
ছবি: ফাইল
দেশের ফুটবলের সূতিকাগারই হলো পাইওনিয়ার লিগ। আগামীর তারকা হওয়ার এ প্রতিযোগিতা বরাবরই কলঙ্কিত হয়েছে ফুটবলারদের বয়স লুকোচুরির কারণে। অতীতে ২৩-২৪ বছর বয়সীর সঙ্গে বিবাহিতদেরও পাইওনিয়ার ফুটবলে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতে দেখা গেছে। অবশ্য বয়স নির্ধারণেই যে ছিল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা কিংবা কোনো ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মানসিকতা।
ডাক্তারের উপস্থিতিতে দাঁত, হরমোন দেখা ছাড়াও স্কুলের সার্টিফিকেট দেখে ফুটবলারদের বয়স নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু সেখানেও হয়েছে অনিয়ম। অ্যানালগ ফর্মুলায় মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে অনূর্ধ্ব-১৫ বছরের পাইওনিয়ার লিগে ২০ বছরের ওপরে বয়সীদের খেলিয়েছেন কর্মকর্তারা। সম্প্রতি শেষ হওয়া পাইওনিয়ার ফুটবল লিগেও বয়স চুরির অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবারই বয়স নিয়ে লুকোচুরি হওয়ায় নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা মহানগরী ফুটবল লিগ কমিটি। বয়স চুরি ঠেকাতে আগামী মৌসুমে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। মেডিকেল পরীক্ষার সঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবস্থা থাকবে বলে বুধবার সমকালকে জানান মহানগরী ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সহসভাপতি মো. ইমরুল হাসান।
৪৬টি দলের অংশগ্রহণে শেষ হয়েছে পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ। এবার বয়স চুরি প্রতিরোধে হাসপাতালে বোন টেস্ট বা হাড় পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করেছিল টুর্নামেন্ট কমিটি। তারপরও টুর্নামেন্টের রানার্সআপ গ্রিন জারা ভয়েস কিশোর বাংলার চার ফুটবলারকে নিয়ে অভিযোগ ওঠে।
স্বচ্ছ হওয়ার জন্য এই চারজনকে পুনরায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে দেখা যায়, তাদের বয়স ১৫-এর ওপরে নয়। এত ব্যবস্থা করার পরও বয়স নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে অন্যভাবে। একজনের জন্মনিবন্ধনের সার্টিফিকেট দেখিয়ে বেশি বয়সী আরেকজন ফুটবলারকে খেলানোর অভিযোগও উঠেছে।
আর মেডিকেল করিয়েছেন একজন, মাঠে খেলেছেন আরেকজন। শত শত ফুটবলার খেলেন বলে সবার চেহারা মনে রাখা কঠিন আয়োজকদের। এ সুযোগ নিয়ে নিবন্ধনের বাইরের খেলোয়াড়কেও মাঠে নামিয়েছে সুযোগ-সন্ধানী কয়েকটি ক্লাব। মহানগরী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রথমবার পাইওনিয়ার লিগ আয়োজন করতে গিয়ে এসব সমস্যা চিহ্নিত করেছেন ইমরুল হাসান। তাই তো বয়স চুরি ঠেকাতে নতুন চিন্তা এসেছে তাঁর মাথায়।
বায়োমেট্রিকের পাশাপাশি বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি, 'আমাদের ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে যেসব প্লেয়ার মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবস্থা করা হবে। মাঠে ওই প্লেয়ার নামছে কিনা, সেটা নির্ধারণের জন্য আমরা প্রতিটি ভেন্যুতে ল্যাপটপ দিয়ে দেব। সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে মাঠে নামতে হবে খেলোয়াড়কে। আমাদের কথা হলো, যাতে করে ওই প্লেয়ারের পরিবর্তে অন্য কেউ খেলতে না পারে। কারণ, আমাদের কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে মেডিকেল করিয়েছে একজন, খেলিয়েছে আরেকজনকে। সেটাও যেন রোধ করা যায়, সে জন্যই আগামী বছর থেকে এ পদ্ধতি অবলম্বন করব। আশা করি, বয়সের দিক দিয়ে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারব।'
বয়স নিয়ে অভিযোগ থাকলেও প্রথমবারের মতো আয়োজনে সন্তুষ্ট ইমরুল হাসান। ফুটবলার তৈরির কারখানা খ্যাত পাইওনিয়ার লিগ থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের সঠিক নার্সিং করা হবে বলে জানান বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি, 'প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ২০০ প্লেয়ারকে আমরা বাছাই করেছি। এদের মধ্য থেকে আরেকটি ট্রায়াল দেওয়া হবে। বাফুফের এলিট একাডেমিতে এবং কিছু অন্য অ-১৮ টিম আছে, সেখানে কিছু দেব। আর যদি বসুন্ধরা কিংসের তরফ থেকে বলতে হয়, তাহলে আমাদের একাডেমির ভবনের কাজ শেষ হলে কিংবা না হলেও আমরা তো ২০-২৫ জনকে এনে দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প করব।'
বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া পাইওনিয়ার ফুটবলে প্রাইজমানির অঙ্কটা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব আয়োজনকে। চ্যাম্পিয়ন ৩ ও রানার্সআপ দলকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। দু'বার করে অংশগ্রহণ ফিও পেয়েছিল ক্লাবগুলো। আগামীতে অর্থের অঙ্কটা আরও বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন ইমরুল হাসান।
মন্তব্য করুন