স্মল হিলথ, লজেন্স, অ্যাস্ট্রোনা- বার্মিংহামের এই এলাকাগুলোতে ঢুকলেই মনে হবে যেন 'এক টুকরো বাংলাদেশ'। স্বাভাবিকভাবে সিলেটের মানুষের কাছে ইংল্যান্ড হলো দ্বিতীয় বাড়ি। লন্ডন কিংবা বার্মিংহাম সব জায়গাতেই সিলেটিদের সরব উপস্থিতি। অন্য বিভাগের লোকও আছেন; তবে সংখ্যায় অনেক কম।

বার্মিংহামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গেমস সংশ্নিষ্টদের। অ্যারেনা বার্মিংহামের পাশে অবস্থিত লেকের পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা। সেখানে এক জায়গাতেই আছেন চার বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী। আতিক, তানজীম ও সিয়ামের সঙ্গে সালমাদের মতো বাঙালিরা আন্তর্জাতিক এই ইভেন্টের দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত।

আর মেইন মিডিয়া হাবে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নিগার সুলতানা পারভীন জলির উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই। ক্রীড়াবিদদের বাইরে তাঁরাও এই গেমসের বাংলাদেশি মুখ।

৩০ হাজার প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়ে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজক কমিটি যে ১৪ হাজার ভলান্টিয়ার হিসেবে চূড়ান্ত করেছে, তার মধ্যে আছেন বাংলাদেশিরাও। ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশের নিগার সুলতানা পারভীন জলিও ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। মিডিয়া হেল্প ডেস্কে কাজ করে অল্প কয়েকদিনেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেয়ে পারভীন জলি বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করা অন্যান্য দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে।

২৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া জলি বাংলাদেশে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ট্রেনিংয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে ছিলেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্কলারশিপ নিয়ে বার্মিংহামে এসেছিলেন তিনি। দুই সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে ইংল্যান্ডের শিল্পনগরীতে বসবাস করা জলি ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামে এনভায়রনমেন্ট অব হেলথের ওপর পিএইচডি করছেন। পড়াশোনা করতে আসা বাংলাদেশের এ মেয়েটির মতো আরও অনেকেই গেমসে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।

মাত্র দেড় বছর হয়েছে এখানে এসেছেন জলি। কমনওয়েলথ গেমসে একজন বাংলাদেশি হিসেবে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করতে পারাটা তাঁর জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। শনিবার গেমস মিডিয়া হাবে বসে নিজের অনুভূতি এভাবেই তুলে ধরেন সমকালের সঙ্গে, 'মেইন মিডিয়া হাবে একমাত্র বাংলাদেশি। আর শিফটিং ডিউটি যেহেতু করছি, প্রতিদিন এখানে ব্রিটিশ, ইন্ডিয়ান, নাইজেরিয়ানসহ বিভিন্ন কালচারের লোকজনের সঙ্গে আমি মিশছি। আমার দেশ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি। এর বাইরে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার ও সুন্দরবনের কথাও বলেছি তাঁদের। পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেছি।’

বদলায় না ইতিহাস, তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আছে, যারা কিনা বাংলাদেশের ইতিহাসকে তুলে ধরছেন বিশ্বদরবারে। কমনওয়েলথ গেমসে জলি-তানজীমরাই যেন সেই কাজটি করছেন।