- খেলা
- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ভূমিকা রাখবে না
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ভূমিকা রাখবে না
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা

প্রতীকী ছবি
নতুন মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বললেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক কথাবার্তা বলা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেই; বরং এমন কিছু উদ্যোগ রয়েছে, যার ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। সেখানে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহে ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। নীতি সুদহার হিসেবে বিবেচিত রেপোর সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এলসি মার্জিন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিকে সংকোচন ও সতর্কতামূলক বলে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক দেশে পণ্য উৎপাদন কমে গেছে। কোনো কোনো দেশ পণ্য রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার, খাদ্যপণ্য, রাসায়নিকের দাম বেড়ে গেছে। এদিকে অভ্যন্তরীণ বন্যা, নতুন করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, বেসরকারি ও সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের অর্জনের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। ফলে মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলার সুযোগ নেই। আর মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। অন্যদিকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। আবার রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় খরচ বাড়বে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ শূন্য। কারণ এই মুদ্রানীতিতে সুদহার বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মুদ্রানীতি থেকে নতুন কিছু আশা করা ঠিক হবে না। যা হওয়ার তাই হবে। মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কিছু বলেছে কিন্তু কিছুই করেনি। এক কথায় কোনো উদ্যোগ নেই, যার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, সরকারি-বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি সবই গত অর্থবছরের অর্জনের তুলনায় বেশি ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জুন শেষে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। কিন্তু নতুন মুদ্রানীতিতে এ খাতে ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ বেসরকারি খাতের ঋণে জুন শেষে প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর নতুন মুদ্রানীতিতে এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলা ঠিক হবে না।
অন্যদিকে রেপো রেট বাড়ানো হলেও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশই রাখা হয়েছে। ফলে এতে কলমানি রেট বাড়া ছাড়া কিছু হবে না। ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় খরচ বাড়বে। আবার আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এলসি মার্জিন আরও বাড়ানোর ঘোষণা আছে। এতে ডলারের চাহিদা সংকুচিত হবে ঠিকই কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে বলতে হবে, মুদ্রানীতিতে যেসব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ দরকার ছিল তা করা হয়নি। ফলে এই মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কম।
মন্তব্য করুন