পাড়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলেও খেলোয়াড়দের জন্য সম্মানী থাকে। খেপ খেলতেও লাখ টানা নেন সাব্বির রহমানরা। সেখানে বিসিবির একটি টুর্নামেন্টে ম্যাচ ফি দেওয়া হয় এক হাজার টাকা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ ফি এটি। বছরের পর বছর একই ম্যাচ ফি নিয়ে খেলতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। 

জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের অনুরোধেও প্রথম রাউন্ডে ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়নি। তবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ ফি কিছুটা বেশি। প্রতি ম্যাচে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। বিসিবি টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যৌক্তিক ম্যাচ ফির পক্ষে। আগামী বছর থেকে ক্রিকেটারদের সম্মানী বাড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।

গত বছর নির্বাচনী এজিএমে জেলা ফোরামের সভাপতি আশিকুর রহমান মিকু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাচ ফি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ম্যাচ ফি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও দেন। নির্বাচিত হয়ে বর্তমান কমিটির এজিএমের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের বাজেট বাড়েনি এক টাকাও। 

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ববি বলেন, ‘জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাচ ফি এবং সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই অপ্রতুল। বাস্তবসম্মত না। এই বাজেট আগেই করা ছিল। আমাদের ইচ্ছা আছে আগামী মৌসুমে যৌক্তিক ম্যাচ ফি নির্ধারণ করা। আমি দায়িত্ব নিয়েছি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে। বিষয়টি জানা ছিল না। আমি দায়িত্বে থাকলে আগামী মৌসুমের বাজেট নিয়ে কাজ করব। আশা করি বর্ধিত হবে। বোর্ডের কাছে সুপারিশ করব যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত সম্মানীর জন্য।’ 

৬৪টি জেলা খেললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় সরে গেছে। ফেরানোর আগ্রহ নেই বিসিবির।

বিভাগের হয়ে খেললে ৬৫ হাজার টাকা, জেলার হয়ে খেললে ১ হাজার টাকা।

ডিএ ৮০০ আর হোটেল ভাড়া ১ হাজার টাকা

জেলা পর্যায়ের খেলা কেউ দেখে না। ভালো খেলেও ফোকাসে আসে না কেউ।

জেলাগুলোকে দল প্রস্তুত করতে ৭৫ হাজার টাকা করে দেয় বিসিবি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা হচ্ছে। ৬৪টি জেলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দলগুলো নিয়মিতই খেলত। বর্তমানে জেলাগুলো খেললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় সরে গেছে। বিসিবিরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খেলায় ফেরাতে তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না।

বাজেট না বাড়লে জেলাগুলোও চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ঐতিহ্যবাহী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পরিণত হতে পারে মানহীন টুর্নামেন্টে। খুলনা জেলা দলের ক্রিকেটার বিশ্বনাথ হালদারের মতে, ‘ক্রিকেট এখন পেশাদার খেলা। খেলোয়াড়দের রুটিরুজি। বিভাগের হয়ে জাতীয় লিগে খেললে ৬৫ হাজার টাকা ম্যাচ ফি পাই। জেলার হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে পাই এক হাজার টাকা। সামান্য “টোকেন মানি”। এখন পাড়ার টি২০ টুর্নামেন্টে খেললেও ১৫ হাজার টাকা দেয়। বিসিবির কাছে খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে আমার অনুরোধ থাকবে সম্মানী বাড়ানোর। যাতে ভালো ক্রিকেটাররাও খেলতে আগ্রহী হয়। পাশাপাশি টুর্নামেন্টে যারা ভালো করে তাদের জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। জেলা পর্যায়ের খেলা কেউ দেখে না। অনেকে ভালো খেলেও ফোকাসে আসে না। যে জোনগুলোতে খেলা হয় সেখানে বোর্ডের পক্ষ থেকে কেউ থাকলে উদীয়মান ক্রিকেটাররা নজরে পরবে।’

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ বহু বছর ধরেই বিসিবির দায়সারা টুর্নামেন্ট। জেলার ক্রিকেটের লাইফলাইলে অপিজেন দিতে ক্রিকেটের এই পিকনিকের আয়োজন করা। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গড়ে তোলা হলে টুর্নামেন্টটি আরও গুছিয়ে করা যেত বলে মনে করেন ববি।

তার মতে, ‘বিসিবির পক্ষে এত বড় টুর্নামেন্ট জেলায় জেলায় গিয়ে মনিটর করা সম্ভব হবে না। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা থাকলে তারাই প্রথম রাউন্ডের খেলা চালাত। জাতীয় পর্যায় দেখত বিসিবি। তাতে খেলোয়াড় বাছাই করাও সম্ভব হতো।’

জেলাগুলোকে দল প্রস্তুত করতে ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডের আট দলকে দেওয়া হয় আরও এক লাখ টাকা করে। প্রতিটি সদস্যের জন্য ডিএ ৮০০ টাকা আর হোটেল ভাড়া এক হাজার টাকা।

যেটা খুবই কম বলে জানান টাঙ্গাইল জেলা দলের ম্যানেজার মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু, 'খেলোয়াড়দের কোনো কিছু না দিলেও একটি দলের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাগে। টাঙ্গাইল দল এবার যশোর ভেন্যুতে খেলেছে। হোটেল ভাড়া লেগেছে ৯০ হাজার টাকা। যাতায়াতের খরচ তো আছেই। প্র্যাকটিস কিট, জার্সি কিনতে হয়েছে। ৩০ জন ছেলেকে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করায় প্রতিদিন দুইশ টাকা করে গাড়ি ভাড়া দেওয়ায় ছয় হাজার টাকা করে লেগেছে। বিসিবি থেকে যেটুকু পাই তার সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে দল চালাই। আশা করব বর্তমান বাস্তবতায় খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে বিসিবি।'

জেলার ক্রিকেট সংগঠকদের এই আর্জি দেশের ধনী ফেডারেশন বিসিবি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখবে আশা করাই যায়।