টি২০ বিশ্বকাপের পর পর যে ছাঁটাই অভিযান হয়েছিল, তাতেই কাটা পড়েছিলেন। সেখান থেকে লিটন ফিরে আসতে পারলেও সৌম্য হারিয়ে গেছেন অনেক দূরে। প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বিসিএলে রান পেলেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বিপিএল- কোথাও সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। এভাবেই একটু একটু করে পিছিয়ে পড়া সৌম্যর জন্য বন্ধ হয়ে গেছে বিসিবির সব দলের দরজা। 

নিজের প্রচেষ্টায় অনুশীলন করে টিকে থাকার প্রচেষ্টায় কখনও সাকিব আল হাসানের একাডেমিতে যাচ্ছেন তো কখনও ফিটনেস ধরে রাখতে ছুটছেন জিমে। তাসকিন যে মনোবিদের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁর কাছেও গিয়েছেন। ম্যাচের সুযোগ খুঁজতে কখনও রাজশাহীর লোকাল টুর্নামেন্ট খেলছেন, তো কখনও টেপ টেনিসের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে নামছেন। এর পরও ভাগ্যবদলের খেলায় হেরে যাচ্ছেন বারবার। শেষ সুযোগ বলতে বিসিবির কোচিং স্টাফের অধীনে বাংলাদেশ টাইগারের অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা।

এখান থেকেই স্কিলের সঙ্গে মানসিকতায় উন্নতি ঘটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছন্দে ফিরতে হবে বাঁহাতি এ ব্যাটারকে। জাতীয় দল নির্বাচকরাও সৌম্যকে এই উপলব্ধি দিতেই সহসা বিসিবির কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত করবেন না তাঁকে। বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও তাই বলছেন, 'এ' দলে নয়, বাংলাদেশ টাইগারের ক্যাম্পে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করলেই ভালো করবেন সৌম্য।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন? প্রায় আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ বিকাশের আগে শেষ না হয়ে যায়। ক্যারিয়ার যেহেতু সৌম্যর, তাই লড়াইটাও করতে হবে তাঁকেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্স করতে হবে, যাতে নির্বাচকরা জাতীয় দলে নিতে বাধ্য হন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) এক মৌসুমে রেকর্ড ১১৩৮ রান করে এনামুল হক বিজয় যেমন ফেরার মঞ্চ তৈরি করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন সংস্করণের দলেই নেওয়া হয়েছে তাঁকে। জাতীয় দল নির্বাচকরাও চান সৌম্য এমন কিছু করে দেখান প্রথম শ্রেণি বা লিস্ট-এ ক্রিকেটে। বাঁহাতি এ ব্যাটারকে নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের স্ট্যাট তুলে ধরে নির্বাচকরা বুঝিয়ে দেন, তিনি এখন পাতে নেওয়ার অবস্থায় নেই। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডানের হয়ে মোটেও ভালো খেলেননি তিনি। বিপিএল টি২০ টুর্নামেন্টেও উল্লেখ করার মতো পারফরম্যান্স নেই। কেবল বিসিএল পারফরম্যান্স আমলে নেওয়ার মতো। চার ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮৩ রান তার। এদিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ 'এ' দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চার দিনের ম্যাচের দলে থাকতেই পারেন।

সৌম্যকে বাদ দেওয়া হয়েছিল মূলত তাঁর টি২০ পারফরম্যান্সের পর। বিশ্বকাপের চার ম্যাচে ২৭ করেছিলেন তিনি। তবে টেস্ট থেকে তাঁর বাদ পড়াটা দুর্ভাগ্যজনকই। নিউজিল্যান্ড সফরে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলার পর ঘরের মাঠে মাত্র দুটি টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলেন। ওয়ানডেতেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ করার পর মাত্র চারটি ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর সর্বশেষ সাতটি ওয়ানডের মধ্যে কখনও ওপেন, কখনও ওয়ানডাউন- এমনকি সাত নম্বরেও ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল। টেস্টের সর্বশেষ পাঁচটি ইনিংসে তিনবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর। ওপেনিংয়ের পাশাপাশি ৫ এবং ৮ নম্বরেও ব্যাটিং করতে হয়েছিল। ব্যাটিং অর্ডারের এই ওঠানামা করতে করতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দল থেকেই ছিটকে গেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে জাতীয় দলে ফিরলেও সেই একই পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হবেন না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?