মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টায় হোটেলের লবিতে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার সাক্ষাতের অপেক্ষায় ছিলেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। লাঞ্চ শেষ করে আসা স্প্যানিশ কোচের কাছে বিলম্বে ক্যাম্পে আসার কারণগুলো তুলে ধরেন তিনি। ১৫-২০ মিনিট পর কোচ 'সরি' বলে দেন জীবনকে। শৃঙ্গলা ভঙ্গের কারণে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ দেওয়া হয় আবাহনীর এ ফরোয়ার্ডকে। কোচের এমন সিদ্ধান্তের পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া জীবন চলে যান তার ক্লাব আবাহনীতে। সেখানে বাফুফের শোকজের জবাব দিয়ে রাতেই চলে যান বগুড়ায়। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এমন তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ভুল বোঝাবুঝির কারণ হিসেবে তুলে ধরা জীবনের কাছে শাস্তিটা একটু বেশিই মনে হয়েছে। বুধবার সমকালের সঙ্গে নিজের কষ্টগুলো তুলে ধরেন তিনি

সমকাল :কেমন আছেন?

জীবন : শারীরিকভাবে সুস্থ, তবে মানসিকভাবে অসুস্থ। আর আমার বিষয়টা সবাই বাজেভাবে উপস্থাপন করেছে। সবাই তো আমার সম্পর্কে জানে। আমি নেশা কিংবা জুয়ার সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু সবাই শিরোনাম দিয়েছে যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সমকাল : শোকজের জবাব কি দিয়েছেন?

জীবন : হ্যাঁ, আমি ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। মঙ্গলবার ক্লাবে রাত ১০টা পর্যন্ত ছিলাম। তখন আমাদের ক্লাবের একজনকে দায়িত্ব দিয়ে আমি বাড়িতে চলে এসেছি। ইতোমধ্যে বাফুফেতে জমা দিয়ে দিয়েছি। কারও সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা কিংবা গণ্ডগোল নেই। আমার এতদিনের ফুটবল ক্যারিয়ারে অতীতে কখনোই এমনটা হয়নি। তারপরও যেটা হয়েছে, সে জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

সমকাল :অতীতে দেখা গেছে রিপোর্টিংয়ের দিন সব প্লেয়ার আসেন না। পরে ওঠেন, তারপরও অনেকেই ছাড়া পেয়েছেন। এটা ভেবেই কি আপনি দেরিতে এসেছিলেন।

জীবন :আসলে আমি এমনটা ভাবিনি। আমি নিজেও বুঝতেছি না কেন আমার সঙ্গে এমনটা হলো। এ রকম ঘটনা তো অহরহ হয়ে আসছে। কোনো কোনো প্লেয়ার এক কিংবা দুই দিন পরও ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন।

সমকাল :এখানে অন্য কোনো ব্যাপার দেখছেন কি?

জীবন :না, আমি এ রকম কিছু দেখছি না। আসলে কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে কারও কোনো ঝামেলা নেই। আমি তো দু'দিন কিংবা একদিন পরে যাইনি। আমি মাত্র একটি রাত পরে গিয়েছি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা রাত পরে গিয়েছি। যদি আগে জানতাম বা দিনের বেলায়ও ফোনটা পেতাম, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে আসতাম এবং ক্যাম্পে যোগ দিতাম।

সমকাল :ক্যাম্প শুরু হবে সেটা তো আগে থেকেই বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোও ক্যাম্প নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে।

জীবন :২০১৬ সাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা বাদ দিয়েছি। আমার যে পেজটা আছে, যে চালায় সেই অ্যাডমিন আমাকে বলেছে। তবে আমি তো মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে প্রতিবারের মতো এবারও ফেডারেশন থেকে ফোন দিয়ে আমাকে জানাবে। যাই হোক, আমারও ভুল হয়েছে যে আমি কেন মিডিয়াগুলো দেখলাম না।

সমকাল :বাফুফে থেকে বলেছে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে পায়নি?

জীবন :আসলে আমি ফেডারেশন থেকে ফোন পাইনি। আমি তখন গ্রামে ছিলাম, অনেক সময় নেটওয়ার্কে সমস্যা থাকে। ধরেন, একটা ঘরের মধ্যে ভালো নেটওয়ার্ক থাকে, আবার আরেকটা ঘরে থাকে না। বাফুফে থেকে যখন ফোন দিয়েছে, তখন হয়তো বা আমি এমন একটা ঘরে ছিলাম, যেখানে নেটওয়ার্ক ছিল না। হয়তো তার কারণে আমার ফোন বন্ধ পেয়েছে।

সমকাল :কখনও ইনজুরি বা পারফর্মের কারণে বাদ পড়েছেন। এবার একটা ভিন্ন কারণে বাদ দেওয়া হলো।

জীবন :ভিন্ন অভিজ্ঞতা বলতে, চাইলে আমাকে বাদ নাও দিতে পারত। এটা অনেক বড় কোনো ইস্যু না যে আমি খারাপ কোনো কিছু ঘটিয়েছি। একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর একটা মাত্র রাত ছিলাম না। তাই আমি মনে করি, স্বাভাবিকভাবে এটা চিন্তা করতে পারত যে এর আগে তো কখনও করেনি, তাই এবার সতর্ক বার্তা দিয়ে ওকে দলে নিই।