
পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় 'মা দিবস'। এই বিশেষ দিনে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে তিন তরুণের মায়ের কথায় সাজানো হলো বিশেষ আয়োজন ...
এবারের ঈদটা পরিবারের বাইরেই কেটেছে। শহীদ আহছান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামেই কাটল ঈদের দিন। কারণ ঈদের রাতে আমরা ইরাক এসেছি। এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং টুতে অংশগ্রহণের জন্যই ইরাক আসা। এই ঈদে খুব মিস করেছি মায়ের হাতের লুচি-গরুর মাংস। বাড়িতে ঈদের সকালটা শুরু হতো মায়ের হাতের এই বিশেষ রান্না দিয়ে। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বাবার সঙ্গে চলে আসি নীলফামারী জেলা শহরে। ভর্তি হই স্থানীয় আনন্দ নিকেতন মডেল স্কুলে। তখনকার দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে এখন। মায়ের সঙ্গে কাটানো সেসব দিন কত আনন্দের ছিল। বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যেতাম।
ঘটি-বাটি, পুতুলসহ কত কি নিয়ে আসতাম। এনে বারান্দায় বসে খেলতাম। তাতেই ছিল রাজ্যের আনন্দ। একটু মাথা তোলা হতেই মা শাহনাজ বেগম পরিবারের কাজে হাত লাগাতে বলতেন। কিন্তু বাবার খবরদারি- না, মেয়ে কোনো কাজ করবে না। সে খেলে দিন কাটাতে চাইলে খেলুক। বাবার এমন প্রশ্রয়ে বলা যায় আমার পাখনা গজায়। শুঁয়োপোকা থেকে হয়ে ওঠি রঙিন প্রজাপতি! আশপাশের বাসা থেকে দু-একজন বন্ধুও জুটিয়ে নিই। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনমান তাদের সঙ্গে খেলা, দুষ্টুমি আর পাড়া বেড়িয়ে দিন কাটিয়ে দিতাম। তখন তীর-ধনুকের খেলা বা আরচারি নামে যে একটি খেলা আছে, সেটি জানতামও না। বাবা তখন বলতেন, তুই বড় হয়ে ডাক্তার হবি।
আমিও মনে মনে ডাক্তার হওয়ার কথাই ভাবতাম। কিন্তু না, হয়ে গেলাম আরচার। নীলফামারী গেলে এখন আর আগের মতো যেখানে খুশি যেতে পারি না। যেখানেই যায় সবাই চেনে। সেলফি তোলে। বন্ধুরা বলে, তুই তো এখন বিখ্যাত। অলিম্পিকে খেলেছিস। সবাই তোকে চেনে। তাই আগের মতো যা খুশি তা করতে পারি না এখন। মানুষ আমাকে যেভাবেই দেখুক না কেন; মায়ের কাছে আমি সেই আগের মতোই আছি। আমার পছন্দের খাবার, ভালো লাগার বিষয়-আশয়সহ অসংখ্য আবদার এখনও মায়ের কাছে। মনে পড়ে, ছোটবেলা থেকে ঈদের দিন অন্য সবার মতোই নতুন জামা পরতাম। তবে মা জানতেন, থ্রিপিসই আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিল। তাই মা আমাকে আমার পছন্দের থ্রিপিস কিনে দিতেন। আসলে এখনও একটু অন্যরকম থ্রিপিস পরতে ভালো লাগে আমার। কেমন, সেটা বলতে পারব না। এটা পছন্দের ওপর নির্ভর করে। তা মায়ের হাতের লুচি-মাংস দিয়ে ঈদের দিন শুরু হলেও দুপুরে খাবারের ঠিক-ঠিকানা থাকে না। তবে রাতে অবশ্যই কাচ্চি বা বিরিয়ানে থাকতে হবে। বুঝতেই পারছেন, কতটা মিস করছি মা এবং তার হাতের রান্না। পৃথিবীর সব মা-ই বুঝি এমন; নিজের সব দিয়ে সন্তানদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়!
লেখক :আরচার
মন্তব্য করুন