষক লাভবান হবে বলে জানান। তাছাড়া প্রতি বছরই নতুন ধান বাজারে আমদানি হলে শুরুতে দাম কম থাকে। বাজারে ধানের দাম কম-বেশির ব্যাপারটি আড়ত মালিকদের ওপর নির্ভর করে না। সরকার কৃষকের পক্ষে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য করুন