টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটাররা ভুল কম করেন। তাই ভালো ফিল্ডিং দল সার্বক্ষণিক সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বাংলাদেশ ফিল্ডিং স্টার মার্কস পাওয়ার মতো দল কখনোই ছিল না। ক্যাচ ফেলা, ভুল রিভিউ নেওয়া একপ্রকার নিয়মিত ঘটনা। চট্টগ্রাম টেস্টে চিরচেনা দৃশ্যেরই পুনর্মঞ্চায়ন হলো প্রথম দিনে। দুটি রিভিউ নষ্ট করা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ক্যাচ ফেলে দিনের শেষে যোগ-বিয়োগে কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকল বাংলাদেশ। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সেঞ্চুরি আর চার উইকেটে ২৫৮ রান করা শ্রীলঙ্কা পেল চালকের আসন। যদিও স্বাগতিক স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ 'ইভেন ডে' দাবি করে স্মিত হেসেছেন।

চট্টগ্রামের কন্ডিশন মাথায় রেখে পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। সাকিব আল হাসান যোগ দেওয়ায় সেটা সম্ভব হয়। তিন স্পিনারের সঙ্গে খেলছে দুই পেসার। বিদেশের মাঠে পেস ইউনিটের সম্প্রতিক পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। যে কারণে দেশের মাটিতেও একাধিক পেসার খেলানোর দাবি ওঠে। টিম ম্যানেজমেন্টও জনতার হৃদয়ের কথা শুনে পেসার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলামকে খেলান। সতেজ উইকেটের প্রথম ঘণ্টা এ দুই পেসারের কাছ থেকে ভালো কিছুই আশা করা হচ্ছিল। খালেদ বা শরিফুল তা পারেননি। শেষ পর্যন্ত ব্রেক থ্রু আসে স্পিনারদের হাতে। নাঈম হাসান প্রথম সেশনে দুই উইকেট নিলে ক্ষণিক সময়ের জন্য স্বস্তির বাতায়ন খুলে যায় ড্রেসিংরুমে। দিনের শেষে যেখান দিয়ে প্রবেশ করে গ্রীষ্ফ্মের ভ্যাপসা গরমের মতো পারফরম্যান্সে পিছিয়ে থাকার অস্বস্তির হাওয়া।

গ্রীষ্মের গরম চট্টগ্রামে একটু বেশিই। গতকালের গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখালেও অনুভূত হয়েছে আরও বেশি। এই গরমে পেস বোলারদের শক্তি নিঃশেষ হতে বেশিক্ষণ লাগেনি। এক স্পেলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন খালেদ-শরিফুল। যে কারণে পেসার দিয়ে বেশিক্ষণ বল করাতে পারেননি অধিনায়ক মুমিনুল হক। ৯০ ওভারের মধ্যে ২৪ ওভার করেন দুই পেসার। বাকি ৬৬ ওভারে ছিলেন তিন স্পিনার। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম যেখানে ছিলেন অগ্রণী সেনা। ৩১ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে এক উইকেট তার। প্রথম সেশনে বল করেন চার বোলার। সদ্যই করোনামুক্ত হয়ে খেলতে নামা সাকিবকে বোলিংয়ে আনা হয় ৩৬ ওভারে। এরপর ভাগে ভাগে ১৯ ওভার বল করেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাতটি মেডেনসহ ২৭ রানে একটি উইকেটও নেন। সব্যসাচী এ ক্রিকেটারের বোলিং দেখে মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি পাঁচ মাস লাল বলে খেলেননি। দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ তাই সাকিবের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা না করে পারেননি। টাইগার স্পিন কোচের মতে, প্রথম বল থেকেই সাকিব ছিলেন সাকিবের ছন্দে।

টেস্ট ক্রিকেটের যে রোমাঞ্চ, সেটা পাওয়া গেল না প্রথম দিন। রং বদলের স্পেলও করতে পারেননি বোলাররা। যেটুকু সাফল্য এসেছে, তা লাইন লেন্থ ধরে টানা বোলিং করতে পারায়। তিন সেশনের প্রথম ও শেষটিতে লিডিংয়ে ছিল বাংলাদেশ। মাঝের সেশনে লাগাম ছিল ম্যাথিউসদের হাতে। প্রথম সেশনে দুই উইকেটে ৭৩ রান করা শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় সেশন থেকে তোলে ৮৫ রান বিনা উইকেটে। চা বিরতির পর তাইজুল সেট জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু দেন। ৫৪ রানে মিড উইকেটে নাঈমের হাতে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিস। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে সেট হওয়ার সুযোগ দেননি সাকিব। তার দারুণ একটি ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ হন লঙ্কান এ ব্যাটার। আম্পায়ার আউটের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নিয়ে সফল হন সাকিব। ৬৫.২ ওভার চার উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা বাকি সময় খেলে গেছে স্বচ্ছন্দে। মেন্ডিসের সঙ্গে ৯২ রানের পর দিনেশ চান্দিমালকে নিয়ে ৭৫ রানের হার না মানা জুটি ম্যাথিউসের। দিন শেষে ম্যাথিউস ১১৪ আর চান্দিমাল ৩৪ রানে অপরাজিত। অথচ জীবন না দিলে ৬৯ রানে শেষ হতে পারত ম্যাথিউসের ইনিংস। ৩৮ এবং ৬৯ রানে জীবন পান লঙ্কান এ সেঞ্চুরিয়ান। প্রথমবার ৩৮ রানে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। তাইজুলের বল অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করায় পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন। লিটন বল ধরেই কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন করলে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। কিছুক্ষণ ভেবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ম্যাথিউস। লঙ্কান এ ব্যাটারের দ্বিতীয় জীবনেও বোলার ছিলেন তাইজুল। স্লিপে ক্যাচ উঠলে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাত গলে বাউন্ডারি হয়। ৮১তম ওভারে নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। শরিফুলের চতুর্থ বলটি বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি উদযাপন করেন ডানহাতি এ ব্যাটার। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে তৃপ্তির হাসি হাসেন ম্যাথিউস। প্রথম দিন না পারলেও দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভালো চান হেরাথ। ম্যাথিউস-চান্দিমালের সেট জুটি ভাঙার ওপর জোর দেন তিনি। প্রথম ইনিংসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাড়ে তিনশ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। তাই নতুন সকালে ভালো কিছু দেখার অপেক্ষা।