পাইলট হতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। তাও যে-সে পাইলট না, একেবারে যুদ্ধবিমান চালানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। সে স্বপ্ন পূরণের প্রাথমিক ধাপও পার হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাকিস্তান এয়ারফোর্সে (পিএএফ) জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু চোখের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যুদ্ধবিমান চালানোর স্বপ্ন পূরণ না হলেও নিজেকে ঠিকই তিনি যোদ্ধা বানিয়েছেন। এ সফরে এই যোদ্ধার তেজ দেখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টি২০-তে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়েকে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন তিনি। ওয়ানডে সিরিজে তো রূপকথার জন্ম দিয়েছেন সিকান্দার রাজা। পর পর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করে খাদের কিনারা থেকে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ক'দিন আগে টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইয়েও জিম্বাবুয়েকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। হিন্দিতে একটি প্রবাদ আছে 'জো জিতা ওহি সিকান্দার'। এই প্রবাদের বাস্তবায়নই যেন এখন করছেন সিকান্দার রাজা।

নয় বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেরা ফর্মে রয়েছেন সিকান্দার রাজা। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট যেন খাপ খোলা তলোয়ার হয়ে উঠেছে। যে তলোয়ার দিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এ তারকা। গতকাল হারারেতে তিনি যখন উইকেটে আসেন, তখন হাসান মাহমুদের পেস এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের স্পিনে রীতিমতো কাঁপছে জিম্বাবুয়ে। ৮ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছে তারা। এরপর ৪৯ রানে ৪ নম্বর উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে চাকাভার সঙ্গে রেকর্ড ২০১ রানের জুটি গড়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন জিম্বাবুয়েকে। ৪২ রানে অবশ্য ভাগ্যগুণে রান আউট থেকে বেঁচে যান তিনি। এই সুবর্ণ সুযোগ হেলায় নষ্টের জন্য অনেক দিন আক্ষেপে পুড়তে হবে মিরাজকে। প্রথম ওয়ানডেতেও এই চল্লিশের ঘরেই জীবন পেয়েছিলেন। দু'বারই জীবনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেছেন তিনি।

পর পর দুই ম্যাচে এভাবে খাদের কিনারা থেকে সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দিতে পারায় স্বভাবতই ভীষণ খুশি সিকান্দার রাজা। গতকাল ম্যাচসেরা হওয়ার পর তিনি বলেন, 'আজকের ইনিংসটি খেলতে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছে। আর এই অর্জন ব্যাখ্যা করার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বিনম্র একটা অনুভূতি হচ্ছে, তবে বুঝতে পারছি না, আমার কী বলা উচিত। তবে বোলাররা আজ অসাধারণ কাজ করেছে। যে অর্জনটা আমরা করলাম, সত্যিকার অর্থেই সেটা দুর্দান্ত। আর অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য গ্যালারির দর্শকদেরও ধন্যবাদ।' সিকান্দার রাজা চোখের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কিছু দিন পরই তাঁর পিতা ব্যবসার জন্য জিম্বাবুয়েতে স্থায়ী হয়ে যান। তিনিও চলে যান পিতার কাছে। সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটও চালিয়ে যান। এর মধ্যে ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত মুখ তিনি। এমনকি গত এক বছরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের যে কোনো ক্রিকেটারের চেয়ে এ দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশি ম্যচ খেলেছেন সিকান্দার। হয়তো এর পুরস্কারই এই দুরন্ত পারফরম্যান্স।