এশিয়া কাপ দিয়ে টি২০তে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন সাকিব। সে যাত্রায় দুটি ম্যাচ হেরে এশিয়া কাপের প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরোতে না পারাটা একটা ধাক্কা। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারটা মেনে নেওয়া একটু কঠিনই। এ ম্যাচে প্রত্যাশার চেয়েও নাকি ১০-১৫ রান বেশি করেছিল বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব নিজেই সেটা বলেছেন। তার পরও বাজে বোলিং, জঘন্য ফিল্ডিংয়ের কারণে হারতে হয়েছে। ম্যাচ শেষে সাকিব নিজেই যন্ত্রণার ওই হারের ময়নাতদন্তও করেছেন।
চাপের কারণেই বোলাররা মোট ১২টি ওয়াইড-নো করেছেন। স্কিলের উন্নতির ব্যাপার আছে অবশ্যই। তবে চাপ এলেই আমরা ভেঙে পড়ি, চাপের মুহূর্ত এলেই আমরা হেরে যাইডেথ ওভারের জন্য আমাদের বোলার খুঁজে বের করতে হবে। এখানে অনেক উন্নতি করতে হবে। বিশ্বকাপে আশা করি এমন চার-পাঁচজন পেসার পাব যারা আমাদের ১২-১৪ ওভার দিতে পারবে

নো-ওয়াইড থেকে শুধু অতিরিক্ত ১২টি রান দেওয়াই নয়, বাড়তি দুই ওভার বলও করতে হয়েছে। স্পিনারের নো বলা করা অবশ্যই ক্রাইম। সাধারণত আমাদের স্পিনাররা এভাবে নো বল করে না
চাপের মুখে ভেঙে পড়া


শেষ দুই ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ২৫ রান, হাতে মাত্র তিন উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের ওয়াইড-নোর সুবাদে চার বল হাতে রেখেই অনায়াসে ম্যাচ জিতে নেয় লঙ্কানরা। অধিনায়ক সাকিবের মতে, চাপের কারণেই এলোমেলো বোলিং করেছেন বোলাররা, 'আসলে বোঝা গেল আমরা চাপে এখনও কতটা ভেঙে পড়তে পারি। এখানে উন্নতি করতে হবে। স্কিলের উন্নতির ব্যাপার আছে অবশ্যই। তবে চাপ এলেই আমরা ভেঙে পড়ি, চাপের মুহূর্ত এলেই আমরা হেরে যাই। এমন ৫০ শতাংশ ম্যাচ জিতলেও আমাদের রেকর্ড ভালো থাকত, বিশেষ করে টি২০তে।' শেষ দিকে অভিষিক্ত পেসার এবাদত হোসেনের বানের জলের মতো রান দেওয়ার কারণও অভিজ্ঞতার অভাব বলে মনে করছেন সাকিব, 'এমন চাপের ম্যাচ এর আগে সে খেলেনি। এবাদত এর আগে টেস্ট খেলেছে, ওয়ানডে একটি-দুটির বেশি খেলেনি। কিন্তু এমন চাপের পরিস্থিতিতে পড়েছে আজই প্রথম। প্রথম দুই ওভার যেভাবে বোলিং করেছে, আমরা ভেবেছিলাম, সেই আমাদের আজকের সেরা বোলার হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি।' চাপের কারণেই বোলাররা মোট ১২টি ওয়াইড-নো করেছেন বলেও মনে করছেন অধিনায়ক। বিশেষ করে স্পিনার মেহেদির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুটি নো বল চাপের মুখে ভেঙে পড়ার কারণেই।
ডেথ ওভারে লাগামহীন বোলিং
ডেথ ওভার বোলিং বাংলাদেশ দলের অনেক পুরোনো সমস্যা। এ জায়গাটায় উন্নতির কথা অধিনায়ক সাকিব বরাবরই বলে আসছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ওভারে ১৩ রানে তিন উইকেট নেওয়া এবাদত হোসেন পরের দুই ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান! এ বিষয়টা নিয়েও সুনির্দিষ্ট করে কথা বলেছেন সাকিব, 'ডেথ ওভারে আমরা ভালো বোলিং করতে পারছি না। ডেথ ওভারের জন্য আমাদের বোলার খুঁজে বের করতে হবে। এখানে অনেক উন্নতি করতে হবে। আমরা ক্রমাগত রান দিচ্ছি এখানে। অবশ্যই এখানে আরও উন্নতির জায়গা আছে।'
পেসারদের সতর্কবার্তা
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে পেসারদের পারফর্ম করতেই হবে। দলের পেসারদের কাছে নিজের প্রত্যাশা জানানোর পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন সাকিব, 'বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে আমাদের আরও চারটি ম্যাচ আছে। এগুলো অনেক সাহায্য করবে। পেসাররা চাপের মুখে কেমন বোলিং করে সেটা দেখা যাবে। এই ধরনের পিচে পেসারদের ১২ ওভার বোলিং করতে হবে। অন্য দেশগুলো হয়তো পেসারদের কাছ থেকে ১৪-১৫ ওভার পর্যন্ত ভালো বোলিং প্রত্যাশা করে। সেখানে আমরা ১০-১২ ওভার প্রত্যাশা করছি। এটা পেস বোলারদের ডেলিভারি করতেই হবে। যারা ডেলিভারি করতে পারবে, তারা থাকবে। যারা পারবে না, তারা থাকবে না। খুবই সহজ হিসাব এখানে।' তিনি আরও যোগ করেন, 'দুই ম্যাচে চারজন বোলারকে এখানে দেখতে পেরেছি। সামনে আরও চারটা ম্যাচ আছে। বিশ্বকাপে আশা করি এমন চার-পাঁচজন পেসার পাব যারা আমাদের ১২-১৪ ওভার দিতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায় পেসারদের ওপরই আমাদের বেশি নির্ভর করতে হবে।'
স্পিনারের নো বল করা ক্রাইম
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ চারটি নো বল ও আটটি ওয়াইড বল করেছে। অথচ শ্রীলঙ্কা একটি ওয়াইড-নো বলও করেনি। স্পিনাররা নো বল করায় সবচেয়ে বেশি হতাশা সাকিব। এর মধ্যে অফস্পিনার শেখ মেহেদি শেষ ওভারে নো বল করেছেন, এর আগে কুশল মেন্ডিস ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তার নো বলের কারণে। স্পিনারদের নো বল করাকে 'ক্রাইম' বলছেন সাকিব, '(নো বল) টার্নিং পয়েন্ট তো হতেই পারে, ব্যাটসম্যান যখন আউট হয়ে গেছে। স্পিনারের নো বলা করা অবশ্যই ক্রাইম। সাধারণত আমাদের স্পিনাররা এভাবে নো বল করে না।'
বাজে ফিল্ডিং
কেবল মেহেদির নো বলে আউট হওয়া থেকে রক্ষা পাননি কুশল মেন্ডিস, ৩৭ বলে ৬০ রান করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এ ব্যাটার ২ রানের সময়ই আউট হতে পারতেন। কিন্তু তাসকিনের বলে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম তাঁর সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ৩১ রানের সময় এবাদতের বলে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। বাংলাদেশ দল রিভিউ নেয়নি। এর পাশাপাশি ৪৪ রানে থাকা অবস্থায় এই মেন্ডিসকে রানআউট করার দারুণ সুযোগও মিস করেন সাব্বির রহমান। একটি ক্যাচ ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজও। এ ছাড়া বেশ কিছু গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংও মিস হয়েছে।